প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী মাধবানন্দজী
প্রাচীন সাধুদের কথা স্বামী মাধবানন্দ (১৮৮৮-১৯৬৫)
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী
মাধবানন্দ (১৮৮৮-১৯৬৫)
নিজেকে
লােকচক্ষুর অন্তরালে রাখাই
যাঁর প্রকৃতি ছিল,
এমন
একজন সম্বন্ধে কিছু লেখা সহজ
নয়। যােগিপুরুষের অন্যতম
লক্ষণই হলাে এই। মরমি সাধকেরা
জগতে অজ্ঞাত থাকতেই ভালবাসেন
যাতে তাঁদের ঈশ্বরীয়সান্নিধ্য
বিঘ্নিত না হয়। তবুও ধর্ম,
দর্শন
এবং শাস্ত্র-বিষয়ক
সমস্ত গ্রন্থাগার অপেক্ষা
তাঁদের জীবন ঈশ্বর সম্পর্কে
আমাদের অধিক অবহিত করে। তাঁদের
শিক্ষাদান অল্প কয়েকটি কথায়
হতে পারে অথবা নীরবতার মাধ্যমেও
হতে পারে,
কারণ
তাঁরা ধর্মীয় বিষয়ের আলােচক
নন। তবুও দেখা গিয়েছে,
একজন
মহাপ্রাণের উচ্চারিত কয়েকটি
মাত্র কথা কোনাে মানুষের
জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে
দিতে পারে।
Sri
Ramakrishna
|
১৯৫০
সালে আমি প্রথম রামকৃষ্ণ
সঙ্ঘের সংস্পর্শে আসি এবং
তখন থেকেই নিয়মিতভাবে বেলুড়
মঠ,
দক্ষিণেশ্বর
এবং মায়ের বাড়ীতে যাতায়াত
করতাম। অবশেষে,
১৯৫৮
সালের ডিসেম্বরে অদ্বৈত আশ্রমে
যােগদান করলাম। সেসময় থেকেই
স্বামী মাধবানন্দজী মহারাজকে
দেখার এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলার
বহু সুযােগ আমি পেয়েছিলাম।
তিনি তখন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের
সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর
সঙ্গে সেসব কথােপকথনের কিছু
কিছু একান্তই ব্যক্তিগত এবং
তা প্রকাশ করার মতাে নয়। তবু,
মহারাজের
মহানুভবতার পরিচায়ক কিছু
ছােট ঘটনা আমার স্মৃতি থেকে
এবং দিনলিপি থেকে সংগ্রহ করে
আপনাদের সঙ্গে একযােগে মনন
করতে ইচ্ছা হচ্ছে।
১৯৫৯
সালে অদ্বৈত আশ্রম কলকাতার
৪ ওয়েলিংটন লেনে অবস্থিত
ছিল। একদিন স্বামী মাধবানন্দ
চক্ষু পরীক্ষার জন্য ডাঃ নীহার
মুন্সির কাছে গিয়েছিলেন।
অপর একজন প্রাচীন মহারাজ তাঁর
সঙ্গে ছিলেন। বেলুড় মঠে ফিরে
যাওয়ার পথে তাঁরা অদ্বৈত
আশ্রমে এসেছিলেন তখন গ্রীষ্মকাল।
Sri
Ramakrishna
|
আমরা
তাড়াতাড়ি তাঁদের জলযােগের
জন্য একজোড়া ডাব এবং কিছু
মিষ্টি নিয়ে এলাম। দুর্ভাগ্যবশত
ডাবগুলির শাঁস ছিল খুব পুরু,
যার
অর্থ জল অত্যন্ত বিস্বাদ।
স্বামী মাধবানন্দজী কোনাে
কিছু না বলেই ডাবের জল খেয়ে
নিলেন। কিন্তু অপর মহারাজ
সঙ্গে সঙ্গে তা ফিরিয়ে দিলেন।
আমরা অপ্রস্তুত হয়ে তখনই
তাঁদের জন্য অন্য ভাল ডাব এনে
দিতে চাইলাম। কিন্তু স্বামী
মাধবানন্দজী আমাদের এই বলে
নিষেধ করলেন যে,
“খুঁতখুঁতে
স্বভাব সন্ন্যাস-জীবনের
পক্ষে ভাল নয়।” গীতার বাণী
তিনি জীবনে অনুশীলন। করেছিলেন—বিনা
প্রয়াসে যা তােমার কাছে আসে
তাতেই সন্তুষ্ট থেকো।
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী
মাধবানন্দজী ১৯৬১ সালে রামকৃষ্ণ
মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক
পদের দায়িত্বভার ত্যাগ করার
পূর্বে ছুটি কাটানাের জন্য
কালিম্পং গিয়েছিলেন। বেলুড়
মঠ থেকে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব
আমাকে বললেন ওষুধের কয়েকটা
ক্যাপসুল সাধারণ ডাকে মহারাজের
কাছে কালিম্পং-এ
পাঠিয়ে দিতে। মহারাজ ছিলেন
অত্যন্ত মিতব্যয়ী এবং তাঁর
ব্যক্তিগত প্রয়ােজনে অতিরিক্ত
অর্থব্যয় হােক তা তিনি চাইতেন
না। কোনাে বিশেষ খাদ্য অথবা
ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও তিনি
অনিচ্ছুক ছিলেন। সেজন্য আমি
প্রথমে খামের ওপরে ঠিকানা
লিখলাম,
তারপর
ক্যাপসুলগুলাে পাতলা প্লাস্টিকের
একটা মােড়কে ভরে খামের তলার
দিকে এমনভাবে রাখলাম যাতে
সেগুলাে এদিক-ওদিক
নড়াচড়া না করতে পারে এবং
ডাক বিভাগের লােক ডাকটিকিটে
ছাপ দেওয়ার সময় সেগুলােতে
কোনাে চাপ দিতে না পারে। আমি
সেইসঙ্গে একটা চিঠি লিখে সেটা
ওষুধের সঙ্গে দিয়ে দিলাম।
ছুটি শেষ হওয়ার পরে মহারাজের
সঙ্গে বেলুড় মঠে দেখা করলাম।
তিনি আমাকে বললেন,
কোনাে
চাপ দিতে না পারে। আমি সেইসঙ্গে
একটা চিঠি লিখে সেটা ওষুধের
সঙ্গে দিয়ে দিলাম। ছুটি শেষ
হওয়ার পরে মহারাজের সঙ্গে
বেলুড় মঠে দেখা করলাম। তিনি
আমাকে বললেন,
“তুমি
খুব বুদ্ধিমান। আমি তােমার
খামটা খুলে চিঠি বের করে খামটাকে
বাজে কাগজের ঝুড়িতে ছুঁড়ে
ফেলে দিয়েছিলাম। তােমার
চিঠি পড়ার পরে বুঝতে পারলাম
খামের ভেতরে আমার ওষুধ আছে।
খামটিকে পুনরুদ্ধার করে দেখি
ক্যাপসুলগুলাে ঠিকমতােই আছে।
সবথেকে কম খরচে ওষুধগুলি
পাঠানাের জন্য তােমায় ধন্যবাদ।”
No comments