প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)(১৯০০-১৯৭৪), pracheen sadhu katha in bengali
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)(১৯০০-১৯৭৪)
Sri
Ramakrishna
|
ভব
মহারাজ serious
সাধু
হলেও dry
intellectual সাধু
ছিলেন না। তাঁকে সেই ‘ঘিয়ে
ভেজে চিনির রসে ডােবানাে’
সাধুরূপে দেখেছি। একদিন আমায়
বললেন,
“দেখ,
সাধুরা
বৈরাগ্যপূর্ণ যােগবাসিষ্ঠ
রামায়ণ পড়তে চায়। এর
conclusion
হলাে—বশিষ্ঠ
রামচন্দ্রকে বলছেন,
“হে
রাম,
তুমি
বিবাহ করে সংসার করাে। আর
গৃহস্থেরা ভক্তিতত্ত্বপূর্ণ
ভাগবত পড়তে চায়। এর conclusion
হলাে—শ্রীকৃষ্ণ
উদ্ধবকে বলছেন,
“হে
উদ্ধব,
তুমি
সংসার ত্যাগ করে বদরিকা আশ্রমে
গিয়ে তপস্যা করাে। ”
ট্রেনিং
সেন্টারে থাকাকালে বিকালে
ক্লাসের পর আমাদের gardening
করতে
হতাে। জলের কলের কাছে একখণ্ড
জমিতে ফুলের গাছ বসানাের ভার
পড়ল আমার ওপর। আমি ভালভাবে
জমি তৈরি করলাম। ব্রহ্মচারী
সুনীল শিলং আশ্রম থেকে ভাল
গাঁদাফুলের চারা আনিয়েছিল।
আমি প্রায় ৩০/৪০টা
গাঁদার গাছ পুঁতলাম ও জল দিলাম।
পরদিন দেখি কতকগুলি কাঠবিড়ালী
আমার হৃষ্টপুষ্ট গাঁদার
চারাগুলি প্রায় সব শেষ করে
দিয়েছে।
I
was depressed. ভেবেছিলাম
বড় গাঁদা ফুলের মালা গেঁথে
ঠাকুরকে পরাব। বিকালে আমি
যখন বাগানে,
তখন
ভব মহারাজ বেড়াতে যাচ্ছিলেন।
আমি আমার মনের খেদ তাঁর কাছে
ব্যক্ত করলাম। তিনি আমাকে
বেদান্ত শিক্ষার দ্বারা
সান্ত্বনা দিলেন।
Sri
Ramakrishna
|
তিনি
বললেন,
“একটা
সুন্দর ঘর। তার দেওয়ালের
চারিদিকে কেবল আয়না। সেই
ঘরে একটা কুকুর ঢুকল। কুকুরটা
হকচকিয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি
দেখতে লাগল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী
ভেবে ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। যেদিকে
তাকায় সে দেখে যে,
একটা
কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে। সে আয়নার
ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আরাে জোরে
ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। আমি দেখছি
তােমারও সেই ঘেউ ঘেউ করা কুকুরের
অবস্থা। একটু আগে বেদান্তের
ক্লাসে সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম’
বললে,
আর
এখন কাঠবিড়ালীর ওপর রেগে,
গাঁদার
গাছ হারিয়ে শােকে আর্তনাদ
করছ!
এই
কি তােমার বেদান্ত পড়া?”
আমি
বললাম,
“এই
বেদান্ত বড় কঠিন বেদান্ত।”
মনে
পড়ে আরেক দিন বাগান করছি।
ভব মহারাজ বিকালে বেড়াতে
যাচ্ছেন। যাকে বলে—অল্পবিদ্যা
ভয়ঙ্করী,
আমি
তাঁকে শুনিয়ে বললাম,
“আচার্যবান্
পুরুষাে বেদ।”—অর্থাৎ,
আচার্য
কর্তৃক উপদিষ্ট ব্যক্তি
[ব্রহ্মকে]
জানেন।
(ছান্দোগ্য
উপনিষদ)।
Sri
Ramakrishna
|
আমার
কথা শুনে ভব মহারাজ পুরানাে
ট্রেনিং সেন্টারের কোণে রাজা,
দাঁড়িয়ে
গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন,
“তুমি
কী বললে?
আচার্যবান
পুরুষাে বেদ—তিনি কী জানেন?
ব্রহ্মকে
জানেন। তাহলে তুমি ব্ৰহ্মজ্ঞ।
সেই ব্রহ্ম কোথায়?
স
এব অধস্তাৎ স উপরিষ্ঠাৎ স
পশ্চাৎ স পুরস্তাৎ স দক্ষিণতঃ
স উত্তরঃ স এবেদং সর্বম্ (তিনি
নিম্নে,
ঊর্ধ্বে,
পশ্চাতে,
সম্মুখে,
দক্ষিণে,
উত্তরে
তিনিই এই সমস্ত)।
সেই ব্রহ্মজ্ঞকে আমি নমস্কার
করি।”—এই বলে তিনি চারিদিকে
ঘুরে ঘুরে প্রণাম করতে লাগলেন।
আমি খুব embarrassed
হলাম।
সামান্য কথা বা ঘটনাকে ঘুরিয়ে
তত্ত্বের দিকে নিয়ে যেতেন
তিনি,
যা
মনে দাগ কেটে যেত।
একদিন
রাতে পরিবেশন করে দ্বিতীয়
পঙ্গতে খেয়ে এসে দেখি ভব
মহারাজ আমার ঘরের সামনে
দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বললেন,
“দেখ,
বেদান্তের
ক্লাসে তুমি যে প্রশ্ন করেছিলে
তার উত্তরটা তখন ঠিকমতাে দিতে
পারিনি। তার প্রকৃত উত্তর এই
হবে।” এই বলে তিনি তা আলােচনা
করলেন। তাঁর sincerity
দেখে
অবাক হলাম। শাস্ত্রের ওপর
ঠিক প্রশ্ন করলে তিনি খুব খুশি
হতেন।
Sri
Ramakrishna
|
বাগান
করা ছাড়া ট্রেনিং সেন্টারের
ব্রহ্মচারীদের দুপুর ও রাতে
খাবার
পরিবেশন
করতে হতাে এবং মন্দিরে বিকালে
ঠাকুরের ঘর মুছতে হতাে,
এক
মাস অন্তর routine
পরিবর্তন
হতাে। আমার প্রথম duty
পড়েছিল
প্রতিদিন বিকালে ঠাকুরের
গর্ভমন্দির পরিষ্কার করা।
তখন মন্দিরের দরজায় কাচ ছিল
না। ভক্তেরা খােলা দরজার ভিতর
দিয়ে coin
(পয়সা)
‘ছুঁড়তো
।
ফলে একটা towel
দিয়ে
সমস্ত পয়সা মেঝে থেকে কুড়াতে
হতাে। তারপর ঝাঁটা দিয়ে ধুলাে
পরিষ্কার করতে হতাে। পরিশেষে
বালতিতে জল ও ভিজে towel
দিয়ে
হাঁটুতে ভর করে সমস্ত গর্ভমন্দির
মুছতে হতাে। স্বামী সুলভানন্দজী
আরেকটা extra
কাজ
দেন। প্রতিদিন সকালে breakfast-এর
পরে ঠাকুরঘরের দরজাগুলির
ধুলাে ঝাড়তে হতাে। এ কাজে
প্রচুর আনন্দ পেতাম।
একদিন
দুপুরে খাওয়ার ঘরে ভব মহারাজকে
রেগে যেতে দেখেছিলাম। তিনি
তৃতীয় সারিতে প্রথম বসতেন
আর তাঁর উলটো দিকে স্বামী
গঙ্গেশানন্দজী বসতেন। আমরা
পরিবেশন করতাম। একদিন
গঙ্গেশানন্দজী একজন ব্রহ্মচারীর।
ওপর কটাক্ষ করে কিছু বলেন।
তাতে ভব মহারাজ চটে বলেন,
“মহারাজ,
এ
ছেলেগুলাে orphan
নয়।
এদের guardian
আছে।”
আমার সব কথা মনে নেই। তাঁর
loud
voice-এ
সারা dining
hall স্তব্ধ।
গঙ্গেশানন্দজী চুপ করে খেয়ে
গেলেন। পক্ষিমাতা যেমন ডানা
মেলে তার বাচ্চাদের রক্ষা
করে,
ভব
মহারাজ তেমনি ব্রহ্মচারীদের
রক্ষা করতেন।
তার
পরদিন একটা অদ্ভুত দৃশ্য
দেখলাম। স্বামী গঙ্গেশানন্দজী
Monks
quarters-এর
একতলায় পশ্চিম দিকের সিঁড়ি
দিয়ে উঠতে বাঁ দিকের ঘরে
থাকতেন। সকাল সাড়ে নয়টা
নাগাদ ভব মহারাজ গঙ্গেশানন্দজীর
দরজায় গিয়ে তাঁকে ডাকলেন।
তিনি বেরিয়ে এলে ভব মহারাজ
তাঁর পায়ে পড়ে বললেন,
“মহারাজ,
আমায়
ক্ষমা করুন। কাল দুপুরে খাওয়ার
ঘরে আমার ঐরূপ ভাবে কথা বলা
ঠিক হয়নি। তারপর থেকে আমার
ধ্যানজপের বিঘ্ন হচ্ছে। আমি
ক্ষমাপ্রার্থী।” গঙ্গেশানন্দজী
ভব মহারাজকে আলিঙ্গন করে
বললেন,
“আরে
ভব,
ঐ
তুচ্ছ ব্যাপার কি মনে রাখতে
আছে?
ভুলে
যাও।” এ ঘটনাটি আমার সামনে
হয়েছিল। দুই প্রাচীন সাধুর
অপূর্ব মিলন দেখলাম। ঠাকুর
বলেছেন—সাধুর রাগ জলের দাগ।
এই ঘটনা সম্পর্কে ভব মহারাজ
আমাকে বলেছিলেন,
“দেখ,
একসঙ্গে
থাকতে গেলে অনেকসময় মনােমালিন্য
দেখা দেয়,
তা
বলে ভেতরে বিদ্বেষভাব রাখতে
নেই। ভুল বােঝাবুঝি সঙ্গে
সঙ্গে মিটিয়ে ফেলা ভাল;
নতুবা
তা ধ্যানজপের বিঘ্ন সৃষ্টি
করে। অহঙ্কারকে নত করেই সাধুজীবন
গড়ে তুলতে হয়।”
No comments