প্রাচীন সাধুদের কথা
আমি
১৯৫০ সাল থেকে মায়ের বাড়ীতে
যাতায়াত করতাম এবং সেখানকার
সব সাধুর সঙ্গে পরিচয় ছিল।
স্বামী অদ্বয়ানন্দের কাছে
আমি নিম্নলিখিত ঘটনাটি শুনেছিলাম :-
একবার
মহারাজ শ্রীশ্রীমাকে বিজয়ার
প্রণাম করতে মায়ের বাড়ী
আসেন এবং মাকে প্রণাম করে
স্বামী আত্মবােধানন্দের ঘরে
বসেন। সব সাধু তখন মহারাজকে
প্রণাম করেন। তিনি যখন বেলুড়
মঠে ফেরার জন্য পা বাড়িয়েছেন
তখন শ্ৰদ্ধানন্দজী (উদ্বোধন
পত্রিকার তদানীন্তন সম্পাদক)
তাঁকে
প্রণাম করেন। মহারাজ বিরক্ত
হয়ে বলেন,
“এভাবে
প্রণাম করতে নেই। প্রণাম করা
ও প্রণাম নেওয়া তুচ্ছ ব্যাপার
নয়। প্রণামকারীর ভেতর
আত্মসমর্পণের ভাব চাই। কেউ
আমাকে প্রণাম করলে আমি ঠাকুরের
কাছে তার মঙ্গল প্রার্থনা
করি।”
১৯৫৯ সালে শিকড়াকুলীন গ্রামে স্বামী ব্রহ্মানন্দের জন্মস্থানে মহারায় মন্দির উদ্বোধন করেন এবং বেদিতে ঠাকুরের ছবি স্থাপন করেন। আমি ঐদিন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সারাদিন খুব উৎসব হয়েছিল। সে অপূর্ব ভাব ও পরিবেশ ভুলবার নয়।
মহারাজের শরীর সুস্থ না থাকায় আমার দীক্ষা পেতে দেরি হয়। অবশেষে ১৯৬১ সালের ৩১ মার্চ দীক্ষা হয়। স্বামী বােধাত্মানন্দজী ছিলেন আমার উপদেষ্টা। তিনি বলেছিলেন, “তােমার দীক্ষার ঘটনাটি কথামৃত-এর পদ্ধতিতে লিখে রেখাে, যাতে ভবিষ্যতে এই মূল্যবান স্মৃতিটি হারিয়ে না যায়।” আমি তা লিখে রাখি এবং সময়ে সময়ে পড়ি। আমার এই ডায়েরি দৃষ্টে জানা যায় মহারাজ কীভাবে দীক্ষা দিতেন।
দীক্ষাপ্রার্থীরা একে একে মহারাজের ঘরে প্রবেশ করে অর্ধবৃত্তাকারে অর্ঘ্য নিয়ে মহারাজের সম্মুখে মেঝেতে উপবিষ্ট হলাে। মহারাজ পূর্বাস্য হয়ে তাঁর বিছানার ওপর উপবিষ্ট, সামনে একটা ছােট টেবিল এবং তার ওপর একখানি তামার টাট, কোশাকুশি ও পুষ্পপাত্র। মহারাজ তাঁর আকর্ণবিস্তৃত চক্ষু দুটি দিয়ে আমাদেরকে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করলেন। তারপর শুরু হলাে পূজা। তিনি আমাদের সকলকে সেবক-প্রদত্ত গঙ্গাজল দিয়ে আচমন করতে নির্দেশ দিলেন এবং তারপর নিজে আচমন করে বেলপাতা, দূর্বা, ফুল, চন্দন ও আতপ চাল দিয়ে কয়েক বার অর্ঘ্য নিবেদন করলেন। ফুলের মধ্যে ছিল নাগলিঙ্গম, গুলচী ও জবা। ডানহাতে ফুল নিয়ে বামহাতে রেখে কূর্মমুদ্রায় ধ্যান করে ফুলগুলি তাম্রপাত্রে রাখলেন। আমরা তাঁর ধ্যানস্থ মূর্তি দেখতে লাগলাম। তারপর তিনি মালায় জপ করতে লাগলেন। মুখটা তখন একটু নড়ছিল। এরূপ ৫/৭ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর কিছু সময় তন্ময় হয়ে রইলেন এবং বলতে শুরু করলেন, “এ জগতে একমাত্র ঈশ্বরই সত্য। মানবজীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরলাভ, আর ঈশ্বরলাভের উপায়স্বরূপই হলাে এই দীক্ষা। দীক্ষা নিলে শরীর ও মন শুদ্ধ ও পবিত্র হয়। দীক্ষা নেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রীভগবানে নিজেকে সমর্পণ করা। সাধনভজন করতে হলে এবং ভগবানের দিকে অগ্রসর হতে হলে একটা কোনােরূপ অবলম্বন চাই। এর জন্যই গুরুর প্রয়ােজন।”
No comments