রাধুর বিবাহের পর বর ও বধূ যেদিন চলিয়া গেল,
Sri
Sarada Deviমায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি -------------------------
জয়রামবাটীতে রাধুর বিবাহের পর বর ও বধূ যেদিন চলিয়া গেল, শরৎ মহারাজ অনেকটা নিশ্চিন্ত হইয়া সকলের সঙ্গে নানা রঙগ-কৌতুক করিতেছিলেন। এমন সময় সন্ধ্যাকালে যখন খুব মুষলধারে বৃষ্টি ও ঐ সঙ্গে মুহুর্মুহু বজ্রপাত হইতেছিল, তখন ব্রহ্মচারী যদু শরৎ মহারাজকে তামাক দিতে আসিয়াছেন। মহারাজ বলিলেন, "যোদো, তুই এই সময় যদি একশত আটটি 'পোদ্য' এনে মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারিস, তা হলে একদিনেই তাঁর অশেষ করুণা ও আশীর্বাদ লাভ করতে পারবি এবং তোর নিত্য 'পোদ্য' দিয়ে পূজা করা এই একদিনেই সার্থক হবে। জানবো তুই কেমন বাঙ্গাল ও কেমন তোর ভক্তি ও উৎসাহ। " ব্রহ্মচারী যদুনাথ রাধুর বিবাহের পর কয়দিন জলকাদা উপেক্ষা করিয়া অক্লান্ত পরিশ্রম করিতেন এবং উহার মধ্যেই দৈনিক নিয়মিত কয়েকটি পদ্মফুল মাঠের পুকুর হইতে তুলিয়া আনিয়া মায়ের পায়ে অঞ্জলি দিয়া প্রণাম করিতেন। যদুনাথ পূর্ববঙ্গবাসী, পদ্মকে 'পোদ্য' বলিতেন, সেইজন্য শরৎ মহারাজ তাঁহার সঙ্গে 'যোদো' এবং 'পোদ্য' বলিয়া রহস্য করিতেন। মহারাজের এই কথা শোনামাত্র যদুনাথ এক লাফে পদ্মের সন্ধানে বাহির হইয়া পড়িলেন। ঘোর অন্ধকার, মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতেছে, মাঝে মাঝে গুরুগম্ভীর বজ্রপাতের শব্দ কানে আসিতেছে। যদু ইহার মধ্যেই বিদ্যুতের আলোতে পথ অতিক্রম করিতে উদ্যত হইলেন। শরৎ মহারাজ তাঁহার এই ভাব দেখিয়া তখনই উঠিয়া দাঁড়াইয়া অতিশয় ব্যস্ত ও চিন্তিতভাবে "ও যোদো, ও যোদো, যোদো, ফিরে আয়" বলিয়া চিৎকার করিয়া ডাকিতে লাগিলেন। কিন্তু কে কার কথা শোনে ! যদু গোঁ ভরে চলিয়া গেলেন। মা কাজকর্ম সারিয়া ঘরের মধ্যে গিয়া তখন তক্তপোশের উপর পা ঝুলাইয়া একটু বসিয়াছেন। প্রায় ঘন্টাখানেক পরে যদু ভিজিতে ভিজিতে সেই ভীষণ দুর্যোগের মধ্যে মাইলখানেক দূরে মাঠের পুকুর হইতে ১০৮টি পদ্মফুল তুলিয়া আনিয়া মায়ের দুটি পায়ে দিয়া সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করিলেন। মা সকল কথা অন্যের মুখে শুনিলেন, নিজে কিছুই বলিলেন না, কেবল দুটি হাত যদুনাথের মাথায় দিয়া আশীর্বাদ করিলেন। শরৎ মহারাজও আর বিশেষ কিছু না বলিয়া শুধু বলিলেন, "যা, তাঁর যা ইচ্ছা তাই হবে, অসুখ-বিসুখ কিছু করে না বসে, বাঙ্গাল।" ইহার কিছুদিন পরেই যদুনাথ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হইয়া কিছুদিন ভুগিয়া কনখল রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমে সজ্ঞানে শরীর ত্যাগ করেন।
|
( মাতৃসান্নিধ্যে )
জয় মা
No comments