প্রশ্ন—মন তো কিছুতেই স্থির হয় না। - Spirituality Religion

Header Ads

প্রশ্ন—মন তো কিছুতেই স্থির হয় না।

 

মন তো কিছুতেই স্থির হয় না

প্রশ্নঃ —মন তো কিছুতেই স্থির হয় না।

উত্তরঃ —প্রত্যহ কিছু কিছু ধ্যান জপ করবে। 
কোন দিন বাদ দেবে না। 
মন বালকের ন্যায় চঞ্চল, ক্রমাগত ছুটাছুটি করে। 
উহাকে পুনঃপুনঃ টেনে এনে ইষ্টের ধ্যানে মগ্ন করবে। 
এইরূপ দুই-তিন বৎসর করলেই দেখবে যে, প্রাণে অনির্বচনীয় আনন্দ আসচে, মনও স্থির হচ্ছে। 
প্রথম প্রথম জপধ্যান নীরসই লাগে, কিন্তু ঔষধ সেবনের মতো জোর করে মনকে ইষ্টের চিন্তায় নিযুক্ত রাখতে হয়, তবে ক্রমে আনন্দ আসে। 
লোকে পরীক্ষা পাস করতে কত খাটে, কিন্তু ভগবানলাভ তা অপেক্ষা অনেক সহজ। 
প্রশান্ত অন্তঃকরণে সরলভাবে তাঁকে ডাকতে হয়।
 
প্রশ্নঃ —ইহা অত্যন্ত আশার কথা যে, পরীক্ষা যখন পাস করতে পেরেছি, তখন চেষ্টা করলে ভগবানলাভও কেন করতে পারব না! এক একবার অত্যন্ত নৈরাশ্য আসে—মনে হয়, এত জপ করেও যখন কিছু অনুভব করতে পাচ্ছি না, তখন বোধ হয় এ সব কিছুই নয়।

উত্তরঃ —না না, নিরাশ হবার কোনই কারণ নেই। 
কর্মের ফল অনিবার্য। 
হেলায় হোক, আর খুব ভক্তির সহিতই হোক, নাম করলে তার ফল হবেই। 
কিছুকাল নিয়মিতরূপে সাধন কর। 
ধ্যানাদিতে কেবল যে মনের শান্তি হয় তা নয়, উহাতে শরীরেরও উন্নতি হয়, ব্যারাম-স্যারাম কম হয়। 
শরীরের উন্নতির জন্যও ধ্যানাদি করা উচিত। 
প্রথম প্রথম ধ্যান তো মনের সঙ্গে যুদ্ধ। 
দোলায়মান মনকে ক্রমাগত টেনে এনে ইষ্টপাদপদ্মে লাগাতে হয়। 
এতে কিছুক্ষণ পরে একটু মাথা গরম হয়। 
এজন্য প্রথম প্রথম বেশি ধ্যানধারণা করে brain কে (মস্তিষ্ক) খুব exert করতে (বেশি খাটাতে) নেই, খুব আস্তে আস্তে বাড়াতে হয়।
কিছুদিন এরূপ অভ্যাসের ফলে যখন ঠিক ঠাক ধ্যান হবে, 
তখন এক আসনে বসে দুই-চার ঘণ্টা ধ্যান ধারণা করলেও কোন কষ্ট হবে না। 
বরং সুষুপ্তির পর শরীর ও মন যেরূপ refreshed (স্বচ্ছন্দ) হয়, 
সেরূপ বোধ হবে, আর ভিতরে খুব আনন্দ অনুভব হতে থাকবে।
সাধনার প্রথম অবস্থায় খাওয়া-দাওয়া সম্বন্ধেও বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। 
শরীরের সঙ্গে মনের খুবই নিকট সম্বন্ধ। 
খাওয়ার দোষে শরীর অসুস্থ হলে, ধ্যানধারণা করা অসম্ভব। 
সেইজন্যই খাওয়া-দাওয়া সম্বন্ধে অত বিধি ব্যবস্থা রয়েছে। 
এমন খাবার খেতে হবে যা সহজে হজম হয় অথচ পুষ্টিকর, উত্তেজক নয়। 
আবার বেশি খাওয়াও ভাল নয়, তাতে তমোগুণ বৃদ্ধি করে। 
খাদ্যদ্রব্য আধপেটা খাবে, জল একচতুর্থাংশ খাবে, বাকি একচতুর্থাংশ বায়ু চলাচলের জন্য খালি রাখবে। 

ধ্যান করা কি সহজ কথা? 
একটু বেশি খেলে তো সেদিন আর মন বসল না।
 এইরূপে 
  • কাম, 
  • ক্রোধ, 
  • লোভ, 
  • মোহ 
প্রভৃতি রিপুগুলি চেপেচুপে রাখতে পারলে তবে ধ্যান করা সম্ভব হয়। 
ওদের যে কোন একটি জোর করলেই ধ্যান হবে না। 
খুব তপস্যা চাই। 
দু-পয়সার ঘুঁটে কিনে জ্বালিয়ে আগুনের মধ্যে বসা তো খুব সোজা। 
কাম-ক্রোধাদি রিপুগুলি দমন করে রাখা, ওদের express (প্রকাশ) হতে না দেওয়াই তো তপস্যা। 

নপুংসকের কি কর্ম?
 
 কাম-ক্রোধাদি রিপুদমনই শ্রেষ্ঠ তপস্যা।
  • ধ্যান না করলে মন স্থির হয় না, 
  • আবার মন স্থির না হলে ধ্যান হয় না।
 মন স্থির হলে ধ্যান করব, এইরূপ ভাবলে আর কখনো ধ্যান করা হবে না। 
দুই-ই একসঙ্গে করতে হবে।
মনের বাসনাদি সব কিছুই নয়, ধ্যানের সময় ভাববে—‘সব অসৎ’। 
এইরূপ ভাবতে ভাবতে ক্রমে মনেতে সৎ ভাবের impression (সংস্কার) হবে। 
অসৎ ভাব মন থেকে যেমন তাড়াবে, সৎ ভাবও তেমনি আসতে থাকবে। 
ধ্যান করতে করতে অনেক সময় জ্যোতিদর্শন হয়, আবার কখনো কখনো প্রণব-ধ্বনি বা ঘণ্টা-ধ্বনি অথবা অন্য কোন দূরের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।
কিন্তু ওসব কিছুই নয়। 
আরও এগিয়ে যেতে হবে। 
তবে, ওসব লক্ষণ ভাল। 
ঐরূপ হলে বুঝতে হবে ঠিক ঠিক রাস্তায় যাচ্ছি। 
একটি লোক খুব ডানপিটে ছিল। 
মৃত্যুর পনর দিন আগে বলছে,
 ‘‘চল চল্‌, আমায় গঙ্গায় নিয়ে চল্‌। তোরা বুঝি ভেবেছিস আমি এখানে মরব ?’’

 গঙ্গায় গিয়ে একটু হেসে বললে, 
‘‘মা, তুই ছিলি বলে আমি এত পাপ করেছি। জানি, তুই সব ধুয়ে পুঁছে ফেলবি।’’
 ভক্তি, বিশ্বাস-এর একটা থাকলেই ভগবান লাভ হয়। 
স্বামীজী (স্বামী বিবেকানন্দ) বলতেন, 
‘‘কুলকুণ্ডলিনী একটু জাগা বড় ভয়ানক, ও উপরে না উঠলে কামক্রোধাদি নীচ বৃত্তিগুলি ভয়ানক প্রবল হয়। এইজন্য বৈষ্ণবদের মধুরভাব ও সখীভাবের সাধনা উচ্চ অধিকারী ভিন্ন বড় dangerous (বিপজ্জনক)। প্রথম প্রথম রাসলীলা বিষয়ক বইও পড়তে নেই।’’
মন তো কিছুতেই স্থির হয় না

প্রশ্নঃ —ঠাকুর বলতেন, একবার এখানে একবার ওখানে কুয়া খুঁড়তে গেলে কোথাও জল পাওয়া যায় না, এক জায়গায় লেগে থাকতে হয়।

উত্তরঃ —হ্যাঁ, ঠিক সেই রকম লেগে থাকতে হবে।
ঠিক ঠিক অনুরাগ থেকে যদি ভগবানলাভের জন্য হাঁকপাঁকানি হয়, তবে তাতে ভগবানলাভ না হলেও সে ভুলে থাকতে পারে না। 
কোটি জন্মে না পেলেও অচল অটলভাবে তাঁকে ডাকতে থাকে।
মানুষ ঠিক ঠিক ভাবে ভগবানকে ডাকতে পারে না, কারণ তার ভিতরে দেনা-পাওনার ভাব রয়েছে।
তাই একটু ডেকে তাঁকে না পেলেই হতাশ হয়ে পড়ে।
 
 

No comments

Powered by Blogger.