ঠাকুরের সম্বন্ধে কার কি ধারণা ? _স্বামী ভূতেশানন্দ
ঠাকুরের সম্বন্ধে কার কি ধারণা ? _স্বামী ভূতেশানন্দ
দক্ষিণেশ্বর থেকে কলকাতায় ফিরছেন ৷
কথা উঠল ঠাকুরের সম্বন্ধে কার কি ধারণা ?
কেউ বলছে—অপূর্ব জ্ঞান, কেউ বলছে—অসাধারণ ভক্তি ৷
এরকম নানা জনের নানারকম মন্তব্য হচ্ছে ৷
নরেন্দ্রনাথ চুপ করে আছেন ৷
তখন অনেকে তাঁকে বললে—তুমি কি বল?
স্বামীজী উত্তরে বললেন—L-O-V-E personified—প্রেমের মূর্তবিগ্রহ ৷
ঠাকুরকে তিনি এইভাবে দেখেছেন ৷
ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সম্বন্ধ ছিল অদ্ভুত ৷
ঠাকুরের কাছে তিনি যে আত্মসমর্পণ করেছেন তা একদিনে নয় ৷
ঠাকুরের সঙ্গে তিনি অনেক দ্বন্দ্ব করেছেন, বলেছেন—
তাঁর সঙ্গে এমন লড়াই বোধহয় আর কেউ করেনি !
পদে পদে তিনি ঠাকুরের কথার প্রতিবাদ করেছেন,
তর্ক করেছেন,
আর বলেছেন—প্রতিবারই হারতে হয়েছে ৷
যে-ঠাকুর লেখাপড়া জানতেন না,
শিষ্ট সমাজে চলার উপযুক্ত কি না সন্দেহ—
তাঁর কাছে স্বামীজী বারবার পরাভূত ৷
কেন ? কারণ,
ঠাকুরের যে অপূর্ব শক্তি,
তার কাছে কে না পরাস্ত হয় !
কাশীপুরে মহাসমাধির আগে
তিনি নরেন্দ্রনাথকে তাঁর সমস্ত আধ্যাত্মিক শক্তি সমর্পণ করলেন ৷
স্বামীজী অনুভব করেছিলেন
ঠাকুরের দেহ থেকে তড়িৎকম্পনের মতো সূক্ষ্ম তেজোরশ্মি
তাঁর দেহমধ্যে প্রবেশ করছে ৷
তিনি বাহ্যজ্ঞান হারালেন ৷
চেতনা লাভ করে তিনি দেখলেন ঠাকুরের চক্ষে অশ্রুবর্ষন হচ্ছে ৷
তাতে অতীব চমৎকৃত হয়ে এরূপ করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে ঠাকুর বললেন,
" আজ যথাসর্বস্ব তোকে দিয়ে ফকির হলুম ৷ তুই এই শক্তিতে জগতের কাজ করবি ৷ কাজ শেষ হলে পরে ফিরে যাবি ৷"
ঠাকুরের অশ্রুবর্ষন দুঃখে নয়— এ আনন্দাশ্রু ৷
তিনি এমন একজন উত্তরাধিকারীকে পেয়েছেন,
যার ওপর তাঁর জগদুদ্ধারকার্যের যে আদর্শ,
তাকে রূপায়িত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷
এই শক্তিমান ব্যক্তিই তাঁর পতাকা বহন করে চারদিকে নিয়ে যাবেন,
বিশ্বজয় করবেন ৷
স্বামীজী ধর্মজীবনকে নতুনভাবে আমাদের কাছে পরিবেশন করেছেন ৷
তিনি ঠাকুরের কাছ থেকে তা পেয়েছেন ৷
স্বামীজী না বললে আমরা কেউ ঠাকুরকে বুঝতে পারতাম না যে,
তিনি এই তত্ত্ব প্রকাশ করতে দেহধারণ করে এসেছেন ৷
ঠাকুরকে আমরা সাধারণভাবে
একজন খুব উঁচুদরের ভক্ত বা উঁচুদরের জ্ঞানী,
বড়জোর একজন মহাপুরুষ ভাবতে পারতাম ৷
কিন্তু জগতে একটা পরিবর্তন এনে দিতে পারে,
এমন বিপুল শক্তি যে তাঁর ভিতর দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে—
একথা স্বামীজীর সাহায্য ছাড়া আমরা কখনো বুঝতে পারতাম না ৷
স্বামী ভূতেশানন্দ
No comments