বিশ্বপথিক শ্রীরামকৃষ্ণ II ব্রাজিলে রামকৃষ্ণ আন্দোলন শুরু হয়েছিল একটি অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে দিয়ে , একটিই মানুষের চেষ্টার ফলে , ঘটনাটি ১৯৪২ সনের । - Spirituality Religion

Header Ads

বিশ্বপথিক শ্রীরামকৃষ্ণ II ব্রাজিলে রামকৃষ্ণ আন্দোলন শুরু হয়েছিল একটি অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে দিয়ে , একটিই মানুষের চেষ্টার ফলে , ঘটনাটি ১৯৪২ সনের ।

SRI RAMAKRISHNA PHOTO

বিশ্বপথিক শ্রীরামকৃষ্ণ
********************************************ব্রাজিলে রামকৃষ্ণ আন্দোলন শুরু হয়েছিল একটি অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে দিয়ে , একটিই মানুষের চেষ্টার ফলে , ঘটনাটি ১৯৪২ সনের ।   মধ্য ব্রাজিলের এক শহর বেলো হরাইজেন্টো তে অরলিণ্ডো দ্যা সিলভা নামে এক ভদ্রলোক পুকুরে স্নান করছিলেন ।   অরলিণ্ডো হঠাৎ দেখলেন তাঁর সামনে এক সৌম্য দর্শন অপরিচিত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন ।   হতবাক অরলিণ্ডো কি বলবেন বোঝার আগেই আগন্তুক তাঁর নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন --- আমি ব্রহ্মানন্দ , শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের শিষ্য।  এবারে ব্রহ্মানন্দ জী অরলিণ্ডো কে এই অঞ্চলের গরিব বাচ্চাদের সেবা করার নির্দেশ দিলেন । অরলিণ্ডো  ইতিপুর্বে ব্রহ্মানন্দ জী বা শ্রী রামকৃষ্ণের নাম শোনেন নি ।   শৈশবে মাতৃ হারা অরলিণ্ডো মিশনারিদের কাছে থেকে পড়াশোনা করেছেন ।   স্বভাবতই তিনি গোঁড়া খ্রিস্টান ছিলেন ।     তবু স্বামী ব্রহ্মানন্দের প্রভাবে তিনি এই কাজে উদ্বুদ্ধ হলেন ।  মহারাজ ও তাঁকে আরও ঘন ঘন দর্শন ও পরামর্শ দিতে থাকলেন ।  এমন কি কোন বই গুলি পড়তে হবে নির্দেশ দিলেন ।  ঠাকুরের কৃপায় অরলিণ্ডোর এক বন্ধু তাঁকে '' গসপেল অফ শ্রীরামকৃষ্ণ '' বই টি  উপহার দিলেন । কিছুদিনের মধ্যেই অরলিণ্ডো ঠাকুর , শ্রী মা ও স্বামীজীর সম্বন্ধীয় অনেক কিছু ই পড়ে ফেলে রামকৃষ্ণ ভাবধারায় প্রভাবিত হলেন , গরিব বাচ্চাদের স্নেহ মমতায় ভরিয়ে দিলেন ।  এতদিন তিনি একটি চাকরি করতেন । এবারে  ব্রহ্মানন্দ জী তাঁকে চাকরি ছেড়ে ছোট একটি বাড়ি নিয়ে তাঁকে সম্পূর্ণ ভাবে শিশুদের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে আদেশ দিলেন ।            
********************************************অরলিণ্ডো তাঁর অন্ন সংস্থানের চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে তাঁর যথাসর্বস্ব বিক্রি করে দিয়ে একটা জমি কিনলেন ।   এই অঞ্চলে জল কম থাকায় জমির দাম কম ছিল ।   ইতিমধ্যে এই কাজে সাহায্য করার জন্য কিছু সহৃদয় বন্ধু এ গিয়ে এলেন ।   বাড়ি তৈরির জন্য টাকার দরকার ছিল কিন্তু কোন গ্যারেন্টার না থাকায় ব্যাঙ্ক ঋণ দিচ্ছিল না । ঠাকুর তাঁর ব্যবস্থাও করলেন।   রোজালিনা নামে এক সম্ভ্রান্ত উচ্চবিত্ত মহিলা অরলিণ্ডোর জামিনদার হয়ে শিশুদের সেবায় নিজেকে সমর্পিত করে প্রজেক্ট পার্টনার হলেন ।  এবার সহজেই ঋণ পাওয়া গেল ।  মিশনের প্রথম ভবন টি তৈরি হল ১৯৬০ এবং দ্বিতীয় টি ১৯৬১ তে ।   অরলিণ্ডো গরিব বাচ্চাদের এই ভবনে এনে তাঁদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন ।    অরলিণ্ডো কে বাচ্চারা  ''আঙ্কেল '' বলে ডাকত ।   বাড়িতে জলের কোন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক দূরের কুয়ো থেকে সব জল নিয়ে আসতে হত ।  অরলিণ্ডো বাচ্চাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে ও নজর রাখতেন ।    সন্ধ্যার প্রার্থনা কে মিশনের বাচ্চারা '' মন্ত্র '' বলত ।    ঠাকুর , শ্রীমা ও স্বামীজীর স্তোত্র সমবেত কণ্ঠে উচ্চারন করত ।   যেমন মিশন স্কুলে আবাসিক ছাত্ররা করে থাকে।  মিশনে স্যাণ্ড্রো নামে একটি ছেলে ছিল ।  সে বয়সে অন্যদের থেকে একটু বড় ছিল ।   স্যাণ্ড্রো কে মাঝেমধ্যেই রাতে একলা কুয়োয় গিয়ে জল আনতে হত ।  রাতের অন্ধকারে তার ভয় করত ।  একথা সে একদিন আঙ্কেল কে বলে ।  মিশনের সবাই মা সারদা কে আদর করে '' লিটল মাদার '' বলে ডাকত ।  আঙ্কেল স্যাণ্ড্রো কে বললেন , '' ভয় করলে লিটল মাদারের কাছে প্রার্থনা করবে যেন উনি তোমার সঙ্গে থাকেন । ''  সরল প্রাণ স্যাণ্ড্রো র মনে এই বিশ্বাস টা দৃঢ়মূল হয়ে গেল ।   একদিন অঙ্কেল তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন তার আর ভয় লাগে কিনা ?   স্যাণ্ড্রো বলেছিল তার একদম ভয় লাগে না কারণ অন্ধকারে একলা পথে আকাশ থেকে একটা নীল জ্যোতি বেরিয়ে তাকে কুয়ো পর্যন্ত রাস্তা দেখিয়ে দেয় ।'' আমি সকলের মা '' -- মা সারদার এই উক্তি টি যে কত টা ব্যাপক তা এই ঘটনা টি বুঝিয়ে দেয় । 
         
********************************************বাচ্চারা যাতে সমাজে ও অন্য বাড়ির বাচ্চাদের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে মিশতে পারে তার জন্য এদের সবাইকে ভাল স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে ।  এদের পড়াশোনার সাহায্য করার জন্য মিশনের শিক্ষক রা রয়েছেন ।এখানে ডরমেটরী র দরজা বা জানলায় কোন গ্রিল নেই ।   আবাসিক রা যাতে নিজেদের বন্দি না মনে করে সেই জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।  কিন্তু কোন বাচ্চা মিশন ছেড়ে পালিয়ে যায় না ।সকাল সাত টায় সবাই প্রার্থনা মন্দিরে এসে জমা হয় ।    শ্রী রামকৃষ্ণ , মা সারদা , শ্রী কৃষ্ণ , এবং যীশুর বন্দনা গীত ও স্তোত্র দিয়ে এদের দৈনন্দিন কাজ শুরু হয় ।   এগুলো সব মহারাজই শিখিয়েছিলেন ।   বাচ্চারা এই গীত গুলি গাইতে এত ভালবাসে যে দৈনন্দিন কাজের মধ্যে এমন কি খেলার সময়ও এগুলি গাইতে থাকে ।  লাতিন আমেরিকায় শ্রী রামকৃষ্ণ ভক্ত মণ্ডলী দিন দিন বেড়েই চলেছে।   সুদূর ব্রাজিল বেলুড় মঠে আগত ভক্তমণ্ডলী কে ঠাকুরের মর্মর মূর্তির সামনে সাশ্রু নয়নে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা আজ এক অতি পরিচিত ঘটনা।    ভাবতেও অবাক লাগে দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর পূজারী ব্রাহ্মণ ও নহবতের লিটল মাদারের স্তুতি গানে সুদূর ব্রাজিল বাসীরা অনুপ্রাণিত হচ্ছে।    গরিব অনাথ শিশুরা পাচ্ছে আশ্রয় আর পাশ্চাত্যের ভোগবাদী সংস্কৃতি পাচ্ছে সঠিক পথ নির্দেশ ।  আজ বিশ্বপথিক শ্রীরামকৃষ্ণ লাতিন আমেরিকার অনেকশহরে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন , শ্রদ্ধেয় স্বামী বিজয়ানন্দ জী ১৯৩২ সনে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলে আসেন তখনি অনেক লাতিন আমেরিকান রামকৃষ্ণ ভাবধারার সাথে পরিচিত হন।  রামকৃষ্ণ মিশন রিও , সাও পাওলো , বেলো হরাইজেন্টো ,কুরিটিবা , বুয়েনস আয়ার্স প্রমুখ শহর গুলিতে স্থপিত হয়েছে ।  এছাড়াও অনেক প্রাইভেট সেন্টার ও আছে ।  স্বামী বিজয়ানন্দের পর স্বামী পরেশানন্দ লাতিন আমেরিকার মিশন ও আশ্রম গুলি দেখাশোনা করতেন ।   যুদ্ধোত্তর লাতিন আমেরিকার অনুন্নত দেশ গুলি যখন দারিদ্র্য , মাদক দ্রব্য ও মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়ে দিশাহীন , অভিভাবক হীন অনাথ নিরাশ্রয় শিশুদের অসহায়তার অন্ধকারে  অরলিণ্ডো র জীবনের এই ঘটনাটি ব্রাজিলবাসীর কাছে এক নতুন আলোর বার্তা বহন করে এনেছিল।   আর মূলত এই ঘটনার মধ্য দিয়েই ব্রাজিলে রামকৃষ্ণ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল।                  ।।সমাপ্ত।।।



No comments

Powered by Blogger.