প্রাচীন সাধুদের কথা
প্রাচীন সাধুদের কথা স্বামী শঙ্করানন্দ (১৮৮০-১৯৬২)
|
২৩/৩/১৯৬১
স্বামী
শঙ্করানন্দ মহারাজ
(জনৈক
ব্রহ্মচারীর দীক্ষা প্রসঙ্গে)—আমি
কথামৃত পড়তে বলি। নিত্য
কথামৃত পড়লে ঠাকুর যে
সর্বদেবদেবীস্বরূপ এই ভাব
আসবে। ঠাকুরই সব। তাঁকে ‘বাবা’
বল,
‘মা’
বল—যা ইচ্ছা।...
একত্বের
জ্ঞানই জ্ঞান,
বহুত্বের
জ্ঞান অজ্ঞান।
Sri
Ramakrishna
|
প্রশ্ন—আপনি
সাধুজীবনের প্রেরণা প্রথম
কোথা থেকে পেলেন?
মহারাজ(স্বামী
শঙ্করানন্দ)—প্রথমে
পাই ‘কৌপীনবন্তঃ খলু ভাগ্যবন্তঃ'—এই
কথা থেকে। তারপর গুপ্ত মহারাজ
(স্বামী
সদানন্দ)
রাজা
মহারাজের কাছে নিয়ে আসেন।
তখন মহারাজ মঠবাড়ির নিচে
গঙ্গার দিকের বেঞ্চে বসেছিলেন।
আমাকে দেখেই বললেন,
‘দেখি
তাের হাতটা।'
একথা
বলে ওজন দেখলেন এবং বললেন,
‘হবে,
হবে—তাের
হবে।
Sri
Ramakrishna
|
সেই
সময় স্বামীজী ওপর থেকে নেমে
জ্ঞান মহারাজের ঘরে একটা
বেঞ্চে গিয়ে বসলেন। তখন ঐ
ঘরটা লাইব্রেরি ছিল। তারপর
গুপ্ত মহারাজ(স্বামী
সদানন্দ)
স্বামীজীর
পা টিপতে লাগলেন।
প্রশ্ন-মহারাজ,
আপনি
তাে আমায় একদিন বলেছিলেন
যে,
ডাক্তারি
পড়তে পড়তে সাধু হয়ে যান।
কীভাবে?
মহারাজ(স্বামী
শঙ্করানন্দ)—তখন
গঙ্গায় স্নান করতাম। একদিন
স্নান করতে গিয়ে মঠে চলে
এলাম। বাড়ির লােকেরা প্রথমে
ভেবেছিল বােধ হয় গঙ্গায়
ডুবেই গিয়েছে।
প্রশ্ন—আজকাল
কাজকর্মে কখনাে কখনাে
সন্ধ্যাবেলায় যতটা জপধ্যান
করা উচিত ততটা করতে পারি না,
আর
সন্ধ্যাবেলার নিষ্ঠাও থাকে
না। এতে মনে কষ্ট হয়।
Sri
Ramakrishna
|
মহারাজ(স্বামী
শঙ্করানন্দ)—কাজটা
সাধনজ্ঞানে করতে হবে। যখন
কাজ থাকবে না তখন যেমন নিয়মমতাে
করিস জপধ্যান করবি। আমাদের
monogram-এ
রয়েছেজ্ঞান,
কর্ম,
ভক্তি,
যােগ।
এর সমন্বয় করে আমাদের জীবন
গড়তে হবে।
প্রশ্ন—দিনে
বারুদঠাসা খাওয়া মানে কী?
মহারাজ(স্বামী
শঙ্করানন্দ)—মানে
তিন ভাগ পেট ভর্তি করা। এক ভাগ
হাওয়া চলাচলের জন্য সবসময়েই
ফাঁকা রাখতে হবে।
১/৪/১৯৬১
দেহবুদ্ধি
নাশ করে গঙ্গালাভ-প্রসঙ্গে
মহারাজ ‘গঙ্গাষ্টকম’-এর
তৃতীয় শ্লোক উদ্ধৃত করে বলেন,
“
‘কাকৈনিষ্কৃষিতং
শ্বভিঃ কবলিতং গােমায়ভিষ্ঠিতং।
স্রোতােভিশ্চলিতং
তটামুলিতং বীচিভিরান্দোলিত ।।
মৃত্যুর
পর স্বর্গে গমন করে আমি কবে
নিজ শরীরকে গঙ্গাজলে কাকের
দ্বারা ছিন্ন,
কুক্করের
দ্বারা ভক্ষিত,
শৃগালের
দ্বারা বিধ্বস্ত,
স্রোতসমূহের
দ্বারা প্রবাহিত,
তটবারির
দ্বারা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ও
তরঙ্গরাজির দ্বারা আন্দোলিত
হতে দেখব?
“এর
মানে এই দেহবুদ্ধি ত্যাগ করা।
দেহটা কিছুই না—দেহের ভিতর
যিনি আছেন তাঁর সন্ধান করা।
“গঙ্গাস্তোত্রের
আরেক জায়গায় আছে-
‘মাতৰ্গঙ্গে
ত্বয়ি যাে ভক্তঃ,
কিল
তং দুষ্টুং ন যমঃ শক্তঃ।।
'
মা
গঙ্গে,
যে
তােমার ভক্ত তাকে যম নিশ্চয়ই
দেখতে অসমর্থ অর্থাৎ সে অমর।
“এটা
কেন সম্ভব?
কারণ
ঠাকুর যেমন বলতেন—গঙ্গাবারি
ব্রহ্মবারি। আর বৃন্দাবনের
রজঃকে বলতেন—ব্রহ্মরজঃ। আর
জগন্নাথের মহাপ্রসাদ
ব্রহ্ম-অন্ন—অন্ন-ব্রহ্ম।
No comments