পিতার আদরের দুলাল মনোমোহন (মনোমোহন মিত্র) বড় অভিমানী ছিলেন৷ সেই অভিমান কখনও বা শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতিও প্রযুক্ত হইত৷ একবার তাঁহার সমক্ষে ঠাকুর শ্রীযুত সুরেন্দ্রনাথের ভক্তির প্রশংসা করিলে মনোমোহন অভিমানে ফুলিয়া উঠিলেন৷ পরবর্তী শনিবার দক্ষিনেশ্বরে না গিয়া তিনি কোন্নগরে চলিয়া গেলেন এবং পর পর কয়েক সপ্তাহ দক্ষিণেশ্বরে গেলেন না ; বলিলেন, "তিনি তাঁর ভক্ত নিয়ে সুখে থাকুন, আমি সেখানকার কে? " শুধু কি তাই? ঠাকুর কোন্ননগর হইতে তাঁহাকে লইয়া আসিবার জন্য রাখালকে পাঠাইলেও তিনি নিজে তো গেলেনই না, অধিকন্তু রাখালকেও যাইতে দিলেন না; কেবল অপর কোন ভক্তের মুখে ঠাকুরকে বলিয়া পাঠাইলেন, " আগে ভক্তি হোক তবে যাব৷" কিন্তু অভিমানবশে বিপরীত আচরণ করিলেও অশান্ত মন সর্বদা দক্ষিণেশ্বরেই ধাবিত হইতে লাগিল ; তিনি শয়নে-স্বপনে ঠাকুরের কথা ভাবিতে লাগিলেন—অন্য কোন বিষয়ে মন স্থির করা অসম্ভব হইয়া পড়িল৷ এইরূপ অশান্ত মন লইয়া কোনপ্রকারে দিন কাটিতেছে, এমন সময়ে একদিন গঙ্গাস্নানকালে অকস্মাৎ একখানি নৌকায় ভক্ত বলরামবাবুকে দেখিয়া তিনি বলিলেন, "আজ প্রাতেই ভক্ত দর্শন হলো—আজ আমার মহাসৌভাগ্য দেখছি৷ "বলরাম বলিলেন, "শুধু ভক্ত নয়, গুজরত খোদ আসিয়াছেন৷" প্রভুর কথা শুনিয়াই মনোমোহন চমকিয়া উঠিলেন৷ নৌকায় অবস্থিত নিরঞ্জন তাঁহাকে বলিলেন, "আপনি দক্ষিণেশ্বরে যান না কেন? আপনাকে দেখবার জন্য উদগ্রীব হয়ে ঠাকুর স্বয়ং এখানে এসেছেন৷"নৌকা মনোমোহনের নিকটবর্তী হইলে ঠাকুর সমাধিস্থ হইলেন এবং তাঁহার নয়নদ্বয় হইতে দরদরধারে অশ্রু পড়িতে লাগিল৷ সে দৃশ্যে পাষাণও গলিয়া যায়৷ অনন্তর ঠাকুরের পদতলে পড়িয়া ভক্ত মনোমোহন ফোঁপাইয়া কাঁদিতে লাগিলেন ৷ সেদিন মনোমোহনের বাটিতে পদধূলি-অর্পণান্তে ঠাকুর তাঁহাকে লইয়া দক্ষিণেশ্বরে ফিরিলেন ৷
No comments