"আমার শৈশব"
"আমার শৈশব"
কলমে : পূর্ণশ্রী সিকদার।
বড় বৈচিত্র্যময় শৈশব আমার।
আর পাঁচ জনের সাথে মিলবে না।
আজকের শিশুদের যা দিনলিপি তা আমাদের কল্পনার ও বাইরে।
আজকের শিশুরা খেলাধুলা কি জিনিষ জানে না।
আর খেলাধুলা ছিল আমাদের জীবনের প্রধান অঙ্গ।
পড়াশোনার পরই তার স্থান।
এখন শিশুদের শৈশব বলতে বাবা-মা আর কম্পিউটার গেম কে সঙ্গী করে ঘরের চার দেওয়ালের গন্ডীর মধ্যে তারা বড় হয়ে উঠছে।
যা আমাদের চোখে এক বিশ্ময়কর পরিস্থিতি।
- আমরা মাঠে -ঘাটে দৌড়ে খেলে,
- ফুলের বাগানে ফুল তুলে,
- ফলের বাগানে ফল কুড়িয়ে বড় হয়েছি।
বেশ বড় পরিবারে মানুষ হয়েছি আমি।
তাই সবাই মিলে মিশে থাকা খাওয়া,
যে কোন জিনিষ ভাগ করে নেওয়া,
এ সব কখন যেন নিজের অজান্তেই শিখেগেছি।
বাবা রাজ্য সরকারী কর্মচারী ছিলেন।
পঃবঙ্গ সরকার এর শিক্ষা দপ্তরে D I (District Inspector Of Schools) ছিলেন।
বাবার ছিল Transferable job,
প্রতি তিন -সাড়ে তিন বছর অন্তর বাবা বদলি হতেন এক জেলা থেকে আর এক জেলায়।
তখন আমারা সবাই ছোট ছোট ভাই -বোন।
দ্বিতীয় কেউ ছিল না আমাদের দেখাশোনা করার।
তাই বাবা বড় পাজ্ঞাব লরিতে সংসারের সব মালপত্র বোঝায় করে আমাদের নিয়ে যেতেন তাঁর কর্মস্থলে।
সেই সুবাদে আমি পঃ বঙ্গের সাত টি জেলাতে ঘুরেছি।
সব জায়গায় গিয়ে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছি।
প্রথম কদিন খুবই অসুবিধা হয়েছে নতুন বন্ধু দের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে।
কিন্তু সে জায়গা ছেড়ে যাবার সময় আবার চোখের জল ও ফেলেছি।
আমি এবং আমার পরিবার এর সবাই খুব মিশুকে প্রকৃতির।
আমরা খুব তাড়াতাড়ি পরকে আপন করে নিতে পারি।
একটা সময় আমরা হুগলী জেলার কামারপুকুরে ছিলাম।
রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াশুনা করেছি।
মঠের খুব কাছেই ছিল আমাদের বাড়ি।
বাড়ি লাগোয়া ছিল বিরাট ফুটবল মাঠ।
তখন ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ ছিল না।
স্কুল থেকে এসে কোন রকমে দুটো খেয়ে দৌড়ে ছুটে যেতাম মাঠে খেলতে।
ছেলে মেয়ে সবাই মিলে কত রকমারি খেলাই না খেলতাম।
খেলা শেষে সন্ধ্যা বেলা পড়তে বসে শরীরে নেমে আসত ক্লান্তি ঘুম।
কত মধুর স্মৃতি জরিয়ে আছে সে সব দিনের।
কামারপুকুরের বাড়িটি আমাদের নিজস্ব।
এখনো নিয়মিত যাতায়াত আছে সেখানে।
যে সব জায়গায় ঘুরেছি,
প্রায় সব জায়গার লোকজনের সাথে চিঠিতে বর্তমানে ফোনে যোগাযোগ আছে।
এমনি এক পরিচিত সূত্রে হুগলী জেলার আরামবাগের খুব কাছে খানাকুলে একটি গ্রামে গত ডিসেম্বর মাসে এক বিয়ে বাড়ি নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলাম আমরা পাঁচ ভাই বোন মিলে।
স্মৃতি শক্তিটা আমার বরাবর ইবেশ প্রখর।
47 বছর পর গেছি ঐ গ্রামে কিন্তু কিচ্ছু ভুলিনি।
গ্রামের প্রতিটা চিত্র আমার স্মৃতিতে একদম উজ্জ্বল।
বিয়ে বাড়ির লোকজন তো দেখে শুনে আপ্লুত।
এর পর আমরা যাই পুরুলিয়া।
পুরুলিয়ার মানবাজার শহরে আমরা থাকতাম।
ওখানকার বিশেষত ভাষা ও টুসু গান মনে একটা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল।
- কত জেলা ঘুরেছি,
- কত রকম লোকজনের সাথে পরিচয় হয়েছে,
- তাদের চলন -বলন,
- কথা -বার্তা,
- খাদ্য পদ্ধতি,
তাদের উৎসব অনুষ্ঠান আজ আমি একা ঘরে বসে স্মৃতিচারণ করি।
এতে ও এক নতুন ধরনের সুখ খুঁজে পাই।
যখন ক্লাশ VII --VIII হলাম ধীরে ধীরে ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ টা মনে মধ্যে চলে এল।
শুরু হয়ে গেল আমরা -ওরা বিভাজন।
এই ভাবে একটু একটু করে বড় হচ্ছি।
এরপর গেলাম উত্তরবঙ্গে।
পশ্চিমদিনাজপুর।
তখন পঃবঙ্গে 16 টি জেলা ছিল।
ওখানে বালুরঘাট শহরে আমরা থাকতাম।
ফরাক্কা গঙ্গার ওপারে বালুরঘাট শহর বেশ উন্নত ছিল।
এখান থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে হিলি বাংলাদেশের বর্ডার।
বাবা আমাদের সবাইকে নিয়ে বর্ডার ঘুরিয়ে এনেছে।
বর্ডারে তার কাঁটার এ পাশে ইন্ডিয়া ও পাশে বাংলাদেশ।
B S F বন্দুক হাতে ঘোরাঘুরি অর্থাৎ পাহাড়া দিচ্ছে।
ঐ ছোটো বয়সে বেশ শিহরণ জাগিয়ে ছিল মনে।
বালুরঘাট বর্ডারের এত কাছে হওয়ার জন্য ওখানে 80% লোক বাংলাদেশের।
এবং বর্ডার এলাকা হওয়ার জন্য সন্ত্রাস প্রবণ ও বটে।
এত ছোট বয়সে ও লক্ষ করেছি বাবা মা আমাদের খুব কড়া শাশনে রাখতেন।
পড়াশোনা ছাড়া বাইরে বেড়নো প্রায় নিষিদ্ধ ছিল।
এবার আমি ক্লাশ X ।
আজ বলতে দ্বিধা নেই ----আমি যেন বেশ টের পাচ্ছি আমার মন রঙিন জাল বোনা শুরু করেছে।
দু চোখ রঙিন স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে।
লক্ষ করেছি ছেলে দের ও দৃষ্টি ভঙ্গী বদলেছে।
কে যেন আমায় চুপিসারে বলে যায় তুমি এখন (ষোড়শী)।
এ ভাবে ই আমার শৈশব টা হারিয়ে গেল।।
সুন্দর করে এঁকেছ বেশ তোমার মেয়েবেলা৷
সেই অতীত হওয়া শৈশবের কথা মনে পরলেই কেমন স্মৃতি মেদুর হয়ে ওঠে মন৷
সকালে উঠে স্কুলে যাওয়া বিকেল হলেই খেলা
কোথায় যেন হারিয়ে গেছে আদর মাখা সেই মিষ্টি মেয়ে বেলা
আরব্যরজনী রূপকথার গল্প আর ঠাকুরমার ঝুলি
লুকোচুরি,কুমির ডাঙা,কানামাছি খেলা কিংবা ডাংগুলি
বর্ষার জলে ভাসাতাম কাগজের তৈরি ভেলা
খাতার পিছনে আঁকিবুকি যতসব কাটাকুটি খেলা
ছুটির দিনে আসতো না কিছুতেই চোখে ঘুম
কাল বৈশাখীর সন্ধ্যাতে দলবেধে আম কুড়োনোর ধুম
সম্পর্কগুলো সহজ ছিল আড়ি-ভাবে মিটতো সকল অভিমান
এখন মতের অমিল হলেই মেলে 'ব্লক লিস্টে' স্থান
'সোসাল মিডিয়া অজানা ছিল, ছিল না ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম
বড়(বুড়ো)হয়ে গিয়ে আজ মনে হয় কেন শৈশব হারালাম
হারিয়েছে সে সময় হারিয়েছে সাদাসিধে রঙিন শৈশব
তবুও যত্নে এঁকেছ জীবন ক্যানভাসে পুরোনো দিনের স্মৃতি সব
No comments