প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভাস্বরানন্দ (১৯০০-১৯৭৮)_ নেতাজীর(সুভাষচন্দ্র বসু) সম্মন্ধে অনেক খুঁটিনাটি ঘটনা লিখেছেন
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভাস্বরানন্দ (১৯০০-১৯৭৮)
Sri Ramakrishna |
স্বামী
ভাস্বরানন্দ বা বুদ্ধ মহারাজকে
প্রথম দেখি ১৯৬১ সালে অদ্বৈত
আশ্রমে। ঐ বছর তিনি ট্রাস্টি
হন এবং গম্ভীর মহারাজের সঙ্গে
দেখা করতে আসেন। তারপর মঠে
তাঁকে অনেক বার দেখেছি। তিনি
সদানন্দময় সাত্ত্বিক সন্ন্যাসী
ছিলেন। তাঁর দেহের রং ছিল খুব
ফর্সা এবং হাসবার কালে তাঁর
শুচিশুভ্র দাঁতগুলি দর্শনীয়
ছিল। তাঁর ভিতরটাও ছিল বাইরের
মতাে সাদা। তিনি এত সরল ছিলেন
যে,
কিছু
গােপন করতে পারতেন না। কোনাে
সাধু যদি অন্য সাধুর নামে
কোনাে complain
করত,
তিনি
অন্য সাধুকে ডেকে বলতেন—ওহে,
এই
সাধু তােমার বিরুদ্ধে এই
complain
করেছে।
এতে একটা অপ্রীতিকর অবস্থার
সৃষ্টি হতাে। ফলে কোনাে সাধু
তাঁর কাছে complain
করত
না।
Sri
Ramakrishna
|
অদ্বৈত
আশ্রমের লাইব্রেরিতে পুরানাে
উদ্বোধনে (৫১তম
বর্ষ,
১
ও ১ সংখ্যা)
'শােনানে
নেতাজী’ নামে স্বামী ভাস্বরানন্দের
একটি প্রবন্ধ পড়ি। মহারাজ
তখন সিঙ্গাপুর আশ্রমের অধ্যক্ষ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সেখানে
সময় পেলে ধ্যান করতে আসতেন।
তিনি তখন আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে
ভীষণ ব্যস্ত। পরবর্তিকালে
(খুব
সম্ভব ১৯৬২-৬৩
সালে)
কলকাতার
এক জাপানি অফিসে কর্মরত এক
ভদ্রলােকের সঙ্গে আমার পরিচয়
হয়। তিনি অদ্বৈত আশ্রমে বই
কিনতে এসেছিলেন। তিনি বলেন
যে,
আজাদ
হিন্দ ফৌজে তিনি নেতাজীর
বডিগার্ড ছিলেন। একদিন নেতাজী
তাঁকে সিঙ্গাপুর রামকৃষ্ণ
মিশন থেকে একটা জপমালা আনতে
বলেন। তিনি ৫৪টি রুদ্রাক্ষের
একটি মালা এনে নেতাজীকে দেন।
নেতাজী বলেন,
“আমি
চাই ১০৮ রুদ্রাক্ষের মালা।”
সঙ্গী বলেন,
“১০৮-এর
মালা সেখানে নেই। আপনি দুবার
ঐ মালা ঘােরালে ১০৮ হবে।” ঐ
ভদ্রলােকের নাম আমার মনে নেই।
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী
ভাস্বরানন্দ ১৯৩৯ সাল থেকে
১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর
আশ্রমের মােহন্ত ছিলেন।
শােনানে নেতাজী'
প্রবন্ধে
বুদ্ধ মহারাজ নেতাজীর সম্মন্ধে অনেক খুঁটিনাটি ঘটনা লিখেছেন।
১৯৪২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি
জাপানিরা সিঙ্গাপুর দখল করে
এবং তার নাম দেয় শােনান।
জাপানি ভাষায় এর অর্থ ‘দক্ষিণ
সাগরের আলাে’। মহারাজ একদিন
হােটেলে রাসবিহারী বসুর সঙ্গে
দেখা করেন। তিনি বুদ্ধ মহারাজকে
বলেন,
“এখন
ধর্মটর্ম সব রেখে দিন। সবাই
কাজে লেগে যান। ভারত স্বাধীন
হওয়ার পরে ঐসব নিয়ে ভাবা
যাবে।” মহারাজ উত্তরে বলেন,
“হ্যাঁ,
আমরা
তাে সেবাকার্যের জন্য সর্বদাই
প্রস্তুত। আমাদের দ্বারা যা
সম্ভব হবে সাধ্যমতাে তা আমরা
করব বইকি।”
এদিকে
নেতাজী ভবানীপুরের বাড়ি
থেকে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে
রেলে করে আফগানিস্তান যান।
সেখান থেকে ইটালি হয়ে জার্মানিতে
যান। জার্মানরা তাঁকে সাবমেরিনে
ভূমধ্যসাগরে নিয়ে যায় এবং
সেখান থেকে জাপানিরা তাদের
সাবমেরিনে ‘শােনান’-এ
নিয়ে আসে। সেখান থেকে নেতাজী
এরােপ্লেনে টোকিও যান।
Sri
Ramakrishna
|
বুদ্ধ
মহারাজ লিখেছেন
কয়েক
মাস পরে শুনিতে পাইলাম—সুভাষবাবু
টোকিওতে আসিয়াছেন এবং তথা
হইতে শীঘ্রই রেডিওতে ভাষণ
দিবেন। তিনি রেডিওতে তিন দিন
তিনটি বক্তৃতা করিয়াছিলেন।
তাহার মর্ম মােটামুটি এই ঃ
ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের
এক অমূল্য সুযােগ মিলিয়াছে।
এই সুযােগ হারাইলে বহু বৎসর
আর এইরূপ সুযােগ মিলিবার
সম্ভাবনা নাই। এক অভাবনীয়
উপদয়ে আমার এদেশে আসা সম্ভবপর
হইয়াছে। বৃটিশরাজ যেমন আমার
ভারতের বহির্গমন বন্ধ করিতে
পারে নাই,
তেমনি
আমার ভারতের অন্তর্গমনও বন্ধ
করিতে পারিবে না। আপনারা জানেন
আমি একজন বিপ্লবী (Revolutionary)।
আপনারা জানেন যে,
আমেরিকার
সাহায্য লইয়া ডি.
ভেলেরা
আয়ার্ল্যান্ডের স্বাধীনতা
সংগ্রাম চালাইয়াছিলেন।
আমাদেরও ঐরূপ একটা বড় স্বাধীন
রাজ্যের সহায়তা মিলিয়াছে।
জাপান আধুনিক জগতে এক পরাক্রমশালী
জাতি। আমরাও তাহাদের সাহায্য
লইয়া ভারতের স্বাধীনতা
সংগ্রাম চালাইব। আমি আশা করি,
ইহাতে
আপনারা আমার সহায়ক হইবেন।
আমি শীঘ্রই শােনানে যাইতেছি।
সাত
দিনের মধ্যেই তিনি বিমানযােগে
শােনানে আসিলেন। শহরের
সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যাথে’ নামক
সিনেমা হলে তাঁহার অভ্যর্থনার
আয়ােজন হইল।।
No comments