প্রাচীন সাধুদের কথা-- স্বামী গম্ভীরানন্দজী মহারাজ
১৯৭২ সালের গ্রীষ্মে স্বামী গম্ভীরানন্দজী মহারাজ চোখের চিকিৎসার জন্য বস্টনের হাসপাতালে ভর্তি হন.
প্রাচীন সাধুদের কথা-- স্বামী গম্ভীরানন্দজী মহারাজ |
বস্টন থেকে আমেরিকার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে মহারাজ হলিউডে আসেন কালীপুজোর সময়.
একদিন রাতে হলিউডে খাওয়ার পর গল্প করলেন.
তারপর মঠ মিশনের নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা হলো. আমি বললাম,
" আমার নিয়মকানুন বেশি পছন্দ হয় না. ধর্মকে নিয়মের দ্বারা বাঁধলে stagnation এসে যাবে. ধর্ম তখন স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পারবে না.Human heart-কে নিয়মের দ্বারা বাঁধা যায় না, কারণ মানুষ মেশিন নয়.তাছাড়া প্রভবানন্দজীর কাছে শুনেছি,কৃষ্ণলাল মহারাজ ( স্বামী ধীরানন্দ ) একবার রাজা মহারাজকে সাধু-ব্রহ্মচারীদের জন্য কিছু নিয়ম করতে বলেন.
গম্ভীরানন্দজী শুনে বললেন,
" দেখ , নিয়ম ছাড়া কোনো সঙ্ঘ function করতে পারে না. স্বামীজী বলেছেন যে, নিয়মের ভেতর দিয়ে নিয়মের পারে যেতে হবে."
তারপর হাসতে হাসতে মহারাজ বললেন,
" একটা গল্প শোনো ঃ একদিন খুব বৃষ্টি পড়ছিল. এক কাবুলিওয়ালা একটি শিবমন্দিরে ঢুকে শিবের মাথায় জুতোসহ পা-দুটি রেখে ঘুমিয়ে পড়ল. এমনসময় একজন ব্রাহ্মণ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঐ মন্দিরে ঢুকলো. অসাবধানতাবশত তার পা শিবের বিগ্রহে লাগলো. সে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে শিবকে প্রণাম করলো. শিব কিন্তু অমনি জীবন্ত রূপ ধরে ত্রিশূলসহ ব্রাহ্মণকে শাসন করতেে উদ্যত হলেন. ব্রাহ্মণ কাতরস্বরে বললো, ' প্রভু, এ তোমার কেমন বিচার ? আকষ্মিকভাবে আমার পা তোমার গায়ে লেগেছে, তার জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে প্রণাম করেছি. কিন্তু ঐ বোটকা গন্ধযুক্ত কাবুলিওয়ালা তোমার মাথায় বুটজুতো-পরা পা রেখে ঘুমোচ্ছে, তুমি তো তাকে শাসন করছো না !' শিব বললেন, ' দেখ, কাবুলিওয়ালা আমাকে জানেও না, মানেও না. তাই আমি ওর বিরুদ্ধে কোনো action নিতে পারি না. কিন্তু তুমি তো আমার মহত্ত্ব জান ও আমাকে মান, তাই তোমাকে শাসন করতে পারি.' যারা ঠাকুরের সঙ্ঘের গুরুত্ব ও মহত্ব জানে এবং ঠাকুরের আদর্শ মানে, তাদের ঠিক পথে চলবার জন্যই নিয়মকানুন. যারা অহঙ্কারী সাধু, নিয়ম মানতে চায় না, তারা সব ঐ বোটকা গন্ধযুক্ত কাবুলিওয়ালার মতো."
এই প্রসঙ্গে তিনি দু-একজন সাধুর নামও করেছিলেন.
( প্রাচীন সাধুদের কথা---- স্বামী চেতনানন্দ )
Read More
No comments