সন্ন্যাস জীবনের মাহাত্ম্য বর্ণনায় তুরীয়ানন্দ
‘সন্ন্যাস জীবনের মাহাত্ম্য বর্ণনায় তুরীয়ানন্দ’
**************************************এ জগৎটা বিচিত্রতায় পূর্ণ। কত রকমের হাঙ্গামা এতে রয়েছে। এসব ত্রিগুণের খেলা। আবার এর ওপরের অবস্থা—ত্রিগুণাতীত অবস্থা, পরমহংসদের ভিতরে রয়েছে। মায়ের ইচ্ছায় এই অপূর্ব ব্যবস্থা। ‘ভাবাতীতং ত্রিগুণ-রহিতং’ ইত্যাদি। যিনি এই সবের মধ্যে একত্ব দেখতে পেয়েছেন, তিনিই শান্তিতে থাকেন। কারণ তখন আর লাভ, লোকসান, ভাল, মন্দ কিছুই থাকে না। কার ভাল, কার মন্দ ? এই কদিন যে যজুর্বেদ সংহিতার রুদ্র অধ্যায় পড়া হচ্ছে, তাতে কেবল সকাম প্রার্থনা রয়েছে। আমার গরুগুলিকে মেরো না, আমাদের দিকে তোমার করুণাময় মূর্তি ফিরিয়ে রেখো, ধনুর্বাণ ফেলে দিয়ে এস, অন্যের যা হয় হোক আমার ভাল কর, আমার শত্রুদের প্রতি বজ্র নিক্ষেপ কর—এসব ভাব স্বার্থ থেকে আসে। দেহবুদ্ধি চলে গেলে আর এ রকম ভাব আসে না। ‘সবই তিনি’ এই চিন্তা সব চাইতে উত্তম। তা না পারলে, ‘তিনিই সব করাচ্ছেন’—এই চিন্তা করা ভাল।
“ঠাকুর বলতেন, ‘পূর্বজন্মে যে রাজারাজড়া ছিল, ভোগবাসনা সম্পূর্ণ মিটিয়ে নিয়েছে, সেই এ জন্মে সন্ন্যাসের অধিকারী হয়।’ তখন জন্ম থেকেই প্রবল বৈরাগ্য থাকে। ভোগবাসনা যার মেটেনি, তার বৈরাগ্য আসবে কি করে। সন্ন্যাস কি নিলেই হোল ? আমাদের ধারণা ছিল যে সন্ন্যাসী ক্কচিৎ হয়। প্রপঞ্চ যাকে ছেড়ে দিয়েছে, সে কি সাধারণ লোক ? হৃষিকেশে তিন হাজার সাধু দেখে বুঝলাম যে আসল সাধুতে, আর সচরাচর যা দেখতে পাওয়া যায়, তাতে কত তফাত ! গেরুয়া নিলেই কি সন্ন্যাসী হলো ? ঠাকুর সন্ন্যাসের কথা তো অত বলতেন না—‘ভগবান লাভ করবার চেষ্টা কর’—এই দিকেই বেশি জোর দিতেন। তবে অবশ্য এ কথাও বলতেন যে ত্যাগ ব্যতীত ভগবান লাভ হতে পারে না।”
।। হরিঃ ওঁ তৎ সৎ ।।
No comments