প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna
১৯৭১ সালের ১১ জুন হলিউড পৌঁছাই। মহারাজের সঙ্গে চিঠিপত্রের আদানপ্রদান ছিল। তারপর ১৯৭৭ সালে ভারতে ফিরি। মহারাজ তখন কাঁকুড়গাছিতে—মঠ-মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। দেশে থাকতে আমি বেশি ঘুরিনি—ছুটিও পাইনি আর পয়সাও ছিল না। অমরনাথ, কেদারনাথ, বদ্রীনাথ দর্শন করে নেপালে পশুপতিনাথ দর্শন করতে যাব। ১১ আগস্ট মহারাজকে বললাম, “আপনি নেপাল যাবেন?” তিনি বললেন, “তুমি যদি নিয়ে যাও তাহলে যাব।” আমি বললাম, “চলুন আমি আপনার সেবক হব।” মহারাজ বললেন, “না, তুমি সেবক হলে ভাল দেখাবে না। শিখরেশ (স্বামী ভুবনেশ্বরানন্দ) আমার সেবক।” আমি বললাম, “ঠিক আছে। আমি শিখরেশের ভাড়াও দেব।” তারপর পীযূষ মহারাজও (স্বামী পূজানন্দ) আমাদের সঙ্গে যান।
২৪ আগস্ট আমরা প্লেনে কাঠমান্ডু গেলাম এবং রত্ন নামে এক নেপালি ব্রহ্মচারীর পূর্বাশ্রমের বাড়িতে উঠলাম। তার বাবা ডাক্তার পৌদয়াল এয়ারপাের্টে আমাদের receive করেন। ঐদিন সন্ধ্যায় পশুপতিনাথের আরতি দেখলাম। ২৫ আগস্ট সকালে রত্নের বাবা ও জ্যাঠামশায় (নেপালের মহারাজার উচ্চপদস্থ কর্মচারী) ভাল গাড়ি করে গাইড-সহ আমাদের সব দ্রষ্টব্য স্থান দেখানাের ব্যবস্থা করেন—বুড়াে নীলকণ্ঠ, গুহ্যেশ্বরী মন্দির, স্বয়ম্ভুনাথ, মহাবােধি, ভরতপুরের দত্তাত্রেয়র মন্দির। সকালে প্রথমে পশুপতিনাথের মন্দিরে পূজা দিতে গেলাম। মহারাজের জন্য বিশেষভাবে দর্শনের ব্যবস্থা হলাে। তারপর শিবদর্শন করে তিনি মন্দিরের চত্বরে এক সিঁড়ির ওপর বসে চাদরে হাত ঢেকে জপ করতে লাগলেন। এখনাে সে-ছবি আমার মনে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। ১৯৫৯ সালে কাশীতে হরিপ্রেমানন্দজী (শ্রীশ্রীমায়ের শিষ্য) আমাকে শিখিয়েছিলেন কী করে মন্দিরে দেববিগ্রহ দর্শন করতে হয়। বিশ্বনাথের মন্দিরের ভিতর তাে দারুণ ধাক্কাধাক্কি। তাই বাইরে এসে এক শ্বেতপাথরের বেঞ্চিতে বসে ১০/১৫ মিনিট বিগ্রহদর্শনের কথা ভাবতে হয় ও জপ করতে হয়। এতে মনে একটি গভীর ছাপ পড়ে। মহারাজকেও তা-ই করতে দেখলাম। এসব প্রাচীন সাধুর কাছে কত কী শিখবার আছে! ঐদিন বিকালে আমরা ডাক্তারের গাড়িতে করে শহর থেকে দূরে দক্ষিণাকালী দর্শন করতে যাই। সেখানে দশমহাবিদ্যার মূর্তি ও দু-জন



Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

তান্ত্রিক দেখলাম। ফেরার পথে মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেল। তখন রাত ৮/৯টা হবে চতুর্দিক অন্ধকার পথ জনশূন্য হিমালয়ের ঠান্ডা হাওয়া। আমরা চার জন, ড্রাইভার ও গাইড। দেখলাম, মহারাজ চুপ করে, পাশে দাঁড়িয়ে। আমরা দুর্ভাবনায় অস্থির কী করে শহরে পৌঁছাব বেশ কিছু সময় পরে দেখলাম একটা ট্রাক আসছে। হাত তুলে গাইড গাড়ি থামাল এo ড্রাইভারকে আমাদের শহরে পৌঁছে দিতে রাজি করাল। শিখরেশ মহারাজ ও আমি মহারাজকে ঠেলে তুলে সেই উঁচু ট্রাকের ওপরে ড্রাইভারের পাশের আসনে বসালাম এবং আমরা দুজনে কোনােমতে মহারাজের পায়ের কাছে বসলাম। পীযূষ মহারাজ ও অপর দু-জন ট্রাকের পিছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। রাস্তার ওপর দাঁড়ানাে নির্বিকার মহারাজকে দেখে মনে হয়েছিল—ইনি স্থিতপ্রজ্ঞ। কিছুতেই বিচলিত হন না। সে-ছবি এখনাে আমার মনে উজ্জ্বল হয়ে আছে। কাঠমান্ডু ও পাটানের কৃষ্ণমন্দির, বুদ্ধমন্দির প্রভৃতি সব দর্শন করে , ২৬ আগস্ট বিকালে কলকাতায় ফিরলাম। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানে। মহারাজ ও আমি পাশাপাশি বসেছিলাম চা ও ঠান্ডা ভেজিটেবল চপ খেতে দিল। আমি খেলাম না মহারাজ খেলেন। ব্যস, কাঁকুড়গাছিতে এসে তাঁর খুব পেট খারাপ হলাে। খবর পেয়ে আমি অদ্বৈত আশ্রম থেকে ফোন করলাম। আমি বললাম, “আপনি ঐ ঠান্ডা চপ খেলেন কেন? দেখলেন না, আমি খেলাম না।” তিনি উত্তরে বললেন, “আমার পেট খারাপের জন্য তুমি দায়ী। তুমি কি জান না যে আমার বালকস্বভাব। যে যা দেয় তা-ই খাই তুমি কেন আমার হাত থেকে চপ কেড়ে নিলে না।” আমি ভাবলাম—এরূপ আত্মভােলা সাধুকে নিয়ে চলা মুশকিল।
একদিন কাঁকুড়গাছিতে মহারাজকে জিজ্ঞাসা করলাম, “স্বামীজী যেman-making religion' বলেছেন, তা কীভাবে হয়?” তিনি বললেন, “একজন অপরকে জোর করে ধার্মিক করতে পারে না। আমাদের কাজ হলাে একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা। সেই আধ্যাত্মিক পরিবেশে যে আসবে সে-ই উচ্চভাবে অনুপ্রাণিত হবে এবং নিজের জীবন সেই পথে চালিত করবে। এটাই ‘man making religion'.”
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


আরেক দিন বললাম যে, গার্গী যাজ্ঞবল্ক্যকে বলেছিলেন যে, তিনি দুটি শাণিত বাণ নিক্ষেপ করবেন অর্থাৎ প্রশ্ন করবেন। আমি আপনাকে আজ ৩৪টি বাণ নিক্ষেপ করব—এগুলি কথামৃত-এর কয়েকটি দুর্বোধ্য শব্দ। আপনি উত্তর দিন। তিনি হেসে বললেন, “আমি তােমার সব বাণ ভেঙে দেব

No comments

Powered by Blogger.