কাজী নজরুল ইসলাম শ্রীশ্রীমায়ের সম্বন্ধে যে কথা গুলো বলছেন - Spirituality Religion

Header Ads

কাজী নজরুল ইসলাম শ্রীশ্রীমায়ের সম্বন্ধে যে কথা গুলো বলছেন

কাজী নজরুল ইসলাম শ্রীশ্রীমায়ের সম্বন্ধে বলছেন.........


আমি শ্রীশ্রীমা সারদাদেবী সমন্ধে কিছু কথা বলবো যদিও কিছু জানি না
শ্রীশ্রীমা সারদাদেবী ত্যাগের মহিমায় যেমন উজ্জ্বল তেমনি স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন সারা পৃথিবীতে।

 সাধারণ অর্থে মাতৃত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেও মা হয়ে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন লক্ষ কোটি মানুষের অন্তরে।

 তিনি মা, এ-পৃথিবীতে একজন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী মা। 

তিনি ধনীর মা; গরিবের মা; সতের মা; অসতের মা; উঁচুজাতের মা; নিচুজাতের মা; তিনি সাধুরও মা আবার ডাকাতেরও মা।

উনিশ শতকের শেষদিকে ছোট জাত বলে সমাজের এক বিরাট অংশকে দূরে সরিয়ে রাখা হত।

 ঠিক এই সময় নিরক্ষর ব্রাহ্মণ কন্যা সেই সমাজের একজন হয়েও নিজেকে অনেক উপরে তুলে  নিয়ে ছোট জাত,
  •  বড় জাত, 
  • মজুর, 
  • মালি, 
  • ডাকাত, 
  • পতিত,
  •  চণ্ডাল, 
  • মাতাল সকলকে বুকে টেনে নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন -
  • আমি সতেরও মা অসতেরও মা; সকলের মা।

 তিনি বললেন,
 ছেলে যদি ধুলোকাদা মেখে আসে তাকে ধুয়ে-মুছে কোলে তুলে নেওয়াই তো মায়ের কাজ।

ধর্মসংস্কারক হিসেবেও সারদা দেবী সমকালীন রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে আঘাত হেনেছেন।

 নিজের জীবনযাত্রার মধ্য দিয়ে তিনি আচার-অনুষ্ঠানের অপ্রয়োজনীয়তা প্রতিপন্ন করেছেন। 

ব্রাহ্মণের বিধবা হয়েও তিনি নিয়মিত সেদ্ধ চালের ভাত খেতেন এবং ভক্তকে প্রসাদ দেওয়ার জন্য একাধিকবার ভাত খেতেও তাঁর কোনও দ্বিধা ছিল না।

 এ-বিষয়ে প্রশ্ন করলে মা বলেন, ছেলেদের কল্যাণের জন্য আমি সব করতে পারি। 

ওতে কোনও দোষ হয় না। 
ছেলেদের ইচ্ছা পূর্ণ করতে মা নির্দ্বিধায় রাত্রে চালের পিঠে খান এবং জয়রামবাটীর মতো গ্রামে সহস্তে মাংস রান্না করে ভক্তদের মুখে তুলে দেন।

কি সামাজিক ব্যবহারে কি কর্মাচরণে সারদা দেবী প্রচলিত রীতির বাধা ভেঙে নতুনের দিকে এগিয়ে গেছেন।

 এমন সব কথা বলেছেন, 
এমন সব কাজ করেছেন যা - একবিংশ শতাব্দীতেও আমরা করে উঠতে পারছি না এবং এ-কাজ তিনি করেছেন মাতৃস্নেহের জোরে। 

 আজ যখন সারা পৃথিবী ধর্মের নামে হিংসায় উন্মত্ত তখন সারদা দেবীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আজকের মায়েরা যদি ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দিতে পারেন তবেই নতুন যুগের, 
নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা সফল হতে পারে।

 আজ সমাজে আমরা ত্যাগস্বীকার করতে চাই না।
 নিজের ঢোল নিজেই পিটিয়ে জোর করে মানুষের প্রশংসা আদায় করতে চাই।

 ফলে প্রশংসা প্রহসনে পরিণত হয়।

 কিন্তু  সারদা দেবী কোনওদিন প্রশংসা কুড়োতে চাননি। 
আর সে কারণেই তিনি যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন।

সারদাদেবী শুধু মুখেই বলতেন না যে,
 তিনি শরতেরও মা এবং আমজাদেরও মা।

 তিনি এটা অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করতেন।

 আজ আমাদের অনেকেই এ ধরনের কথা বলি কিন্তু আমাদের মনের কথা এবং কাজে মিল নেই।

 একটি প্রচলিত গল্প আছে।
 সেটা হল, 
এদেশে রোগী বেশি না ডাক্তার বেশি।
 গল্পের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছে - এদেশে ডাক্তার বেশি। 
গল্পের সূত্র ধরে বলা যায় এদেশে দর্শক শ্রোতার চাইতে অভিনেতার সংখ্যা বেশি।

 আমরা বাইরে অসাম্প্রদায়িক বলে অভিনয় করি কিন্তু অন্তরে সাম্প্রদায়িকতা পোষণ করি এবং সুযোগ পেলেই সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করি।

 ফলে অসাম্প্রদায়িক সমাজপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বারবার ব্যাহত হচ্ছে।

 তাই সত্যিকার অর্থেই যদি সারা পৃথিবীতে এবং বিশেষ করে এ উপমহাদেশকে সাম্প্রদায়িকতার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে চাই তাহলে শ্রীরামকৃষ্ণ,
 সারদাদেবী,
 স্বামী বিবেকানন্দের মতো অসাম্প্রদায়িক মহৎ ব্যক্তিদের জীবনাদর্শের প্রচার ও প্রসার একান্ত জরুরি। 

No comments

Powered by Blogger.