যার বাসন মাজা কাজ, সে যদি সব মনটা সেই বাসনমাজার দিকেই রাখে, তাহলে তার ব্রহ্মজ্ঞান হতে পারে।
Sri Sarada Devi,
|
লেখাটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো। ঘটনাটা আমার জীবনে প্রথম পড়া। সহজ সাধারণ ভাষা। তার চেয়ে আরও সহজ উচ্চারণ। আর তার চেয়েও সহজতম ভাব। সাধারণত চার দেওয়ালের গৃহস্থালী নিয়ে অত্যন্ত জলের মতো কিছু কথা। অথচ তার ছত্রে ছত্রে অদ্বৈতদর্শন। যাপনের বৈজ্ঞানিক শৈলী। মা সারদা আর তাঁর কথা সর্বকালের সেরা বিস্ময়। একটু ছুঁয়ে দেখার দুঃসাহস...
মা বলছেন--
“কোনও কাজকে তুচ্ছ বলে অবহেলা করা উচিত নয়।”
ছোট কাজ দেখে মানুষ চেনা যায়। মা নিজেই বলেছেন। কোনও প্রেরণায় বা খেয়ালে পড়ে আমরা দুম করে একটা বড়সড় দায়িত্ব উদ্ধার করে ফেলতেই পারি। কিন্তু রোজেকার দিনাতিপাতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দায়িত্বগুলো সেই একই নিষ্ঠায় পালন করে যাওয়া খুব কঠিন।
যেমন কাউকে একবারে হাজারটাকা দিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু প্রতিদিন সেই সমান শ্রদ্ধায় মনে করে দশটা টাকা দিয়ে যাওয়া খুব কঠিন।
যিনি পারেন, তাঁর একাগ্রতা, সন্তোষ এবং চিত্তের স্থৈর্য প্রশ্নাতীত।
তাঁর পক্ষে ঈশ্বরদর্শন একেবারেই দূরের ব্যাপার নয়। বরং মলয়ের বাতাস লেগে গেছে তাঁর শরীরে।
স্বামীজি বলেছেন, যার বাসন মাজা কাজ, সে যদি সব মনটা সেই বাসনমাজার দিকেই রাখে, তাহলে তার ব্রহ্মজ্ঞান হতে পারে।
যে কোনও উপায়ে মনকে নিস্তরঙ্গ করে ফেলতে পারলেই হল। উপায়হীন মন ছুটে বেড়াবেই। কিন্তু উপায় অবলম্বন করে গোটা মনটা তাতে ঢেলে দেওয়া অভ্যাস করতে পারলেই সেই কর্মীর ব্রহ্মবিদ্যা আয়ত্ত হতে বাধ্য।
যেমন কাউকে একবারে হাজারটাকা দিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু প্রতিদিন সেই সমান শ্রদ্ধায় মনে করে দশটা টাকা দিয়ে যাওয়া খুব কঠিন।
যিনি পারেন, তাঁর একাগ্রতা, সন্তোষ এবং চিত্তের স্থৈর্য প্রশ্নাতীত।
তাঁর পক্ষে ঈশ্বরদর্শন একেবারেই দূরের ব্যাপার নয়। বরং মলয়ের বাতাস লেগে গেছে তাঁর শরীরে।
স্বামীজি বলেছেন, যার বাসন মাজা কাজ, সে যদি সব মনটা সেই বাসনমাজার দিকেই রাখে, তাহলে তার ব্রহ্মজ্ঞান হতে পারে।
যে কোনও উপায়ে মনকে নিস্তরঙ্গ করে ফেলতে পারলেই হল। উপায়হীন মন ছুটে বেড়াবেই। কিন্তু উপায় অবলম্বন করে গোটা মনটা তাতে ঢেলে দেওয়া অভ্যাস করতে পারলেই সেই কর্মীর ব্রহ্মবিদ্যা আয়ত্ত হতে বাধ্য।
বহু আগে স্বামী জিতাত্মানন্দজির মুখে শোনা একটি ঘটনা। তখন স্বামীজির বাড়ি সংস্কারের কাজ চলছে। অনেক মিস্ত্রি মজুর সেই কাজে নিযুক্ত। তেমনই একজন একদিন সে বাড়ির একটি ঘরে মেঝে খোঁড়ার কাজ করছেন। বিকেল পেরিয়েছে তখন। দরজাটা বন্ধ। কোনও কারণে ইলেকট্রিক লাইট সে ঘরে নেই। হ্যাজাক বা হারিকেন কিছু একটা জ্বলছে।
একমনে কাজ করতে করতে হঠাৎ তাঁর মনে হল,ঘরে কেউ এসেছেন! সামনে ছায়া। অথচ দরজা যে বন্ধ!
মুখ তুলে দেখেন—রাজার মতো চেহারা। উন্নত মাথা, দৃপ্ত দৃষ্টি। গৈরিক আচ্ছাদিত টানটান শরীর। মেঘের মতো কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন—‘যা করছ, মন দিয়ে করো।’
তারপরই আর নেই।
সেই গ্রামের সহজ মানুষটি ভয়টয় পেয়ে ছুট্টে গিয়ে নীচের মহারাজদের কাছে হাউমাউ করে যা পারলেন বললেন।
কে এসেছিলেন, মানুষটি চেনেননি। মহারাজদের কাছ থেকে সব যখন শুনলেন, আশ্চর্যের—পরদিন সোজা নিজের গ্রামের বাড়ি চলে গেলেন।
একমনে কাজ করতে করতে হঠাৎ তাঁর মনে হল,ঘরে কেউ এসেছেন! সামনে ছায়া। অথচ দরজা যে বন্ধ!
মুখ তুলে দেখেন—রাজার মতো চেহারা। উন্নত মাথা, দৃপ্ত দৃষ্টি। গৈরিক আচ্ছাদিত টানটান শরীর। মেঘের মতো কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন—‘যা করছ, মন দিয়ে করো।’
তারপরই আর নেই।
সেই গ্রামের সহজ মানুষটি ভয়টয় পেয়ে ছুট্টে গিয়ে নীচের মহারাজদের কাছে হাউমাউ করে যা পারলেন বললেন।
কে এসেছিলেন, মানুষটি চেনেননি। মহারাজদের কাছ থেকে সব যখন শুনলেন, আশ্চর্যের—পরদিন সোজা নিজের গ্রামের বাড়ি চলে গেলেন।
আর কখনও গ্রাসাচ্ছদনের চেষ্টা করেননি। মহারাজদের শত অনুরোধেও না। তাঁর পরিবারের দেখভাল করার লোকের অভাব হয়নি।
আর এই মানুষটি? সকাল থেকে সারাদিন চুপ করে নদীর ধারে বসে বসে কী ভাবতেন, তিনিই জানেন। জীবনযাপন অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য কোনও চিন্তা বা উদ্বেগ আর কখনও দেখা যায়নি তাঁর।
বাসন মাজতে মাজতে ব্রহ্মজ্ঞান হয়। স্বামীজি বলেছেন। তাহলে মিস্ত্রির কাজ করতে করতে এই মানুষটিও হয়তো সেই ব্রহ্মজ্ঞানীই হলেন। কে জানে!
No comments