প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী রঘুবরানন্দ (১৮৯৫-১৯৮৩) - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী রঘুবরানন্দ (১৮৯৫-১৯৮৩)


প্রাচীন সাধুদের কথা


Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


স্বামী রঘুবরানন্দ (১৮৯৫-১৯৮৩)


কাশীতে ২/১০/১৯৭৭ তারিখে স্বামী রঘুবরানন্দের (রামপ্রসাদ মহারাজ)। সঙ্গে পরিচয় হয়। তপস্বী সাধুদের প্রতি আমার বরাবরই একটা আকর্ষণ আছে। কী করে তাঁরা সময় কাটান তা জানতে আমার খুব কৌতূহল। আমি যখন দেশে যাই তখন এসব সাধুর সঙ্গ করবার জন্য কাশী, কনখল, বেলুড় মঠে যাই। তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের স্মৃতিকথা, জীবনের অভিজ্ঞতা শুনি। ক্রিসমাসের সময় আমেরিকান ভক্তেরা কিছু gift দেয়, তা থেকে আমি প্রাচীন, অসুস্থ, তপস্যারত সাধুদের যথাসাধ্য সাহায্য করি। রামপ্রসাদ মহারাজকে মাঝে মাঝে টাকা পাঠাতাম।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


২২/১২/১৯৭৮ তারিখে মহারাজ তাঁর সাধুজীবন সম্বন্ধে এক দীর্ঘ পত্র কাশী থেকে লেখেন। ১৯১৭ সালে তিনি কাশী সেবাশ্রমে যােগ দেন। ১৯১৮ সালে রাজা মহারাজ তাঁকে ব্রহ্মচর্য-দীক্ষা দেন। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা মারা গেলে স্বামী শুভানন্দ তাঁকে মায়ের সেবার জন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। শেষে তিনি মাকে সঙ্গে নিয়ে এসে কাশীর বৃদ্ধাশ্রমে রেখে সাধু হন। ঐকালে তিনি হরি মহারাজের কিছু সেবা করেছিলেন। ১৯২৩ সালে তিনি মহাপুরুষ মহারাজের কাছে মন্ত্রদীক্ষা পান এবং ১৯২৮ সালে সন্ন্যাস লাভ করেন। তারপর দীর্ঘকাল কনখল সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং ১৯৫৪ সালে অবসর গ্রহণ করে বার্লোগঞ্জে দুই বছর ছিলেন এবং গুরুদাস মহারাজের সেবা করেন। ১৯৫৬ সাল থেকে হৃষীকেশে নয় বছর। তপস্যা করেন। তারপর ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি আমরণ কাশীতে ছিলেন। 
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

 তিনি কাশী সেবাশ্রমের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ছিলেন। দেখতাম, দিনরাত ধ্যানজপ ও শাস্ত্র-অধ্যয়নে মগ্ন আছেন। ১৯৮২ সালে কাশীতে গেলে তিনি আমাকে ২৭/৮ তারিখে চৌখাম্বাতে প্রমাদাস মিত্রের বাড়ি দেখাতে নিয়ে যান এবং যে গােপাললাল ভিলাতে স্বামীজী ছিলেন—সেই বাড়ি দেখান। এখন সেখানে একটি স্কুল হয়েছে।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna



একদিন (১৬//১৯৮২) রামপ্রসাদ মহারাজের ঘরে গিয়ে দেখি তিনি। বাজার থেকে কয়েকটা কাশীর পেয়ারা কিনে এনে জ্যাম তৈরি করছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “মহারাজ, আপনি এসব কী তৈরি করছেন?” তিনি বললেন, “দেখ, এই ১০ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক বৃদ্ধ সাধু আছেন। তাঁদের মুখে অরুচি। তাই তাঁদের জন্য এই পেয়ারার জ্যাম তৈরি করছি।” এ কাজটি যদিও সামান্য ও নগণ্য, কিন্তু তাঁর feelings-টা অমূল্য ও অতুলনীয়। তারপর তিনি আমাকে দু-খানা থিন অ্যারারুট বিস্কুটের মাঝে দু-চামচ পেয়ারার জ্যাম মাখিয়ে খেতে দিলেন। তাঁর স্নেহের পরশে আমি অভিভূত হলাম। ঐদিন মহারাজ আমাকে একটা মূল্যবান সম্পদ দান করলেন—তা হলাে অধ্যাপক গুরুদাস গুপ্তের সব ডায়েরি, যাতে ঠাকুরের সন্তানদের এবং রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের অনেক বিশিষ্ট সাধুর স্মৃতিকথা রক্ষিত হয়েছে।
১৯৭৮ সালে আমি তাঁকে পুরশ্চরণ সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি এ-ব্যাপারে আমাকে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন। শেষে লেখেন, “কাশীতে আসিয়াছিলাম, কিন্তু এখনও শ্রীশ্রীবিশ্বনাথ কৃপা করিয়া মুক্তি দিতেছেন না। তাঁহার ইচ্ছাই পূর্ণ হউক—এই ভরসা লইয়া সেই দিনের প্রতীক্ষায় রহিয়াছি। তিনিই জানেন কবে কৃপা করিবেন।” কাশীতে আঠারাে বছর কাটিয়ে ৭//১৯৮৩ তারিখে ৮৮ বছর বয়সে তিনি দেহত্যাগ করেন।

No comments

Powered by Blogger.