আমার সন্ন্যাস জীবন ও বেলুড় মঠ II স্বামী সোমেশ্বরানন্দ
আমার সন্ন্যাস জীবন ও বেলুড় মঠ II স্বামী সোমেশ্বরানন্দ
তখন তিনি মঠ-মিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি।(Assistant Secretary)
আমি আছি বেলুড়মঠের আইন বিভাগে।(In the law department)
খুব কম কথা বলতেন।
কিন্তু জুনিয়র সাধু-ব্রহ্মচারীদের প্রতি খুব স্নেহপূর্ণ।
তাড়াতাড়ি হেঁটে যেতেন।
অনাবশ্যক কথা একেবারেই নয়।
আর খুব জপ করতেন।
লেখালেখি বা বক্তৃতা করতেন না।
একদিনের ঘটনা।
অফিস থেকে একটা জরুরী চিঠি পাঠাতে হবে।
চিঠিটা টাইপ করতে করতে দেরী হয়ে গেল।
অফিসের শেষে মহারাজ চলে গেছেন তাঁর ঘরে।
অথচ মহারাজের সই দরকার চিঠিতে।
তখন তিনি থাকতেন বেলুড়মঠে লাইব্রেরীর (the library)আগে প্রথম ঘরটিতে, দোতলায়।
গিয়ে দেখি তাঁর ঘর অন্ধকার।
জানালার ফাঁক দিয়ে দেখলাম তিনি ধ্যান করছেন।
বাইরে বারান্দায় অপেক্ষা করতে লাগলাম।
জিজ্ঞাসা করলেন:
তুমি কি আমার জন্য অপেক্ষা করছো?
শুনে বিরক্ত হয়ে বললেন:
আমাকে ডাকলে না কেন?
ধ্যান করছিলাম ঠিকই,
কিন্তু সমাধিস্থ তো ছিলাম না।
দেখো তো,
আমার জন্য তোমার কতটা সময় নষ্ট হলো।
তাঁর একটা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছিলাম।
মঠ-মিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি(Assistant Secretary) তিনি।
অথচ কাজের সময় ঘনিষ্ঠ সাধু বা ব্রহ্মচারীদের তিনি ডেকে পাঠাতেন না,
নিজেই চলে যেতেন।
- কাজের ফাঁঁকে ফাঁঁকে,
- হাঁঁটার সময়,
- অনবরত জপ করতেন।
কোনো ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
কাউকে কিছু না বলেই চলে গেছে।
১০-১২ দিন পর হঠাৎ হাজির।
মিশন ছেড়ে চলে গিয়েছিল,
আবার ফিরে এসেছে।
২-৩ জন কর্তৃপক্ষ তার এই ব্যবহারে অসন্তুষ্ট।
কিন্তু বাসুদেব মহারাজ(Swami Gitanangaji) সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঐ ব্রহ্মচারীকে স্হান দিলেন মিশনে।
ঐ ব্রহ্মচারীর মুখেই শুনেছিলাম ঘটনাটি।
কোন্ কোন্ ব্রহ্মচারীর সে-বছরে সন্ন্যাস হবে এই নিয়ে উচ্চতম কর্তৃপক্ষের মিটিং হচ্ছে।
এক ব্রহ্মচারী সম্পর্কে একজন সাধু বললেন---- সে খুব দুম্ দাম্ কথা বলে,
সবার সামনেই অন্যকে সমালোচনা করে।
বাসুদেব মহারাজ তখন বলে উঠলেন:
এই সামান্য দোষে তাকে আটকে দেবেন?
তাকে ডেকে সরাসরি এটা বলে দিন।
কিন্তু শাস্তি দেবেন কেন?
বস্তুত তাঁর কথা মেনেই ঐ ব্রহ্মচারীকে অনুমতি দিয়েছিলেন সবাই।
বাসুদেব মহারাজকে(Swami Gitanangaji) দেখলেই বোঝা যেত,
সব পরিস্থিতিতেই তিনি নিজের জীবন-লক্ষ্য সম্বন্ধে সচেতন।
প্রতিটি মুহূর্তই যেন সেই লক্ষ্যের দিকে তাঁর যাত্রা চলছে।
কারোর সঙ্গে বসে গল্প করতে কখনো দেখিনি তাঁকে।
অফিসে চুপচাপ নিজের কাজ।
অনাবশ্যক কথা একেবারেই নয়।
তবে কেউ সমস্যায় পড়লে তিনি নিজেই এগিয়ে যেতেন সান্ত্বনা দিতে, সাহায্য করতে।
একবার।
মিশন-অফিসের ভেতরদিকের বারান্দায় রাখা টেলিফোনে কথা বলছি কলকাতার এক শাখায়।
ব্রহ্মচারী-বন্ধুর সঙ্গে।
তখন মোবাইল আসেনি,
ল্যান্ডলাইনের যুগ।
আমি জোরে জোরেই বললাম----- না আমার এখন সময় ভাল নয়।
আগামী দুই বছর ভুগতে হবে,
গ্রহ-নক্ষত্র আমার প্রতিকূল।
এসব কথা বাসুদেব মহারাজ(Swami Gitanangaji) শুনতে পেয়েছিলেন অফিস থেকে।
ফোন শেষ হলে তিনি আমার কাছে এসে বসলেন:
গ্রহ-নক্ষত্রের চেয়ে ঠাকুরের উপর ভরসা রাখো।
কিছু খারাপ হবে না তোমার।
আত্মবিশ্বাসী হও।
[আমার সন্ন্যাস জীবন ও বেলুড় মঠ
স্বামী সোমেশ্বরানন্দ
গিরিজা পাবলিশার্স
পৃষ্ঠা-১০০-১০১]
No comments