প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ওঙ্কারানন্দ (১৮৯৪-১৯৭৩) II মহারাজ, ধ্যানজপ তাে করি, তবে মাথা বড্ড ঘুরায়। - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ওঙ্কারানন্দ (১৮৯৪-১৯৭৩) II মহারাজ, ধ্যানজপ তাে করি, তবে মাথা বড্ড ঘুরায়।

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ওঙ্কারানন্দ (১৮৯৪-১৯৭৩)

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna
২৮//১৯৬৬কাঁকুড়গাছি ।
 মহারাজ-মঠ তখন বরানগরে। 
স্বামীজী এক সন্ধ্যায় একা বলরাম মন্দিরের হলঘরে বসেছিলেন এবং ঠাকুরের সঙ্গে বার্তালাপ করছিলেন।
 তুলসীবাবু (বাবুরাম মহারাজের ভাইবারান্দায় দাঁড়িয়ে তা শুনতে পান। 
স্বামীজী বলছেন
ওসব ঠারেঠোরে বলার কাজ নয়। যদি কাজ করাতে হয়আমার হাত ধরে কাজ করাতে হবে। নতুবা আমার দ্বারা ওসব হবে না।” 
তারপর জীবনসন্ধ্যায় স্বামীজী যােগীন-মাকে বলেছিলেন,
 “যােগীন-মাআমি বােধ হয় বেশি দিন বাঁচব না। কারণমা আমার হাত ছেড়ে দিয়েছেন।”

একদিন দক্ষিণেশ্বরে কেশব সেন ঠাকুরকে বলেন
আপনি যদি আদেশ করেন তাহলে আপনাকে প্রচার করি।”
 ঠাকুর প্রথমে শুনতে পাননি। 
পরে কেশব আবার বলেন
আপনি যদি বলেন তবে আপনাকে প্রচার করি।” 
ঠাকুর বললেন
তুমি—কেশবতুমি প্রচার করবেএর মধ্যে যিনি আছেনতিনি যদি প্রকাশিত হতে চানতাহলে হিমালয় পর্বতও চাপা দিতে পারবে না।”
ঠাকুরছিলেন পতিতপাবন ও কপালমােচন। 
মহারাজ বলেছিলেন
গিরিশবাবু একরাতে একগাড়ি বারবনিতা নিয়ে দক্ষিণেশ্বরে হাজির হন। ঠাকুর তাদের সঙ্গে ‘হরিবােলহরিবােল’ বলে নৃত্য করেন। তারপর গিরিশের সব পাপ নিয়ে তাঁর জীবনে রূপান্তর ঘটিয়ে দেন। ঠাকুর ছিলেন করুণার অবতার।”

স্বামীজী আমেরিকা যাওয়ার আগে শরৎ মহারাজকে লেখেন : “শরৎআমার একটা vision হয়েছে-ঠাকুর আমাকে আমেরিকা যেতে বলছেন। আমি মনস্থির করতে পারছি না। তুই মাকে সব বিষয় জানিয়ে এ-ব্যাপারে তাঁর মতামত জানাবি।” শরৎ মহারাজ ঐ চিঠি মায়ের কাছে নিয়ে যান এবং মাকে পড়ে শােনান। মা দু-দিন পরে শরৎ মহারাজকে বলেন, “নরেনকে যেতে লিখে দাও।”
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna
১৯৭১ সালে নকশালদের দৌরাত্ম চলছে। 
সন্ধ্যার পর লােকে কলকাতার পথে বেরােতে ভয় পেত।
 বেলুড় মঠে ভক্তদের যাওয়া কমে গেল। 
মঠের আর্থিক অবস্থা খারাপ। 
মহারাজকে কখনও ঘাবড়াতে দেখিনি। 
ভবিষ্যৎদ্রষ্টা রূপে বলতেন
এ একটা ঝড় উঠেছে। বেশি দিন থাকবে ।” 
তাঁর কথাই ঠিক হলাে। 
গম্ভীর মহারাজ বলেছিলেন
এভাবে আর কাজ চালাতে পারা যাচ্ছে না।” 
শুনেই তিনি বলেন
বলরামবাবুর কথা মনে করাে। তাঁর নিকটাত্মীয় মারা গিয়েছেন। তিনি একহাতে চোখের জল মুছছেন। আর অন্য হাতে ঠাকুরের সন্তানদের খাওয়াচ্ছেন। কাজ করতে হবে এই। মনােভাব নিয়ে।”

একদিন কথাপ্রসঙ্গে অনঙ্গ মহারাজ(স্বামী ওঙ্কারানন্দ) দেওঘরে মহাপুরুষ মহারাজের সঙ্গে বালানন্দ ব্রহ্মচারীর সাক্ষাৎকারের এই ঘটনাটি আমাদের বলেন
বালানন্দ আশ্রমে মহাপুরুষ মহারাজজগদানন্দ স্বামীআরাে কয়েক জন সাধু এবং আমাকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 
নিমন্ত্রণ করার পেছনে কারণ ছিল। 
একদিন বেড়াবার সময়ে মহাপুরুষ মহারাজ ঐ আশ্রমের পাশ দিয়ে যেতে যেতে যখন জানলেন যে এটি বালানন্দ আশ্রমতখন নিজে থেকে আশ্রমে গিয়ে বালানন্দ স্বামীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। 
ওঁরা তখন মহাপুরুষজীকে যথেষ্ট আপ্যায়ন করেছিলেন।
 রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের অধ্যক্ষ নিজে থেকে ওখানে যাওয়ায়খুশি হয়ে পরে একটি উৎসবের সময় ওঁরা আমাদের নিমন্ত্রণ করেন। 
আশ্রমে একটি নিমগাছ ছিল—তার চারপাশ গােল করে বাঁধানাে। 
সেখানে বালানন্দ মহারাজতাঁর পাশে মহাপুরুষজী বসেছেন। 
একটু পেছনে জগদানন্দ স্বামীআমাদের আরাে কয়েক জন সাধু ও আমি বসেছি। 
বালানন্দ স্বামীর পাশে তাঁর কয়েক জন গৃহিভক্ত বসেছে।
 মহাপুরুষজী ও বালানন্দ স্বামীর মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে।
 বালানন্দ স্বামী জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীর তফাত জিজ্ঞাসা করলেন। 
মহাপুরুষজী বললেন, ‘শঙ্করাচার্য বিজ্ঞানী।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওঁদের স্বামী পূর্ণানন্দ। 
এই শুনে তিনি এগিয়ে এসে হাতজোড় করে একটি সংস্কৃত শ্লোক উচ্চারণ করে বললেন, ‘তাহলে অনুগ্রহ করে বলুনএই শ্লোকের অর্থ কী?” 
তখন আমার বন্ধুরা। 
আমার গা টিপে বলছেএই অনঙ্গতুই উত্তর দেনা।
 আমি বললাম, ‘ওঁদের কথার মধ্যে যাই কেনজগদানন্দ স্বামীকে বলাে।
কিন্তু আবার যখন পূৰ্ণানন্দ বললেন, 'আমাকে বলুনএই শ্লোকে শঙ্করাচার্য জ্ঞানী কি বিজ্ঞানী’—তখন আমি নিজে থেকে উঠে দাঁড়ালাম। 
হাতজোড় করে বললাম, ‘যদি অনুমতি করেনআমিই তবে উত্তরটা দিয়ে দিই।
এই শুনে মহাপুরুষজী বললেনহ্যাঁ হ্যাঁদাও। 
তখন আমি পূর্ণানন্দকে বললাম
'আপনি তর্ক করতে চাননা অধ্যাত্ম শুনতে চান
উনি বললেন, ‘অধ্যাত্ম শুনতে চাই।
আমি বললাম, “অধ্যাত্মের কথাই তাে দু-জনের মধ্যে হচ্ছিল। 
তাহলে আপনি তর্কই চান। 
তা যখন তর্কই করতে চানতখন তর্কের একটি সাধারণ ভাষা তাে চাই। ঠিক হােক—বাংলাহিন্দিইংরেজি না সংস্কৃত-কীসে তর্ক হবে। 
আমি হিন্দি ভাল জানি না। 
অন্য যেকোনাে ভাষায় রাজি আছি। 
এই কথাগুলি যখন জোরের সঙ্গে বলেছিতখন বালানন্দ স্বামী বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারটা। 
উনি আগে থেকেই আমার কথা জানতেন। 
উনি পূৰ্ণানন্দকে ধমক দিয়ে বললেনকী করছ
ওঁরা নিমন্ত্রিত। 
তুমি এখান থেকে যাও। 
তখন পূৰ্ণানন্দ চলে গেলেন। 
আমার মনে হলাে যেন বাঘের মুখ থেকে কেউ ছাগলকে সরিয়ে নিয়ে গেল। 
আমার গা-টা করকর করতে লাগল।”








Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

মহারাজ সিংহবিক্রমে কথাগুলি বলছিলেন। 
সঘগুরুর মর্যাদা কীভাবে রক্ষা করতে হয়, তা দেখে আমরা বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে রইলাম। 
১৯৭১ সালের মে মাসে আমেরিকায় যাওয়ার আগে আমি অদ্বৈত আশ্রম। 
থেকে কাঁকুড়গাছিতে মহারাজের আশীর্বাদ নিতে যাই। 
তখন তাঁর heart-এর অবস্থা ভাল নয়। 
আমাকে প্রায় দু-ঘণ্টা নানাবিধ উপদেশ দেন—কীভাবে ঠাকুর-স্বামীজীর কাজ করতে হবে, কীভাবে বিদেশে জীবনযাপন করতে হবে। 
তাঁর মুখ দিয়ে ত্যাগ-বৈরাগ্য, শাস্ত্র, ঠাকুর-মা-স্বামীজী ও অন্যান্য শিষ্যের কথা ফুলঝুরির মতাে বের হতাে। 
তখন প্রায় সন্ধ্যা। 
মহারাজের ভক্তেরা তাঁকে প্রণাম করবার জন্য অপেক্ষা করছে। 
আমি বললাম
মহারাজ, আমি যাই। আপনার ভক্তেরা অপেক্ষা করছে।”
 তিনি বললেন
আর একটু বােস। তাের সঙ্গে কথা বলে আনন্দ পাই। ঐ ভক্তেরা কী বলবে জানিস? মহারাজ, ধ্যানজপ তাে করি, তবে মাথা বড্ড ঘুরায়। ”
 আমি হাসতে হাসতে মরি।

আমি হলিউডে থাকাকালে মহারাজের সঙ্গে আমার পত্রবিনিময় হতাে। 
তাঁর চিঠিগুলিতে থাকত কেবল উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা।
 কয়েকটা চিঠি উদ্ধৃত করছি।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna





No comments

Powered by Blogger.