সামান্যতম ঢিলে দিলেই ঘাড়ে চেপে বসবে। এদের কড়া ট্যাকেল করা ছাড়া নাকি গোত্রান্তর নেই - Spirituality Religion

Header Ads

সামান্যতম ঢিলে দিলেই ঘাড়ে চেপে বসবে। এদের কড়া ট্যাকেল করা ছাড়া নাকি গোত্রান্তর নেই

কলেজ ছাত্রদের এক্সকার্সান দিঘায়। 

স্যার বার বার সতর্ক করে দিয়েছেন, হাড়ে হারামজাদা পাজির দল সব। সামান্যতম ঢিলে দিলেই ঘাড়ে চেপে বসবে। এদের কড়া ট্যাকেল করা ছাড়া নাকি গোত্রান্তর নেই। সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম বাস ছাড়তেই। পিছন থেকে বিড়ির গন্ধ তো আসছিলোই, হাল্কা করে গাঁজার গন্ধও পেলাম যেন। সারজমিন তদন্ত করে বুঝলাম বাসের জানলার কাঁচ সরিয়ে বাইরে ধোঁয়া ছাড়া হচ্ছে। পুরনো অভিজ্ঞতা, স্যারেদের নাক ফাঁকি দেওয়া গেলেও আমার নাকে ধরা পড়েছে ঠিকই। কখনো কখনো সব বুঝেও চেপে যেতে হয়, আরে বাবা আমরাও তো কলেজে পড়তাম, নাকি?  
BANERSHAR SHIVA LINGA
BANERSHAR SHIVA LINGA
কোলাঘাটে বাস থামতেই তাড়াহুড়ো করে টিফিনের ব্যবস্থা। ছেলেদের খেতে বসাতেই হাল্কা মদের গন্ধ পেলাম যেন। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এটা আগে ছিল না, অথবা বাসে কেউ গ্লাস বোতল খুলে বসে নি। প্রবল কৌতূহল, কেসটা কি? আমাদের সময়ে একবার রাম বা হুইস্কি লজেন্স বেরিয়ে ছিল, সেটা খাচ্ছে নাকি? একটা ছেলে যেন হাল্কা টাল খেল, স্যারেরা খেয়াল না করলেও আমার নজর এড়ায় নি ঘটনাটা। ধুর, ওই লজেন্সে শুধু গন্ধ হয়, নেশা তো হয় না।
বাস ছাড়তেই পিছনের সিটে গিয়ে বসলাম। বিড়ি খাওয়া বন্ধ, কিন্তু কয়েকটা মার্কামারা ছেলে মাঝেমাঝেই জল খাচ্ছে। ও বাবা, রেডিমিক্স তাহলে? একজনের কাছে জলের বোতল চাইতেই নির্দ্বিধায় এগিয়ে দিল। একঢোক খেয়েই বুঝলাম স্রেফ জল, অন্য কিছুই মেশানো নেই তাতে। অথচ হাল্কা একটা গন্ধ ভেসে চলেছে বাতাসে। প্রবল অস্বস্তি। না, মদ খাচ্ছে বলে নয়; ওই বয়সে আমিও গুড বয় ছিলাম না। অস্বস্তি হচ্ছে কেসটা ধরতে পারছি না বলে। আমার চোখকে ফাঁকি, রীতিমত ইজ্জতের ব্যাপার। আর ছেলেরাও মজা পেয়ে গেছে যেন। কিছুতেই সামনে যেতে দেবে না, ওদের সাথেই বসতে হবে। রীতিমত চ্যালেঞ্জ।
দুদিন ভালই কাটল, এবার ফেরার পালা। ট্যুর সফল, ছেলেদের সাথেও বেশ একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেছে। ফেরার সময় প্রায় জোর করে পিছনের সিটে বসাল আমাকে। আড্ডা গল্প গান সবই চলছে। স্যারেরাও নিশ্চিন্ত, সব ভালোয় ভালোয় মেটার জন্য। ফের নাকে ভেসে এল সেই হাল্কা মদের গন্ধ। সামান্য উশখুশ, এদিক ওদিক তাকাচ্ছি ব্যাপারটা বোঝার জন্য। "স্যার, কিসমিস খাবেন?" সব থেকে বদের ধাড়িটার মুখ থেকে ভেসে এল কথাটা। হাত এগিয়ে দিতেই এক মুঠো কিসমিস পড়ল হাতে। অন্যমনস্ক ভাবে একটা কিসমিস মুখে দিতেই তীব্র ঝাঁজ। সাথেসাথে একটা জলের বোতল এগিয়ে এল আমার দিকে। এক ঢোক জল খেয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ফোলা টইটুম্বুর সব কিসমিস। নিমেষে বুঝলাম ব্যাপারটা। উফ, কি ইনোভেশন। শুকনো কিসমিসকে র মদে চুবিয়ে ফোলানো হয়েছে। ফলে চাটের প্রয়োজনও নেই। পকেট থেকে একটা দুটো মুখে ফেলে একঢোক জলেই কম্ম শেষ। ছেলেদের সম্মিলিত প্রবল হাসিতে স্যারেরাও চমকে উঠে পিছনে তাকাচ্ছেন তখন। মনেমনে পেন্নাম ঠুকলাম, এদের উন্নতি আটকায় কে??

No comments

Powered by Blogger.