প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী



Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

মহারাজ রাজকোট আশ্রম থেকে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত-এর গুজরাটি অনুবাদ বের করবেন। আমাকে লিখলেন যে, মাস্টারমহাশয়ের পৌত্র অনিল গুপ্তের কাছ থেকে অনুবাদ প্রকাশের অনুমতি নিয়ে তা তাঁকে পাঠাতে। আমি অনিলবাবুকে বলতেই তিনি সানন্দে অনুমতি দেন। মহারাজ বিভিন্ন ভাষা জানতেন। গুজরাটি কথামৃত-এর তিনি অন্যতম সম্পাদক ছিলেন।
১৯৬৬ সালে তিনি রাজকোট থেকে বেলুড় মঠে আসেন মঠ ও মিশনের সহকারী সম্পাদক হয়ে। প্রতি রবিবার মঠের লাইব্রেরিতে কথামৃত-এর ক্লাস নিতেন বহু লােক আসত। ১৯৭০ সালে লক্ষ্ণৌতে বিবেকানন্দ পলিক্লিনিকএর উদ্বোধন হয়। ১৫২ জন সাধু সমবেত হন মহারাজ গিয়েছিলেন আমিও গিয়েছিলাম। শ্রীধরানন্দজী অপূর্ব ব্যবস্থা করেছিলেন। লক্ষ্ণৌ থেকে আমরা অনেকে মহারাজের সঙ্গে বাসে অযােধ্যা, নৈমিষারণ্য ও ব্রহ্মাবর্ত দেখতে যাই। মনে আছে—রামের জন্মস্থান দর্শন করে সরযূতে স্নান সেরে খেতে গিয়ে দেখি, রামভক্ত হনুমানরা বাসে ঢুকে আমাদের প্যাকেটের খাবার তছনছ করে দিয়েছে। দেখলাম, মহারাজ নির্বিকার। যেন কিছুই হয়নি কোনােমতে কিছু মুখে দিয়ে আমরা লক্ষ্ণৌ ফিরলাম। তারপর ফেরার পথে তাঁর সঙ্গে কাশীতে যাই। একদিন মহারাজকে বললাম, “চারটে পয়সা দেবেন, বাদামভাজা কিনব।” তিনি বললেন, “দিতে পারি, যদি ঐ পয়সা তুমি আবার ফেরত দাও।” আমি বললাম, “তাহলে পয়সা চাই না।” আমি জানতাম তিনি আমার সঙ্গে মজা করছেন। তারপর একগাল হেসে বললেন, “দেখ, পয়সার ব্যাপারে আমি খুব হুশিয়ার। একবার কোথায় যাচ্ছি, হিতানন্দ ও বীতশােকানন্দ পান খেতে চায়। আমি দশ টাকার একটা নােট দিলাম। ওরা পানওয়ালার কাছে ঐ নােট নিয়ে গেলে, সে বলল যে তার কাছে।

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

ভাঙানি নেই। হিতানন্দ তখন বলে, ‘ওরে, ও বিজয় মহারাজের টাকা। ও কি কখনাে ভাঙতে চায়! " নিজেকে নিয়ে কেউ যখন কৌতুক করে তখন। হিউমারের ক্লাইম্যাক্স হয়।
১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে কয়েক দিন ক্রমাগত বৃষ্টি হওয়ায় পূর্ব কলকাতা ভেসে যায়। আমরা অদ্বৈত আশ্রম থেকে রিলিফ করি। মহারাজ তখন মঠে রিলিফের ইনচার্জ। আমি চাল, ডাল, পাউরুটি কেনার টাকা চাইলে তিনি বলেছিলেন, “দেখ, হৃদয়বান হওয়া ভাল, কিন্তু পয়সাকড়ি হিসাব ঠিকমতাে রাখবে। জনগণের দান জনগণের সেবায় ব্যয় হবে। তুমি দেবে তােমার ভালবাসা ও নিঃস্বার্থপরতা।”
১৯৭১ সালে স্বামীজীর জন্মদিনে বেলুড় মঠে গম্ভীরানন্দজী আমাকে বললেন, “ওহে তােমাকে হলিউডে যেতে হবে। তৈরি হয়ে নাও।” আমি মােটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি বললাম, “Wrong selection. আরাে কত senior পণ্ডিত সাধু আছেন, তাঁদের পাঠান।” তিনি বললেন, “তুমি যদি যেতে না চাও, আমাকে জানাও। আমি মিটিং-এ তােমার মত পেশ করব।” আমি চুপ করে গেলাম। পূজনীয় নির্বাণানন্দজী আমাকে আগেই বলেছিলেন, “তুমি না কোরাে না।” যাহােক, ভূতেশানন্দজী ছিলেন আমার কাছে ‘স্নেহময়ী মাতা'। তিনি সাহস দিয়ে বললেন, “ঠাকুরের কাজ কর্তৃপক্ষ যেখানে পাঠান, সেখানেই যাবে। বন্দনানন্দের পরিবর্তে প্রভবানন্দজীকে আমাদের একজন সহকারী পাঠাতে হবে; তবে তােমার মতাে একটা গুড বয়কে হলিউডে পাঠাবার ইচ্ছা ছিল না।” আমি বললাম, “আমি আমেরিকায় গিয়ে রামকৃষ্ণ হিপি মুভমেন্ট শুরু করব, তখন আপনারা কী করবেন?” মহারাজ শুনে হাসতে লাগলেন। তাঁর সঙ্গে নির্ভয়ে স্বচ্ছন্দে কথা বলা যেত।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


অবশেষে বেলুড় মঠ থেকে যাত্রা করি ১৯৭১ সালের ২৭ মে। যা আগে মহারাজ বললেন, “দেখ, কাল সকালে তুমি আমার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট খাবে, আমি তােমাকে টেবিল ম্যানার্স শেখাব।” তখনকার মিশন অফিসে। ওপরতলায় (শ্রীমন্দিরের মুখােমুখি বাড়ির দোতলায়) ডানদিকের ঘরে মহারাজ থাকতেন। তাঁর সঙ্গে বসে ব্রেকফাস্ট খেলাম—দু-খানা টোস্ট, একটা সিঙ্গাপুরি কলা, একটা প্রসাদি সন্দেশ ও চা। বলেছিলেন, “মানুষকে ভালবেসে আপন করে নিলে বিদেশই স্বদেশ হয়।” আরাে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেছিলেন সব মনে নেই।

No comments

Powered by Blogger.