প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বীরেশ্বরানন্দ
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বীরেশ্বরানন্দ
Sri
Ramakrishna
|
আমার
আমেরিকা যাত্রার দিন ছিল ১
জুন। পরিষ্কার মনে আছে,
আমি
প্রভু মহারাজের কাছে বিদায়
নিতে গিয়ে বললাম,
“মহারাজ,
আমি
কোথায় যাচ্ছি জানি না। বিদেশে
কখনাে যাইনি এবং আমার অভিজ্ঞতাও
বেশি নেই। আপনি আমায় আশীর্বাদ
করুন।” তিনি আমাকে অভয় দিয়ে
বললেন,
“ভয়
কোরাে
না। তুমি হলিউডে ঠাকুরের কাজ
করতে যাচ্ছ। ঠাকুর তােমায়
দেখবেন।” আমাকে কয়েকটা মিষ্টি
ও একটা আম দিলেন।
১৯৭৭
সালে জুলাই মাসে হলিউড থেকে
প্রথম মঠে এলাম। প্রভু মহারাজকে
প্রণাম করতেই তিনি হেসে সেবককে
বললেন,
“ওর
মাথায় গঙ্গাজল ছিটিয়ে দে।
একটা চেয়ার দে।” আমি মেঝেতে
তাঁর পায়ের কাছে বসে বললাম,
“মহারাজ,
আপনার
সামনে চেয়ারে বসতে লজ্জা
করে।” তখন তিনি হেসে বললেন,
“তাহলে
ওকে একটা টেবিল দে।” তারপর
তাঁর সঙ্গে পাশ্চাত্যের
কাজকর্ম সম্বন্ধে অনেক কথা
হয়।
Sri
Ramakrishna
|
১৯৭৮
সালে আমাকে সেন্ট লুইসে
ট্রান্সফার করা হয় সৎপ্রকাশানন্দজীকে
সাহায্য করবার জন্য। তিনি
১৯৭৯ সালে দেহত্যাগ করেন।
তারপর প্রভু মহারাজ আমাকে
দীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেন
এবং কী মন্ত্র দিতে হবে সেসব
লিখে পাঠান।
১৯৮২
সালে আবার যখন মঠে ফিরলাম,
তখন
তাঁর সঙ্গে অনেক কথা হয়। সব
মনে নেই তবে শ্রীশ্রীমায়ের
কাছে তাঁর দীক্ষার কাহিনি
বলেছিলেন। তিনি,
হরিশ
মহারাজ (সৎপ্রকাশানন্দজী),
শরদিন্দু
মহারাজ (বিশ্বনাথনিন্দজী)
প্রমুখ
হাওড়া থেকে মার্টিন লাইনের
ট্রেনে করে চাঁপাডাঙা যান।
তারপর হাঁটতে শুরু করেন। পথে
হরিশ মহারাজের দারুণ ডিসেন্ট্রি
হয়। তাঁর জন্য একটা গরুর
গাড়ি ভাড়া করা হয়। তাঁর
ব্যাধি কিছুতেই উপশম না হওয়ায়
প্রভু মহারাজ বলেন যে,
এভাবে
তাঁকে জয়রামবাটীতে নিয়ে
যাওয়া ঠিক ঠিক
হবে না
Sri
Ramakrishna
|
মা
বড়ই দুশ্চিন্তার মধ্যে
পড়বেন। তাঁকে অসুবিধার মধ্যে
ফেলা ঠিক হবে না। তারপর ঠিক
হলাে ঐ গরুর গাড়িতে হরিশ
মহারাজ আবার চাঁপাডাঙা ফিরে
যাবেন এবং শরদিন্দু মহারাজও
সঙ্গে ফিরবেন। প্রভু মহারাজ
বলেছিলেন,
জয়রামবাটী
যাওয়ার সময় এক রাত তিনি
দ্বারকেশ্বর নদীর বালুচরে
কাটান। তারপর কামারপুকুর
হয়ে জয়রামবাটী যান এবং
মায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন।
বেলুড় মঠে
থাকাকালের কতকগুলি ঘটনা মনে
পড়ছে। মহারাজ তখন জেনারেল
সেক্রেটারি। পুরানাে মিশন
অফিসের ওপরের ঘরে আমি মহারাজের
সঙ্গে কথা বলছি। এমনসময় মঠের
নাপিত রামমুরত ঘরে ঢুকে মহারাজের
Sri
Ramakrishna
|
পায়ে
সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে বলল,
“প্রভু,
মেরে
অবগুণ চিত না ধরাে।” মহারাজ
হাে-হাে
করে হেসে ফেললেন। মহারাজের
মাথা কামানাের দিন ছিল,
কিন্তু
রামমুরত তা ভুলে যায়। তাই
সন্ধ্যার সময় ঐ কথা বলে ক্ষমা
চাইল।
প্রভু
মহারাজ তখন প্রেসিডেন্ট।
আমরা সব প্রণাম করতে গিয়েছি।
এমন সময় স্বামী গুণাতীতানন্দজী
উপস্থিত। তিনি ছিলেন খুব
পণ্ডিত,
কিন্তু
একটু মাথার গণ্ডগােল ছিল।
তিনি এসে প্রভু মহারাজকে
বললেন,
“প্রভু,
তুমি
প্রেসিডেন্ট হয়েছ। সব তােমার
কাছে আসছে। আমি ডাবগুলাে
নিচ্ছি।” মহারাজ হেসে বললেন,
“শুধু
ডাব কেন,
তােমার
যা যা দরকার সব নিয়ে যাও।”
No comments