ঢাকার পথে কামাখ্যা ও শিলং তীর্থভ্রমণে স্বামীজী কিছু নতুন তথ্য
ঢাকার পথে কামাখ্যা ও শিলং তীর্থভ্রমণে স্বামীজী কিছু নতুন তথ্য৷৷
Sri
Ramakrishna
|
॥ ঢাকার পথে কামাখ্যা ও শিলং তীর্থভ্রমণে স্বামীজী কিছু নতুন তথ্য৷৷
সুমন
ভট্টাচার্য নাগ মহাশয়ের
পূত-পবিত্র
রামকৃষ্ণময় জীবনের আলােতে
উজ্জ্বল পূর্ববঙ্গ এবং তৎসহ
আসাম ও শিলং-এ
স্বামী বিবেকানন্দের পদার্পণ
বিবেকানন্দ-জীবন
পর্যালােচনার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে
এক বাত্ময় অধ্যায়।
ঢাকায়
স্বামীজীর প্রদত্ত বক্তৃতাবলী,
কামাখ্যায়
তাঁর মাতৃদৰ্শন আবার শিলং
পাহাড়ে কুইনটন হলে তার বক্তৃতা
এবং সে সম্পর্কে কট্টর
বিবেকানন্দ-সমালােচক
পদ্মনাথ ভট্টাচার্যের
প্রতিক্রিয়া—এই সবই
বিবেকানন্দ-জীবন
ও কর্ম অনুধ্যানকারী যে কোনাে
ব্যক্তির কাছে চরম।
চিত্তাকর্ষক
বলেই মনে হয়।
বিদেশ থেকে ফিরে
এসে স্বামীজী ভারতবর্ষে সংগঠন
তৈরীর কাজে আত্মনিয়ােগ করলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ-অর্পিত
কাজে সমগ্র জীবনপাত করে আজও
সে সৈনিকের বিশ্রাম নেওয়ার
সুযােগ নেই।
পূর্ববঙ্গ থেকে
আহ্বান আসতে থাকে পুনঃ পুনঃ।
:
১৯০১
খ্রিস্টাব্দ মাকে তীর্থদর্শন
করানাে,
নিজের
ভগ্নস্বাস্থ্য উদ্ধারের
অভিপ্রায়ে ও ঢাকার ভক্তদের
অবিরাম আহ্বানে সাড়া দিয়ে
স্বামীজী পূর্ববঙ্গ-আসাম
ভ্রমণে বের হলেন ১৮ মার্চ।
১৯ মার্চ স্টিমার পোঁছল
নারায়ণগঞ্জ।
সেখান থেকে
অপরাহে পৌঁছে গেলেন ঢাকা।
“যে
তিনদিন ঢাকায় ছিলেন,
তখন
অপরাহে প্রায় দুই-তিন
ঘন্টা ধরিয়া জ্ঞান,
ভক্তি,
বিশ্বাস,
ত্যাগ,
বিবেক,
বৈরাগ্য,
কর্ম
প্রভৃতি নানাবিধ আধ্যাত্মিক
বিষয়ে আলােচনা হইত।
প্রায়
শতাধিক লােক সমাগত হইত।
সকলেই
তাঁহার বিশ্বাস,
ভক্তি
ও তেজঃপূর্ণ উপদেশাবলী শ্রবণ
করিয়া বিশেষ তৃপ্ত হইয়াছিলেন।”
,
“তীর্থস্নানকালীন
একটি মজার এবং স্বামীজীর
ভক্তির উদাহরণস্বরূপ একটি
ঘটনা জানা যায়।
‘লাঙ্গলবন্ধ
ব্রহ্মপুত্রের পুরাতন ঘাটের
ওপর অবস্থিত নদীতে জল স্বল্প
ও ময়লা,
বিশেষতঃ
মেলার সময়ে কলেরার প্রাদুর্ভাব
হওয়া অসম্ভব নহে।
এই সকল কথা
ভাবিয়া স্বামীজী সাবধান
করিয়া দিয়াছিলেন,
কেহ
যেন নদীর জল পান না করেন।
সাবধান
করার প্রয়ােজনও ছিল,
কারণ
তীর্থস্থানে।
Sri
Ramakrishna
|
জল
পান করিলে দেহ পবিত্র হয়,
ভক্তি
বৃদ্ধি হয়,
ইহাই
হিন্দুদের বিশ্বাস।
তীর্থস্নানান্তে
সকল ফিরিতেছেন তখন স্বামীজী
জানিতে চাহিলেন,
কেহ
জল পান করিয়াছেন কিনা,
সকলে
বলিলেন-না।
তখন স্বামীজী বলিলেন তিনি
কিন্তু জল পান করিয়াছেন,
কারণ
কোথা দিয়া কীভাবে পুণ্য
সঞ্চয় হইয়া যায়,
তাহা
কে বলিতে পারে?
তিনদিন
ঢাকায় কাটিয়ে স্বামীজী
লাঙলবন্ধে তীর্থস্নান করতে
গিয়েছিলেন।
তীর্থস্থান থেকে
ফিরে ৩০ মার্চ স্বামীজী ঢাকার
জগন্নাথ কলেজের হলে একটি
বক্তৃতা দিলেন,
প্রায়
দু'
হাজার
লােকের উপস্থিতিতে।
বিষয়—‘আমি
কী শিখিয়াছি,
স্বামীজীর
দ্বিতীয় বক্তৃতা হয় ‘পােকস
কলেজের বিস্তৃত খােলা ময়দানে,
প্রায়
তিন সহস্র শ্রোতার সমক্ষে’-‘আমরা
যে ধর্মে জন্মিয়াছি'
সম্বন্ধে
প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী এক
বক্তৃতা করেন।
এই বক্তৃতাও
ইংরাজী ভাষায়ই হইয়াছিল।
শ্রোতৃগণ মন্ত্রমুগ্ধের
ন্যায় নিস্তব্ধ ছিলেন।
এপ্রিল
মাসের ৫ তারিখে স্বামীজী এবং
তার দলের সকলে (তার
মা,
খুড়ি,
বােন
এবং বাকীরা)।
ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রামের ২৫
মাইল উত্তরে,
চন্দ্রনাথ
মন্দির-এর
উদ্দেশে রওনা হলেন।
এরপর
নদীপথে।
তাঁরা এলেন আসামের
গৌহাটিতে।
সম্ভবতঃ এপ্রিলের
প্রথম সপ্তাহে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে
স্বামীজী ধুবরি হয়ে আসাম
পৌঁছলেন।
তিনি ধুবরির কাছারি
ঘাটের কাছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম
করলেন এবং ব্রহ্মপুত্রের
তীরে এক স্থানে তাঁর মায়ের
জন্য খাবার প্রস্তুত করলেন।
গৌহাটির পথে তারা গােয়ালপাড়ায়
অবস্থান করলেন।
গৌহাটিতে
তিনি এবং তাঁর দলের অন্যেরা
মা কামাখ্যাকে দর্শন করলেন।
এখানে তারা শিবকান্ত ও
লক্ষ্মীকান্ত পাণ্ডার গৃহে
অবস্থান করেন।
স্বামীজী বেশ
কয়েক দিন ধরে মা কামাখ্যার
পূজা করলেন।
জানা যায়,
স্বামীজী
কামাখ্যায় অবস্থানকালে
কুমারী পূজাও করেছিলেন।
স্বামী
বিবেকানন্দের অন্তর্জগতে
মা কালীর অধিষ্ঠান নিয়ে
কিঞ্চিৎ আলােকপাত এক্ষেত্রে
অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
স্বামীজীকে
যেমন দেখিয়াছি’ গ্রন্থে
নিবেদিতা জানিয়েছেন যে
অন্যত্র একবার নিজের জীবনে
কালী রহস্যের আভাস দিয়ে
স্বামীজী বলেছিলেন—“ওঃ !
মা
কালী ও তার লীলাকে আমি কী ঘৃণাই
করেছি।
ছ-বছর
ধরে এই নিয়ে সংগ্রাম করেছি।
কিছুতে তাঁকে মান ব না,
শেষে
কিন্তু আমাকে মানতেই হ’ল শ্রীরামকৃষ্ণ
পরমহংসদেব আমাকে তার কাছে
উৎসর্গ করেছিলেন,
আর
এখন আমি বিশ্বাস করি,
অতি
সামান্য কাজেও সেই মা আমাকে
পরিচালনা করছেন,
আমাকে
নিয়ে যা খুশি তাই করছেন।
বহুদিন তাঁকে মানব না বলে আমি
জেদ করেছিলাম,
......কিন্তু
শেষে আমাকেও মা কালীকে মানতে
হলাে।
তখন আমার অতি দুঃসময়,
...মা
সুবিধা পেলেন,
আমাকে
গােলাম করে ফেললেন,
ঠাকুরের
নিজের মুখের কথা,
‘তুই
মায়ের গােলাম হবি’,
শ্রীরামকৃষ্ণ
পরমহংস আমাকে মায়ের হাতে
সমর্পণ করলেন।
দেখ,
আমার
দৃঢ় বিশ্বাস,
কোথাও
এমন এক মহাশক্তি আছেন,
যিনি
নিজেকে প্রকৃতি-সত্তা
ব'লে
মনে করেন,
তাঁরই
নাম কালী,
তাঁরই
নাম মা...')
তাই
কামাখ্যায় মহাকালীকে দর্শন
করে স্বামীজী যেন ভাবাবিষ্ট।
জীবন সায়াহ্নে এসে মায়ের
মহাত্রিপুরাসুন্দরী’ রূপ
দর্শনে স্বামীজী যেন আজ
তৃপ্তচিত্ত-কল্পতরু।
“কোন
দিনে তিনি কামাখ্যা দর্শনে
আসেন সঠিক জানা যায় না। তবে
১৭ই এপ্রিল-এর
কাছাকাছি
No comments