প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বীরেশ্বরানন্দ (১৮৯২-১৯৮৫) - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বীরেশ্বরানন্দ (১৮৯২-১৯৮৫)

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বীরেশ্বরানন্দ (১৮৯২-১৯৮৫)

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

অনেকে শরীরের গঠন দেখে মানুষের চরিত্র ও গুণের মূল্যায়ন করে। কিন্তু এটা সবসময় ঠিক হয় না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লিঙ্কনের একটা ঘটনা মনে পড়ছে। তিনি ও তাঁর বিরােধী নেতা ডগলাসের মধ্যে ভােটের আগে এক ডিবেট (বিতর্ক) হয়। ডগলাস বলেন, “বন্ধুগণ, লিঙ্কন দু-মুখো লােক (double-faced man)। ওকে আপনারা ভােট দেবেন না।” লিঙ্কন উত্তরে বলেন, “বন্ধুগণ, আমার যদি আরেকটা অতিরিক্ত মুখ (spare face) থাকত, তাহলে কি আমি এই মুখটা বহন করতাম?” তিনি বলতে চাইছিলেন। যে, তিনি দেখতে মােটেই সুশ্রী নন এবং তাঁর যদি আরেকটা (এক্সট্রা) মুখ থাকত, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই এই মুখটা পালটে ফেলতেন। এ-যাবৎ আমেরিকায় যত প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, লিঙ্কনের মতাে অত শ্রদ্ধা ও ভালবাসা কেউ পাননি।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


স্বামী বীরেশ্বরানন্দজীর (প্রভু মহারাজ) শরীরটা ছিল ছােট; এককথায় তিনি মােটেই দর্শনধারী ছিলেন না। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ এবং বুদ্ধি ছিল প্রখর। আমি তাঁকে ১৯৬০ থেকে ১৯৮৫ সাল অবধি দেখেছি, তবে খুব ঘনিষ্ঠভাবে তাঁর সান্নিধ্যে আসার সুযােগ পাইনি। তাই আমার স্মৃতিভাণ্ডারে মহারাজ সম্পর্কীয় ঘটনা খুব বেশি নেই, তবুও যা আছে তা-ই লিখছি।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


আমি যখন মঠে যােগদান করি তখন বীরেশ্বরানন্দজী ছিলেন মঠমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি। তিনি গিরিশ মেমােরিয়ালের ওপরের একটা ছােট ঘরে থাকতেন। ১৯৬১ সালে স্বামী শঙ্করানন্দজীর কাছে দীক্ষার পর আমি বীরেশ্বরানন্দজীকে প্রণাম করবার কালে সাধুজীবন সম্বন্ধে তাঁকে কিছু বলতে অনুরােধ করলাম। তিনি আমাকে বলেন, “দেখ, সাধুজীবন ঠিক ঠিক গঠন করতে হলে অনেক প্রশ্ন ও উপদেশের দরকার নেই। তুমি ধর্মপ্রসঙ্গে স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও স্বামী তুরীয়ানন্দের পত্র—এই বই দু-খানি পড়লে সব জানতে পারবে।” তাঁর কথামতাে ঐ বই দু-খানি আমার অধ্যাত্মজীবনের সঙ্গী করি। অনেক সাধু উপদেশ দেন, কিন্তু রাজা মহারাজ




Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

নিজস্ব অনুভূতি থেকে যা বলেছেন তা হৃদয়ে গেঁথে যায়। আর অধ্যাত্মজীবনে মনটা যখন ভাটার টানে চলে-মিস্টিকদের ভাষায় ‘Dark night of the soul'—তখন তুরীয়ানন্দের পত্র ভাটা সরিয়ে জোয়ার এনে দেয়। পরবর্তিকালে আমি ঐ বই দু-খানি বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করি—A guide to spiritual life 47 Spiritual treasures.

১৯৬২ সালে স্বামী মাধবানন্দজী প্রেসিডেন্ট হলে বীরেশ্বরানন্দজী জেনারেল সেক্রেটারি হন। আমি তখন অদ্বৈত আশ্রমের ব্রহ্মচারী। একদিন তিনি আমাকে একটা দুধের পাত্র কিনতে বলেন যাতে দেড় পােয়া দুধ ধরে।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


আমি চাঁদনি চক থেকে দেড় পােয়র পাত্র না পেয়ে আধ সেরের একটি কাঁসার ঢাকনি সহ পাত্র নিয়ে মঠে তাঁর কাছে গেলাম। তিনি বললেন, “না, এ পাত্র একটু বড়। তুমি দেড় পােয়া মাপের পাত্র কিনবে।” আবার কলকাতায় চায়না বাজার, চাঁদনি চক ঘুরে ঐ সাইজের পাত্র না পেয়ে দু-তিন সাইজের পাত্র নিয়ে মঠে গেলাম। আমি বললাম, “এসব সাইজ মাত্র আছে। আপনার কথামতাে সাইজ বাজারে নেই।” তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঐ আধ সেরের পাত্রটি নিলেন। পরে জানলাম যে, তিনি ঐ পাত্র মঠের রান্নাঘরে পাঠিয়ে দুধ আনান। মঠের সাধুরা যতটা দুধ পায়, তিনি ঠিক ততটা চাইছিলেন। তিনি জেনারেল সেক্রেটারি জেনে মঠের ভাণ্ডারি তাঁর পাত্র ভর্তি করে দুধ দিলে অন্যান্য সাধুর অসুবিধা হবে। উপরন্তু তখন মঠে পর্যাপ্ত দুধ ছিল না। ঘটনাটি তুচ্ছ, কিন্তু এটা অন্যান্য সাধুর প্রতি তাঁর ভালবাসা ও মহানুভবতার নিদর্শন।

No comments

Powered by Blogger.