ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এখনো যে আমাদের রক্ষা করছেন এই লেখা পুরোটা পড়লে জানতে পারবো
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এখনো যে আমাদের রক্ষা করছেন এই লেখা পুরোটা পড়লে জানতে পারবো।
নির্বাক এই যজ মহারাজ সারা দিনরাত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মূর্তির সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব রকম জপ ধ্যান পুজা করতেন ৷
তাঁকে কেউ কখনো বসে থাকতে দেখেনি শুধুমাত্র রাত্রে মাটিতে মন্দিরের চত্বরেই পরে থাকতেন সামান্য চটপেতে বিছানা করে রাত্রিযাপন করতেন ৷
তাঁকে এহেন আচরনের কারন কেবলমাত্র আশ্রমের প্রধান নতুন অধ্যক অনেক চেষ্টাকরে জেনেছিলেন এবং তিনি কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন ৷
যজ মহারাজের মৃত্যুর পর(ভান্ডারার দিন) প্রধান নতুন অধ্যক আশ্রমের অনান্য মহারাজদের কাছে সব ঘটনা খুলে বলেন৷
হুগলি জেলারই কোন এক গঙ্গা তীরবর্তী গ্রামে থাকত কৃষ্ণদাস মাঝি,(যজ মহারাজ, পরবর্তী কালে নাম হয় )
তার একটি নৌকা ছিল ,
সারাদিন নৌকা গঙ্গা পারপার করে তার যতসামান্যই আয় হত - কারন
যে যা দিত সে তাই ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের কৃপা ভেবে গ্রহন করত ৷
যজ মহারাজ |
অনেকেই কিছুই দিত না,
কৃষ্ণদাস মাঝি হাসিমুখে তাদের বিদায় করত ৷
তার যাবতীয় কাজে সে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের কৃপা দেখত আর বলত ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের ইচ্ছে হলে হবে না হলে নয় ৷
সে আর তার স্ত্রী ঐ গ্রামের এক ছোট্ট কুঁড়েতে থাকত আর দুজনেই অভাবের মধ্যেও ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের কৃপাই খুঁজে পেত ৷
এহেন সময় কৃষ্ণের স্ত্রী ভীষণ অসুস্থ হলে সে গ্রামের সুদ-ব্যবসায়ীর কাছে নিজের কুঁড়ে বন্দক রেখে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকা ধার নিয়েছিল ৷
তার সামর্থ্যের মধ্যে চিকিৎসায় স্ত্রী আর সুস্থ হয়নি একদিন হঠাৎই স্ত্রীমারা গেলে
কৃষ্ণদাস মাঝি আর বাড়িতে আসত না শোকে ৷
সে নৌকার ছাউনিতেই থাকা শুরু করল ৷
সুদ ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস মাঝিকে টাকা ফেরত নতুবা বাড়ি দিতে বললে সে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের ইচ্ছে বলে কুঁড়ে ঘর দিয়ে দিল ৷
ওই সুদ ব্যবসায়ী লোভের বশবর্তী হয়ে বললে যতসামান্য টাকা এখনো থেকে গেল সেটা ফিরিয়ে দিও আগামী ছয় মাসের মধ্যে না হলে তোমার ঐ নৌকা আমার হয়ে যাবে ৷
কৃষ্ণদাস মাঝি বলল ঠিক আছে আমি তোমার বাকি টাকা ছয় মাসে শোধ করব ৷
ধারশোধ করতে হবে- না হলে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের ইচ্ছেতে যে কাজ করে চলেছে সেটাও সে যে করতে পারবে না৷
তাই যাদের সামর্থ্য থাকতেও তাকে কিছু না দিয়ে পারাপার হত৷
তাদের কাছে সে হাতপেতে দাড়াত আর যা দিত সেটাই নিত বলত এটা না নিলে ব্যবসায়ী আমার নৌকাটা কেড়ে নেবে ৷
এইভাবে সে কিছু অর্থ জমিয়ে একদিন সুদ ব্যবসায়ী কাছে গিয়ে তার দেনা সুদসহ ফেরত দিয়ে, সুদ ব্যবসায়ী কাগজে সুদ ব্যবসায়ীকে দিয়ে সুদসহ টাকা ফেরত পাইলাম লিখিয়ে কাগজটি নিতে ভুলে গেল !৷
যজ মহারাজ |
সুদ ব্যবসায়ী অন্যএকটি কাগজ তার সামনে দেখিয়ে কাগজটা ছিড়ে ফেলে বলল যা কৃষ্ণদাস মাঝি সব চুকে গেল ৷
কৃষ্ণদাস মাঝি ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণকে মনে মনে কৃতঞ্জতা জানিয়ে
সুদ ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস মাঝির আসল কাগজটি যত্নকরে তার সিন্দুকে রেখে কয়েকমাস পরেই লোক পাঠিয়ে টাকা চাইলে কৃষ্ণ আকাশ থেকে পড়ল ৷
সে বুঝল সুদ ব্যবসায়ী এবার তাকে ঠকিয়ে নৌকাটাও নেবে ৷
এক উকিল তার নৌকায় পারাপার করত সে সব শুনে শহরে আদালতে সুদ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতারনার কেস ঠুকে কৃষ্ণদাস মাঝিকে রক্ষা করতে চাইল ৷
আদালতে যজসাহেব সব শুনে কৃষ্ণদাস মাঝিকে বললেন তোমার কাছে কোন কাগজ পত্র আছে বা সাক্ষী আছে যে তোমাকে সুদ ব্যবসায়ীকে টাকা ফেরত দিতে দেখেছে ?
কৃষ্ণদাস মাঝি বলল ধর্মাবতার ব্যবসায়ী তো আমার ভুলের সুযোগ নিয়ে কাগজটা তারকাছে রেখে দিয়েছে ৷
আর আমার তো ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ছাড়া কেউ নেই !
যজ বললেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কোথায় থাকেন ?
কৃষ্ণদাস— ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তো আমার সঙ্গেই থাকে৷
যজ জিজ্ঞেস করলেন তাহলে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেখেছে যে তুমি টাকা ফেরত দিয়েছো ?
কৃষ্ণদাস —ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অবশ্যই দেখেছেন !
যজ ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের নামে সাক্ষীর পরোয়ানা জারি করে তা দিয়ে আসার নির্দেশ দিয়ে তিনদিন পর আবার শুনানী ধার্য করে দিলেন ৷
কোর্টের কাগজ নিয়ে ঐ গ্রামে এসে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ নামে কোন লোক না পেয়ে গ্রামের লোকেরা আশ্রমের গেট দেখিয়ে দিলো৷
আশ্রমের মন্দিরে এসে প্রধান অধ্যক মহারাজকে সামনে পেয়ে অবাঙালি সমনদার অধ্যক মহারাজকে জিজ্ঞেস করলেন আচ্ছা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণেরকে কোথায় পাই বলুন তো ?
অধ্যক মহারাজ সবশুনে বুঝলেন এটা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণেরর একান্ত ভক্ত কৃষ্ণদাস মাঝির কেসের সমন,
যে প্রতিকাজে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণেরর কৃপা দেখতে পায় ৷
তিনি লোকটিকে বললেন আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন ৷
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এখানেই থাকে ! দুপুরবেলা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একটু বিশ্রাম নিচ্ছে আপনি আমাকে দিয়ে যান আমি তাঁকে দিয়ে দেব ৷
মহারাজের সই নিয়ে সমনদার চলে গেলে মহারাজ বিকেলবেলা কাগজটা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বেদীতে চাপাদিয়ে রেখে মনে মনে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণেরকে বললেন ঠাকুর তোমাকে সাক্ষী করেছে তোমার ভক্ত কৃষ্ণদাস মাঝি ,
এখন তুমি দেখ কি করবে ?
যথারিতি শুনানী শুরু হলে মহাজনের নকল সাক্ষীরা মহাজনের পক্ষে সব বললে ৷
যজ বললেন কৃষ্ণদাস মাঝি তোমার সাক্ষী ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কোথায় ?
কৃষ্ণদাস মাঝি—তিনি এখানেই আছেন ৷
যজ আর্দালিকে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণেকে সাক্ষী দেবার জন্য ডাকতে বললেন ৷
আর্দালি —
- ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ হাজির —
- ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ হাজির —
- ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ হাজির —
উপস্থিত হও তিনবার বলার পরেই এজলাসের দরজায় এক বৃদ্ধ ঝুঁকে লাঠিহাতে এসে উপস্থিত , এবং আস্তে আস্তে হেঁটে সাক্ষীর কাঠগড়ায় ৷
কৃষ্ণদাস মাঝি অবাক হয়ে তাকিয়ে — এ কে এল আমার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সেজে ৷
বাকরুদ্ধ কৃষ্ণদাস মাঝি অপলক চেয়ে তাঁরদিকে ৷
যজ বললেন বলুন আপনি কি জানেন ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ —আমি তো সব জানি ৷
মহাজন কৃষ্ণের আসল কাগজটা ওর সিন্দুকের ভিতরে লাল খাতার শেষ পৃষ্টার মধ্যে রেখেছে,
আপনি লোক পাঠিয়ে তা এনে দেখুন সব বুঝতে পারবেন কে সত্যিটা বলছে ৷
আমি কৃষ্ণের সাক্ষী মিথ্যে বলি না ৷
বৃদ্ধের কথার দৃপ্ততায় যজ আর কিছু না বলে মহাজনের সিন্দুক থেকে তা আনিয়ে সব সত্য প্রকাশিত হতে মহাজনের হাজতবাস ও
কৃষ্ণদাস মাঝিকে কাগজ ফেরত দিয়ে বললেন আপনি এরকম দিব্যদৃষ্টি সম্পন্ন সাক্ষী কোথায় পেলেন ?
কৃষ্ণদাস মাঝি এতক্ষন বাকরুদ্ধ হয়ে সব কর্মকাণ্ড দেখছিল যজ এর প্রশ্নে সম্বিৎ ফেরত পেয়ে বলল ধর্মাবতার আমি ঐ বৃদ্ধকে চিনি না,
আগে কখনো দেখিনি ! বৃদ্ধও নেই কখন সবার অজান্তে সেঅদৃশ্য হয়েছেন ৷
যজ মহারাজ |
যজ ততধিক অবাক হয়ে ভাবলেন তা হলে বৃদ্ধটি কে ???
সমনদারকে তলব করে সব জেনে ও প্রধান অধ্যক মহারাজ এর কাছে সব শুনে—
ঐদিনই কৃষ্ণদাস মাঝি কর্ম আর সংসার ত্যাগ করে কৃষ্ণদাস আশ্রমে উপস্থিত হলেন এবং মনেমনে এক দারুণ অনুতাপ নিয়ে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরে হাজির —
যে জগতের ঠাকুর—তাঁকে কিনা আমি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি
তাঁকে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখে নিজে বিচারকের আসনে বসে বিচার করলেন ????
আমি ঠাকুরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি—
এ পাপকাজ আমার অজান্তে হলেও পাপ করেছি—
তাই প্রায়শ্চিত্ত করতে যতদিন বেঁচে থাকবো মন্দিরের চত্বরেই পরে থাকবো ঠাকুরের দাসস্ত করবো —
ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঠাকুরকে ডেকেডেকে কেঁদেকেঁদে কৃপাকরে পাপমুক্ত কারো, কৃপাকরে পাপমুক্ত কারো বলতেন৷
ভক্তের ভগবান ভক্তের সাথেই থাকে !
কৃষ্ণদাস এক ভক্ত যে সারাজীবন ঠাকুরকে ডেকে পেল আর
এক ভক্ত যজ মহারাজ যে ঠাকুরের অহেতুকী কৃপায় সিদ্ধ হলেন !
জয় ঠাকুর !!! জয় মা !!!
কৃপা হি কেবলম !!!
শ্রীরামকৃষ্ণ-সঙ্ঘের উদ্দেশ্য কি সেই বিষয়ে স্বামীজীর এক চিঠি
No comments