প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


এরপর ১৯৯০ সালের জুলাইতে ভারতে যাই। মহারাজ তখন মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট। প্রায় দু-বেলা তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে গল্প করেছি। তারপর জুলাই মাসের শেষে সারগাছিতে যাই। ৩১ জুলাই রাতে সারগাছি আশ্রমে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা আশ্রমের ১৫/২০ হাজার টাকা, আমার ১০০০ টাকা, হাতঘড়ি ও আরেকটা ট্রাভেল ঘড়ি নিয়ে নেয়। ৯ আগস্ট সন্ধ্যার পর আমি মঠে গেলে মহারাজ বিছানা ছেড়ে উঠলেন। সব্যসাচী (স্বামী তদ্ভাবানন্দ) তখন তাঁকে ম্যাসাজ করছিল। তিনি সেবককে তাঁর ঘড়িগুলাে আনতে বললেন। বিভিন্ন দেশের ভক্তেরা ঐগুলি তাঁকে উপহার দিয়েছে। তিনি তা থেকে একটা ভাল ঘড়ি (Seiko) বেছে আমার হাতে নিজে পরিয়ে দিয়ে নিত্যমুক্তানন্দকে বললেন একটা ছবি নিতে। সে ছবি আজও আমার কাছে আছে।



Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


অনেক সাধু ও পণ্ডিত দেখেছি, কিন্তু এরকম অসাধারণ স্মৃতিসম্পন্ন ব্যক্তি আমি জীবনে দেখিনি। ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দি, গুজরাটি ও অন্যান্য ভাষায় যেমন পারদর্শী ছিলেন, তেমনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনেও তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল। তা সত্ত্বেও তাঁর জানার আগ্রহ ছিল অপরিসীম। এখন অনেকের মধ্যে দেখি ‘জ্ঞাপয়িতুমিচ্ছা’ (অপরকে জানাবার ইচ্ছা), ‘জ্ঞাতুমিচ্ছা’ (নিজের জানবার ইচ্ছা) দেখি না। একদিন ভাষাতত্ত্ব নিয়ে আলােচনা হলাে। মহারাজ বললেন, “ভাষাতত্ত্ব অনুসারে একই শব্দের স্বর অনুযায়ী বিভিন্ন অর্থ হতে পারে। যেমন—() বাচ্চা ছেলে স্কুলে যাবে। মাকে বলছে, মা, আমি স্কুলে যাচ্ছি। মা বললেন, ‘যাও। এখানে স্বর মিষ্ট। অনুমতি দেওয়া হলাে। () হয়তাে বাড়িতে একটা বাজে লােক ঢুকেছে। সেই মহিলা চিকার করে বললেন, ‘যাও।' এখানে যাও’ মানে get out—স্বর রুক্ষ। () আবার কোনাে প্রেমিকা তার প্রেমাস্পদকে ঠেলে বলছে, যা-ও। এখানে যাও’ মানে don't go।” মহারাজ এমন ব্যঙ্গ করে বললেন যে, আমি হাসতে হাসতে মরি।

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

আরেক দিন আমি কথাপ্রসঙ্গে বললাম, “হচ্ছে।” তিনি বললেন,
* 'হচ্ছে' কী, বলাে ‘হােচ্ছে। ” “মহারাজ, আপনি তাে জানেন আমি বাঙাল।” “হ হ জানি। বাড়ি কোয়ানে? খুলনে। নাথি খাতি বেলা গেল, শুতি পারলাম না। আমি অবাক হয়ে আমার গ্রাম্য ভাষা শুনলাম।
একদিন বেলুড় মঠে তাঁর সঙ্গে বেড়াতে বেড়াতে গঙ্গার তরঙ্গ, বরানগরের বৃক্ষরাজি ও নীল মেঘ দেখে আমি কালিদাসের রঘুবংশ-এর ‘দূরাদয়শ্চক্রনিভস্যতম্বী’ ভুল বলাতে, মহারাজ সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “তুমি ভুল বলেছ।” তারপর পুরাে শ্লোকটা বলে দিলেন—
দূরাদয়শ্চক্রনিভস্য তন্বী তমালতালীবনরাজিনীলা।
আভাতি বেলা লবণাম্বুরাশের্ধারানিবন্ধেব কলঙ্করেখা।।”

(১৩শ সর্গ, ১৫)

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna



আমি অবাক হয়ে গেলাম। কবে পড়েছেন, এখনাে সব পরিষ্কার মনে আছে। আমরা বারবার পড়েও শাস্ত্রের শ্লোকগুলি সব স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারি না। অথচ গীতা, উপনিষদ, ভাগবত প্রভৃতি শাস্ত্র ও ভাষ্য থেকে চলতি প্রবাদ, প্রবচন সব যেন ফুলঝুরির মতাে তাঁর মুখ থেকে পরিষ্কার বেরােত। উদ্ধৃতিতে কোনাে জড়তা বা ভুল ছিল না। তাঁর ঘরে বেশি গ্রন্থ দেখিনি বা আমাদের মতাে অত পড়াশােনাও করতে দেখিনি। আমি একদিন বললাম, “আমার বক্তৃতা তৈরি করতে কত সময় লাগে। অথচ প্রস্তুতি ছাড়া ও নােট ছাড়া আপনি কী সুন্দর বক্তৃতা দেন এবং আপনার চিন্তাগুলাে কী অপূর্ব সাজানাে!” প্রতিদিন তাঁর সেবকরা তাঁর কাছে ভাগবত ও ঠাকুর-স্বামীজীর বই পাঠ করত। তিনি চোখ বুজে শুনতেন। আমি মঠে থাকলে বিকাল ৩.৩০টায় চা খাওয়ার সময় তাঁর কাছে গিয়ে পাঠ শুনতাম ও গল্প করতাম।
মঠ থেকে আমার আমেরিকায় ফেরার সময় মহারাজ শিখরেশকে বলতেন যে, আমার যত ধুতি, চাদর বা জামার কাপড় দরকার তাঁর stock থেকে দিতে। এদেশে বাইরে বেরােবার সময় পাশ্চাত্যের পােশাক পরি, কিন্তু আশ্রমের ভিতরে গেরুয়া পরি। আমি যাতে টাকা খরচ করে কাপড়-চাদর কিনি তার দিকে নজর রাখতেন। পূজনীয় গম্ভীরানন্দজীও আমাকে জামাকাপড় দিতেন এবং বলতেন, “সিল্কের কাপড় সব নিয়ে যাও ওদেশে। এদেশের সাধুরা ওসব ব্যবহার করলে লােকে সমালােচনা করবে।”

No comments

Powered by Blogger.