Abhedananda কালীমহারাজ স্বামী অভেদানন্দ আলাদা মঠ প্রতিষ্ঠা করলেন কেন ?
কালীমহারাজ ( স্বামী অভেদানন্দ ) Swami Abhedananda
Swami Abhedananda কালীমহারাজ স্বামী অভেদানন্দ আলাদা মঠ প্রতিষ্ঠা করলেন কেন ?
তাঁহার পিতার নাম রসিকলাল, মাতার নাম নয়নতারা দেবী।
নয়নতারা দেবী মা কালীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে এমন একটি পুত্র সন্তানের যিঁনি ধার্মিক ও সাধু হবেন।
এর পরেই ১৮৬৬ সালে ২ অক্টোবর ( বাংলা ১২৭৩ , ১৭ আশ্বিন, কৃষ্ণা নবমী) স্বামী অভেদানন্দজী মহারাজের জন্ম হয়।
জন্মতিথিতে প্রণাম জানাই।
নয়নতারা দেবীর বিশ্বাস ছিলো মা কালীর কৃপাতেই এই নবজাতকের আগমন হয়েছিলো।
মা নয়নতারা দেবী পুত্রের নাম রেখেছিলেন কালীপ্রসাদ।
কালীপ্রসাদ বাল্যকাল হতেই সংস্কৃতে অগাধ জ্ঞান লাভ করেছিলেন।
সম্ভবত ১৮৮৪ সালে তিঁনি পদব্রজে দক্ষিণেশ্বরে যান।
সেখানে গিয়ে শোনেন ঠাকুর কলকাতায় গেছেন, রাত্রে আসবেন।
অগ্যতা সেখানেই অপেক্ষা শুরু এই সময় সেদিনই আর এক যুবক সেখানে আসেন।
উত্তরকালে ইনি ঠাকুরের ত্যাগী সন্ন্যাসী শিষ্য স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজী মহারাজ ।
রাত্রি নয়টার দিকে ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে আসলেন।
ঠাকুরের কাছে নিজ পরিচয় দিয়ে কালীমহারাজ জিজ্ঞাসা করলেন-
"আমার যোগসাধনার ইচ্ছা আছে, আপনি শিখাবেন কি?"
পরমহংস দেব কিছুকাল মৌন থেকে বললেন-
"তোমার এই বয়সেই যোগ শিক্ষার ইচ্ছা হয়েছে- এ অতি ভালো লক্ষণ। তুমি পূর্বজন্মে যোগী ছিলে কিন্তু তোমার একটু বাকী ছিলো এই তোমার শেষ জন্ম। আমি তোমায় যোগ শিক্ষা দেবো আজ বিশ্রাম করো ; কাল এসো।"
এরপর কালীমহারাজ ঠাকুরের কাছে গেলে, ঠাকুর তাঁর জিহ্বাতে কোনো মন্ত্র লেখে দেন।
কালীপ্রসাদ মহারাজ এরপর গভীর ধ্যানে মগ্ন হন।
ধ্যানে তাঁর অনেক দেব দেবী দর্শন হয়েছিলো।
আর মধ্যে দেখেছিলেন ঠাকুরকে।
দেখলেন সব দেব দেবী একত্রে ঠাকুরের দেহে মিলে গেলো।
এই ঘটনা তিঁনি ঠাকুরকে বলেছিলেন।
ঠাকুর বললেন-
"তোর বৈকুণ্ঠদর্শন হয়ে গেল; এখন হতে তুই অরূপের ঘরে উঠলি। আর রূপ দেখতে পাবি না।"
ঠাকুরের দেহত্যাগের পর যে সকল ব্যক্তি স্বামী বিবেকানন্দের নেতৃত্বে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, তিনি তাঁহাদের মধ্যে একজন।
তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং কঠোরতার সহিত ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক পঠন-পাঠনে নিমগ্ন থাকিতেন গুরুভ্রাতাগণের নিকট তিনি ছিলেন ‘কালী তপস্বী।
কালীপ্রসাদ ভারতের সমস্ত তীর্থক্ষেত্র পদব্রজে পরিদর্শন করেন।
১৯২২ সালে অভেদানন্দ পদব্রজে হিমালয় পার হয়ে তিব্বতে গিয়েছিলেন।
সেখানে তিনি বৌদ্ধ দর্শন ও লামাবাদ অধ্যয়ন করেছিলেন।
হিমিস গুম্ফায় তিনি যিশুর অজ্ঞাত বছরগুলি সংক্রান্ত একটি পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করেছিলেন।
এই পাণ্ডুলিপিটি রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ প্রকাশিত স্বামী অভেদানন্দ'স জার্নি ইনটু কাশ্মীর অ্যান্ড টিবেট গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১৮৯৬ সালে লন্ডনে অবস্থানকালে স্বামী বিবেকানন্দ তাকে ডেকে পাঠিয়ে পাশ্চাত্যে বেদান্তের বাণী প্রচারের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন।
১৮৯৭ সালে অভেদানন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেছিলেন।
সেদেশে স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি নিউ ইয়র্ক বেদান্ত সোসাইটির ভার গ্রহণ করেছিলেন।
এই সোসাইটির মাধ্যমে তিনি বেদান্ত ও রামকৃষ্ণ পরমহংসের বাণী প্রচার করতেন।
সুদীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, জাপান ও হংকং ভ্রমণ করে সফলভাবে বেদান্তের বাণী প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
অবশেষে ১৯২১ সালে হোনোলুলুতে প্যান-প্যাসিফিক এডুকেশন কনফারেন্সে যোগদানের পর তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন।
১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ইংল্যাণ্ডের Christo-Theosophical Society-তে ধর্মবিষয়ে বক্তৃতা দেন।
1897 খ্রীস্টাব্দে তিনি আমেরিকায় ‘বেদান্ত সোসাইটি’ স্থাপন করেন এবং ১৯২১ সাল পর্যন্ত সেখানে বেদান্ত প্রচার করিতে থাকেন।
এইসময় তিনি পাশ্চাত্যের বহুদেশে যান এবং বহু খ্যাতিমান লোকের সহিত মতবিনিময় করেন।
প্রেততত্ত্ববিদ হিসাবেও তিনি বিদেশে খ্যাতিলাভ করেন।
১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে কলিকাতায় ফিরিয়া তিনি ‘রামকৃষ্ণ বেদান্ত সোসাইটি’ স্থাপন করেন।
এই ‘সোসাইটির মাধ্যমে এবং তাঁহার প্রকাশিত
“বিশ্ববাণী”
পত্রিকার মাধ্যমে শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী ও ভাবধারাকে দিকে দিকে প্রচার করেন ।
১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি দার্জিলিঙ-এ ‘রামকৃষ্ণ বেদান্ত আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৯৩৭ সালে ঠাকুরের জন্মশতবার্শিকী উপলক্ষে কলিকাতা টাউন হলে আয়োজিত ধর্মসভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।
১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে ৮ সেপ্টেম্বর তিঁনি দেহ রাখেন।
ভারতবর্ষ ও বিদেশে বেদান্তবাদ প্রচারে তাঁর ভূমিকা অনেক।
Swami Abhedananda কালীপ্রসাদ রচিত কয়েকটি গ্রন্থ: আমার জীবনকথা, কাশ্মীর ও তিব্বতে, পুনর্জন্মবাদ, বেদান্তবাণী, ব্রহ্মবিজ্ঞান, মরণের পারে, যোগশিক্ষা, সমাজ ও ধর্ম, হিন্দু ধর্মে নারীর স্থান, শ্রীরামকৃষ্ণ স্তোত্র রত্নাকর ইত্যাদি।
স্বামী অভেদানন্দ মহারাজের সঙ্গে আমার বেশ কয়েক বার সাক্ষাৎ হয়েছে।
একবার পূজনীয় মহারাজ আমাকে মন্ত্রদীক্ষা দেওয়ার ইঙ্গিত দেন।
কিন্তু আমি রাজি হইনি।
একদিন কলকাতা বেদান্ত মঠে স্বামী অভেদানন্দজীকে দর্শন করতে গেলাম।
তাঁর ঘরের মেঝেতে তিন-চার জন বসে ছিলেন।
পূজনীয় মহারাজ চেয়ারে বসে ছিলেন।
আমি যখন ঘরে ঢুকে অন্যদের সঙ্গে বসলাম, পূজনীয় মহারাজ আলমারিতে রাখা একটি কৌটো দেখিয়ে বললেন, “দেখ, ঐ কৌটোটা সােনাতে ভর্তি।
নতুন মন্দির তৈরি হচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই উদ্বোধন হবে।
শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে আমি সােনার সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিলাম এবং সেজন্য ভক্তদের কাছ থেকে সােনা সংগ্রহ করেছিলাম।
একদিন এই সােনাভর্তি কৌটো নিয়ে সিংহাসন তৈরি করাতে দেব বলে স্যাকরার।
দোকানের উদ্দেশে যাত্রা করলাম।
যে-মুহুর্তে আমি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করলাম, কেউ একজন চিৎকার করে বলে উঠল,
'তুমি কী করছ? তুমি জান না, আমি ধাতু স্পর্শ করতে পারি না?'
আমি অবাক হয়ে নিচে নামতে লাগলাম।
ভাবলাম, আমার মনের ভুল।
আমি তিন ধাপ নিচে নামলাম, মনে হলাে কেউ খুব ঝাঁকুনি দিল এবং ভৎর্সনা করে বলল, ‘বােকা, আমি বারবার বললাম যে, আমি ধাতু স্পর্শ করতে পারি না, আর তুমি কিনা আমাকে সােনার সিংহাসনে বসাতে চাও! ফিরে যাও।
' এবারই আমি বুঝলাম, শ্রীরামকৃষ্ণদেব স্বয়ং আমাকে আমার কাজের জন্য ভৎর্সনা করছেন।
তখন আমি মহীশূরে লিখলাম একটি চন্দন কাঠের তৈরি সিংহাসন পাঠাতে।
সিংহাসনের প্যাকেটটি এখন এসেছে।”
আরেক দিন স্বামী অভেদানন্দজীর আশ্রমে গিয়েছিলাম।
তাঁর সহকারী এবং সেবক মহারাজ বললেন,
“মহারাজ খুব মন খারাপ করে রয়েছেন এবং বারবার কেঁদে কেঁদে বলছেন, 'বেলুড় মঠ ত্যাগ করে এবং একটি নতুন কেন্দ্র—বেদান্ত মঠ খুলে আমি জীবনে একটি মস্ত ভুল করেছি! এটি মস্ত বড় ভুল।
তিনি এই ভাবে তিন-চার দিন ছিলেন এবং তার কিছুদিন পরে প্রয়াত হন।”
(ব্রহ্মচারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মহারাজ প্রদত্ত ভাষণের নির্বাচিত অংশ)।
স্বামী অভেদানন্দজী আলাদা মঠ প্রতিষ্ঠা করলেন কেন ?
গোলপার্ক শ্রীরামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচারে যুব সম্মেলন চলছে ,আলোচনা পর্বে আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম –
‘ স্বামী অভেদানন্দজী আলাদা মঠ প্রতিষ্ঠা করলেন কেন ? ‘
এই প্রশ্ন শোনামাত্র একজন প্রৌঢ় লাফিয়ে বলে বসলেন –
” আসলে অভেদানন্দজীর খুব নাম কেনার ইচ্ছা হয়েছিল তাই আলাদা মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন “
এই কথা শুনে স্বামী বেদস্বরূপানন্দজী খুব রেগে ওই প্রৌঢ় লোকটিকে বকেছিলেন ।
আমিও বিরক্ত সহকারেই বলেছিলাম –
“ অভেদানন্দজীর যদি নাম কেনারই ইচ্ছা থাকতো , তাহলে নিউইয়র্ক বেদান্ত সোসাইটিটাই নিজের নামে করে নিতে পারতেন , শুধু শুধু ইন্ডিয়া ফিরে মঠ প্রতিষ্ঠা করতেন ? “
সেদিনের পর থেকে মনে জেদ করেছিলাম এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমি নিজেই খুঁজে বের করবো ।
2019 সালে অভেদানন্দজীর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীর দিন স্বামী চেতনানন্দজীর উপস্থিতিতে ARCIS বা Abedananda Research Centre For Indian Sciences প্রতিষ্ঠা করি যা ইন্ডিয়াতে অভেদানন্দজীর রচনাবলী ও চিন্তাভাবনা, কাজ প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা করার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ।
এই গবেষণার সূত্রেই অভেদানন্দজীর বিভিন্ন বই, পত্রাবলী, অপ্রকাশিত লেখা পড়ে জানতে পারি অভেদানন্দজী আলাদা মঠ প্রতিষ্ঠা করলেন কেন
এ বিষয়ে অভেদানন্দজী নিজে বলেছেন – ( মন ও মানুষ , তৃতীয় খণ্ড / স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ )
“স্বামীজী আমায় বারবার বলতেন, উত্তর কলকাতা হল ঠাকুরের লীলাস্থল তাই কলকাতায় ঠাকুরের নামে একটা আশ্রম স্থাপিত কর । কলকাতা থেকে বেলুড় অনেকদূর, কলকাতার মানুষজনের ভিতর ঠাকুরের ভাব প্রচার করতে গেলে একটা আশ্রম বা বেদান্ত সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করা দরকার । “
অভেদানন্দজী অন্য আরেকজনকে বলেছিলেন – ( স্বামী অভেদানন্দ জন্মসার্ধশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলী / উদ্বোধন কার্যালয় )
” স্বামীজী বিদেশে বহুবার আমাকে বলেছিলেন –”
আমার বড় ইচ্ছা কলকাতায় শ্রীশ্রীঠাকুরের একটা প্রচারকেন্দ্র স্থাপিত হয় ।
আমাদের সকল গুরুভাইদের লীলাস্থলও কলকাতায় ।
আমি যদি না পারি তবে তোমরা এ কাজ কোরো
“অভেদানন্দজীর ডায়েরীতে আরেকটি বিশেষ ঘটনা লেখা, যা বিবেকানন্দের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অংশ ।
স্বামী বিবেকানন্দ বলছেন –
সুতরাং অভেদানন্দজীর ‘ নাম কেনার ‘ কোনো বাসনাই ছিল না এ কথা স্পষ্ট ।
নিউইয়র্ক বেদান্ত সোসাইটির অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দিয়ে ইন্ডিয়া ফিরেছিলেন শুধুমাত্র ঠাকুরের টানেই ।
স্বামী অভেদানন্দজী কে নিয়ে তাহলে বিতর্ক কেন ?
আমাদের বাঙালী সমাজে দুইজন গুণী ব্যক্তি মধ্যেকার সম্পর্ককে দুটো আলাদা শিবিরে ভাগ করে দেওয়ার প্রবণতা আছে ।
বাঙালী দলবাজিতে বিশ্বাস করতে ভালোবাসে ।
এইরকম অদ্ভুত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই বাঙালী উত্তম – সৌমিত্র , ইস্টবেঙ্গল – মোহনবাগান , সিপিআইএম – তৃণমূল শিবিরে বিভক্ত ।
তেমনি বিবেকানন্দ – অভেদানন্দ ।
বিবেকানন্দ – অভেদানন্দের মধ্যেকার আসল সম্পর্ক কেমন ছিল তা মানুষ ভালো করে জানার চেষ্টা করেনি, পড়ার চেষ্টাও করেনি ।
যারা বিবেকানন্দ – অভেদানন্দ সম্পর্কে ইস্টবেঙ্গল – মোহনবাগানের মতো বিরোধী শিবিরের গন্ধ পায় তারা বিবেকানন্দ এবং অভেদানন্দ কিছুই পড়েনি ।
এই অদ্ভুত মানসিকতায় দুষ্ট ওই প্রৌঢ় সেদিন বলেছিলেন –
” অভেদানন্দজীর নাম কেনার ইচ্ছা ছিল । “
বিবেকানন্দ সম্পর্কে অভেদানন্দজীর কিছু কথা নীচে দেওয়া হল যা থেকে তাঁদের দু’জনের সম্পর্ক সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে ।
স্বামীজী সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে অভেদানন্দজীর চোখে জল আসতো সে কথা প্রত্যক্ষদর্শীরা লিখে গেছেন ।
” সে কতো আনন্দের দিন ছিল ।
আমি আর শরৎ স্বামীজীর পেছন পেছন ঘুরতাম তাই স্বামীজী আমাদের নাম দিয়েছিলেন কালুয়া ভেলুয়া ।
ওই যে কালী তপস্বীর ছবি দেখছ – ঠিক ওভাবেই ভারতের চতুর্দিকে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম ।
তখন স্বামীজীকে দেখার ভারি ইচ্ছা হয়েছিল , কিন্তু তাঁর ঠিকানা মোটেই জানা ছিল না ।
পথে পোরবন্দরের ( গুজরাট ) বিখ্যাত পণ্ডিত শঙ্কর পাণ্ডুরঙ্গের সঙ্গে দেখা ।
তিনি বললেন – ‘ এই সেদিন স্বামী সচ্চিদানন্দ নামে ইংরাজী জানা এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন খুব পণ্ডিত লোক ।”
তাঁর কাছ থেকে জানলাম সচ্চিদানন্দ জুনাগড়ের দিকে গেছেন ।
আমি মনে মনে বুঝলাম এই সচ্চিদানন্দই আমাদের স্বামীজী ।
জুনাগড়ে গিয়ে সূর্যরাম ত্রিপাঠির বাড়ি গিয়ে দেখলাম স্বামীজী বসে আছেন আমায় অপ্রত্যাশিতভাবে দেখে তিনি আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন ।
তিনি আমাকে দেখিয়ে ত্রিপাঠি মহাশয়কে বললেন – ‘ ইনি আমার গুরুভাই, একজন অদ্বিতীয় বেদান্তী আপনি এঁর সঙ্গে বেদান্তের বিচার করুন ।
‘ কিছুদিন পর আমি আর স্বামীজী দুজনেই আবার যাত্রা শুরু করলাম মহাবালেশ্বরে নরোত্তম মুরারজী দেশাইয়ের বাড়িতে উঠে দেখি স্বামীজী বসে আছেন – সেই নরেন্দ্রনাথ খুব তো একচোট হাসাহাসি হল ।
স্বামীজী আমাকে বললেন –
“বেশ বাবা , তুমি আমার পিছু নিয়েছ দেখছি
“পরিব্রাজক অবস্থায় একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম স্বামীজী জীবন দিয়ে আমার সেবা করেছিলেন আহা ! আমার ভ্রাতা ! সেই স্মৃতি আজিও মনে জাগরূক আছে । “
বরাহনগর মঠে সারাদিন বই পড়তাম তাতে গুরুভাইদের মধ্যে কথা শুরু হল যে আমি কোনো কাজই করিনা একদিন স্বামীজী বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন – ‘ তোদের কতো হান্ডা আছে নিয়ে আয় দেখি ! আমি মেজে দিচ্ছি!
তোদের একটা ভাই যদি সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে থাকে তাতে তোদের এতো গাত্রদাহের কী আছে ? “ ( মন ও মানুষ / স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ )
নিজের অটোবায়োগ্রাফি ‘ আমার জীবন কথা ‘ তে অভেদানন্দজী লিখছেন –
” নরেন্দ্রনাথ ! আমার ভাই , আমার ক্যাপ্টেন , আমি চিরকাল তাঁর সহচর – সহকারী তিনি যে আমার কে তা প্রকাশ করতে পারবো না তাঁর সেই স্নেহের কথা মনে পড়লে আজও স্মৃতিমেদুর হয়ে যাই । “
স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে এক বক্তৃতায় অভেদানন্দজী বলেছিলেন ( উদ্বোধন , মাঘ ১৩৯৬ ) –” স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের বড় ভাই ছিলেন ।
চিরদিন তাঁকে মান্য করে এসেছি তিনি যখন যা আদেশ , তা – ই করতাম তাঁর আজ্ঞাবহ ছিলাম বিবেকানন্দ দেবতা ।
বিবেকানন্দ জ্ঞানের অবতার … বিবেকানন্দ বিবেকানন্দ করে হইহই করলে তাঁকে মান্য করা হয় না ।
তাঁর নামে মন্দির করলাম আর দুটো ফুল ফেলে দিলাম ‘ বিবেকানন্দায় নমঃ ‘ বলে -তাহলেই তাঁর পূজা হলো না তিনি তা চাইতেন না তাঁকে মানি আর নাই মানি , তিনি যা বলেছিলেন তা যদি কার্যে পরিণত করতে পারি , তখনই তাঁকে প্রকৃত মান্য করা হবে ।
তখনই তাঁর প্রকৃত পূজা করা হবে , আর তখনই তিনি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলী গ্রহণ করবেন ।
No comments