বাঙালির খাওয়া দাওয়া II বিবেকানন্দ সহাস্যে উত্তর দিলেন
*ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের কাছে অভিযোগ পৌঁছল,
সর্বকালের সেরা সেলিব্রিটি বাঙালি ভোজন রসিক তথা রন্ধনপটুদের মধ্যে ওপর দিকে থাকবেন স্বামী বিবেকানন্দ।
কচুরি-আলু ছেঁচকি থেকে মাংসের নানা পদ,
সবই তাঁর প্রিয় ছিল।
বানাতেনও জমিয়ে।
কই মাছের প্রতি তাঁর বিশেষ দুর্বলতা ছিল।
তিনি তখন শুধুই নরেন,
ঠাকুর রামকৃষ্ণর দেখা পাননি,
বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন 'পেটুক সংঘ'।
তাদের কাছে ঘোষণা করেন,
--- "দেখবি কলকাতা শহরে গলির মোড়ে মোড়ে পানের দোকানের মতো চপ কাটলেটের দোকান হবে।"
কিন্তু কচুরি-আলু ছেঁচকির প্রতি স্বামীজির দুর্বলতা ছিল অতি প্রবল।
নানা দোকান থেকে আনিয়ে তো খেতেনই,
লন্ডনে গিয়ে নিজেই বানাতেন বাড়ির বেসমেন্টে বসে।
ভারত পরিব্রাজন কালে একবার নাকি কারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল,
--- "আচ্ছা,
আপনি কোন সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী?
পুরী না গিরি?"
বিবেকানন্দ সহাস্যে উত্তর দিলেন,
--- "দুটোর কোনোটাই না, আমি কচুরি সম্প্রদায় ভুক্ত।"
যিনি খেতে ভালোবাসেন,
তিনি খাওয়াতেও ভালোবাসেন।
স্বামীজি চপ কাটলেট বানিয়ে খেতেন ও লোককে খাওয়াতেন।
সংঘজননী সারদা বলেছেন,
--- "নরেন আমার... আলু চটকে কী সব রাঁধত... তাকে কী বলে?"
আবার শিকাগো যাত্রার আগে বোম্বাইতে স্বামীজি ১৪ টাকা খরচ করে এক হাঁড়ি পোলাও রান্না করেন শিষ্যদের জন্য।
তার থেকে এক টুকরো মাংস ছাড়া নিজে আর কিছুই খাননি।
মা সারদা বলেছেন,
--- "নরেন নানা রকমের মাংস রাঁধতে পারত।"
এই সেদিন পর্যন্ত ফাউল অর্থাৎ মুরগির মাংস গৃহস্থ ঘরে ঢোকা ঘোর অনাচার বলে মানা হত।
কিন্তু সে কালে নরেন এ সব বেনিয়ম ভেঙে দিয়েছিলেন এবং স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ তা বিলক্ষণ জানতেন।
স্বামী অভেদানন্দ লিখেছেন,
--- "সে দিন নরেন বলিল,
চল আজ তোদের কুসংস্কার ভাঙিয়া দিই।
... সন্ধ্যার সময় কাশীপুর বাগান হইতে পদব্রজে আমরা নরেনের সঙ্গে বিডন স্ট্রিটে বর্তমানে যেখানে মিনার্ভা থিয়েটার,
তাহার নিকটে পীরুর দোকানে উপস্থিত হইলাম।
নরেন ফাউলকারি অর্ডার দিল।...
রাত্রে কাশীপুরে ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিলেন,
কোথায় গিয়েছিলি?
আমি বলিলাম কলিকাতার বিডন স্ট্রিটে পীরুর দোকানে।
... জানতে চাইলেন কী খেলি?
আমি বলিলাম,
মুরগির ডালনা।
শেষ পর্যন্ত ঠাকুর ঈষৎ হাস্য করিয়া বলিলেন,
বেশ করেছিস।"
ঠাকুরের কাছে অভিযোগ পৌঁছল,
নরেন মাংস খায় যথেচ্ছ।
নিয়মিত হোটেলে খায়।
তাই শুনে অভিযোগকারী শিষ্যকে শ্রীরামকৃষ্ণ ধমকে বলেন,
--- "তুই যদি হবিষ্যিও খাস, আর নরেন যদি হোটেলে খায়, তা হলেও তুই নরেনের সমান হতে পারবি না।"
সূত্র: বাঙালির খাওয়া দাওয়া।
No comments