প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী সর্বজ্ঞানন্দ (১৯০২-১৯৮৮)
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী সর্বজ্ঞানন্দ (১৯০২-১৯৮৮)
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী সর্বজ্ঞানন্দ (১৯০২-১৯৮৮)
স্বামী
সর্বজ্ঞানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনের
একজন প্রাচীন,
সরল
ও গুণী সন্ন্যাসী ছিলেন।
তামিলনাড়ুর নট্টরামপল্লি
কেন্দ্র থেকে তিনি গ্রামে
গ্রামে গিয়ে গরিবদুঃখীদের
উন্নতির জন্য প্রাণ ঢেলে কাজ
করেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ,
শ্রীমা
ও স্বামী বিবেকানন্দের জীবন-বাণী
তিনি গ্রন্থ ও অডিও-ভিসুয়াল
যন্ত্রের সাহায্যে গ্রামবাসীদের
মধ্যে প্রচার করেছেন। ১৯৮৬
সালের ১ সেপ্টেম্বর রামেশ্বরমে
ও ১৯ অক্টোবর বেলুড় মঠে সাধু
সম্মেলনে স্বামী সর্বজ্ঞানন্দজী
ইংরেজিতে তাঁর স্মৃতিচারণ
করেন। আমি ঐ দুটি স্মৃতিচারণ
ক্যাসেটে টেপ করি। তারপর তা
অনুলিখন ও সম্পাদন করে ১৯৯০
সালের অক্টোবর মাসে বেদান্ত
কেশরী পত্রিকাতে ছাপানাে
হয়। তারপর তা আমি বাংলায়
অনুবাদ করি ও উদ্বোধন পত্রিকার
১১৪তম বর্ষ,
১১
সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এরপর
এই স্মৃতিকথা স্বামী শিবানন্দকে
যেরূপ দেখিয়াছিতে বের হয়।
স্বামী ব্রহ্মানন্দের স্মৃতি
স্বামী ব্রহ্মানন্দের স্মৃতি
Sri
Ramakrishna
|
১৯১২
সালে আমি মাদ্রাজের রামকৃষ্ণ
মিশনের স্টুডেন্টস হােমে
ছাত্র হিসাবে ভর্তি হই। স্বামী
অনন্তানন্দ তখন সেখানকার
অধ্যক্ষ। তিনি আমাকে খুব স্নেহ
করতেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণ ও
স্বামী বিবেকানন্দের সম্বন্ধে
অনেক কাহিনি বলতেন। আমি তখন
শ্রীরামকৃষ্ণ সম্বন্ধে খুব
কমই জানতাম। ১৯১২ সালে আমি
যখন গ্রামের স্কুলে পড়ি,
তখন
একদিন হেডমাস্টারমহাশয়ের
ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে একটা
ছােট বাক্সে কতকগুলি ছবি
দেখলাম। ‘ছবিগুলি কাদের’—জিজ্ঞাসা
করাতে মাস্টারমশাই বললেন,
“এই
ছবিটি শ্রীরামকৃষ্ণের,
আর
এটি স্বামী বিবেকানন্দের।”
বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের
শিষ্য ছিলেন এবং আমেরিকায়
হিন্দুধর্ম প্রচার করেন।
রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ
প্রসঙ্গে আমার পূর্বে এইমাত্র
জ্ঞান ছিল।
যাই
হােক,
আমাদের
স্টুডেন্টস্ হােমের সেক্রেটারি
রামস্বামী আয়েঙ্গার একদিন
আমাকে কিছু আনাজ মাদ্রাজ মঠে
স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজের
কাছে।
Sri
Ramakrishna
|
পৌঁছে
দিতে বললেন। আমি তখন একটা
গ্রাম্যবালক মাত্র। তাঁর
দেওয়া কতকগুলি লম্বা চিচিঙ্গা
দু-হাত
বাড়িয়ে বুকের সঙ্গে ধরে
রাখলাম। তিনি আমাকে বলে দিলেন,
সেগুলি
স্বামী ব্রহ্মানন্দজীর পায়ের
কাছে রেখে প্রণাম করতে। আমি
সেগুলি রাজা মহারাজের কাছে
নিয়ে গেলাম ঠিক শ্রদ্ধার
বশে নয়,
সেক্রেটারির
ভয়ে।
স্টুডেন্টস্
হােম থেকে মঠের দূরত্ব ছিল
এক মাইল। চলার পথে আমি স্বামী
ব্রহ্মানন্দজী ও স্বামী
শৰ্বানন্দজীকে দেখলাম;
তাঁরাও
স্টুডেন্টস্ হােমেই আসছিলেন।
তখন রাস্তায় মােটর-বাস
খুব কম ছিল;
কিন্তু
সাইকেল,
গরুর
গাড়ি প্রচুর চলত। আমি ঐ
অবস্থায় কী করব,
ভেবে
ঠিক করতে পারলাম না।
রামস্বামী আয়েঙ্গারের আদেশ
অমান্য করার ভয় ছিল;
তাই
রাস্তার ওপর ঐ আনাজসহ আমি
মহারাজের পায়ে মাথা রেখে
প্রণাম করলাম। কিন্তু এখন
উঠব কেমন করে?
আমার
দু-হাত
ভর্তি চিচিঙ্গা। মহারাজই
আমার দু-বাহু
ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেন। এ
আমার মহাভাগ্য। আমি এখনাে
অনুভব করি,
মহারাজ
আমার অজান্তে আমাকে চিরদিনের
জন্য তুলে দিয়েছেন। শ্রীরামকৃষ্ণের
মানসপুত্রের এই আশীর্বাদ আমি
নিজের ভুক্তির বিনিময়ে।
Sri
Ramakrishna
|
পাইনি—পেয়েছিলাম
তাঁর মহত্ত্বের জন্য। তিনি
তখন আমাকে বললেন যে,
আনাজগুলাে
মঠে পৌঁছে দিয়ে স্টুডেন্টস্
হােমে ফিরে আসতে। আমার জীবনে
বহু অভিজ্ঞতা হয়েছে,
কিন্তু
এই ঘটনাটি আমার কাছে জীবন্ত
হয়ে রয়েছে—মনে হয়,
তা
যেন সম্প্রতি ঘটেছে।
ঐ
বছর মহারাজ মাদ্রাজ মঠে
দুর্গাপূজার আয়ােজন করেন।
কলকাতা থেকে দুর্গাপ্রতিমা
আনানাে হয়। প্রতিমার দাম
পড়েছিল ৫০০ টাকা;
তখনকার
দিনে তা খুবই দামি। আমার কাজ
ছিল পূজার ফুল তােলা এবং ফল
ও তরকারি কাটা। খুব ঘটা করে
দুর্গাপূজা হয়েছিল। স্বামী
শিবানন্দজী ও ঠাকুরের ভাইপাে
রামলালদাদাও সেখানে উপস্থিত
ছিলেন। বিজয়াদশমীর দিন
স্টুডেন্টস্ হােমে যাত্রা
অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যে-ব্যক্তি
কৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয়
করেছিলেন—তাঁর পরনে ছিল হলুদ
রঙের কাপড়,
মাথার
মুকুটে ময়ূরের পেখম এবং হাতে
বাঁশি।
অভিনয়ের
পর রামস্বামী আয়েঙ্গারের
এক আত্মীয় মােটরবাইকে ঐ
অভিনেতাকে মাদ্রাজ মঠে মহারাজের
কাছে নিয়ে আসেন।
No comments