প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

৩০//১৯৯৭বেলুড় মঠসকাল ৭টা
মঠের সাধু-ব্ৰহ্মচারীদের অন্তত দিনে একবার মহারাজের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলার সুযােগ মিলত। 
অনেক সাধু-ব্রহ্মচারী আমাকে বলেছেন যেতাঁরা সারাদিনের মধ্যে ঐ ১৫ মিনিটের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন।
 তিনি সাধুদের চুপচাপ প্রণাম করে চলে যাওয়া পছন্দ করতেন না। 
তাঁদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলতেন, “প্রশ্ন করাে।” 
আমি যে ক-দিন মঠে ছিলামআমিই ছিলাম প্রধান প্রশ্নকারী।
আমি—বেলুড় মঠের নিয়মাবলী’তে ‘ঠাকুরের মত’-এর ইংরেজি অনুবাদ করা হয়েছে—“The creed'
 এটা ভাল অনুবাদ নয়।
ভূতেশানন্দজী-ঠাকুরের মত’ মানে ধর্মজীবন সম্বন্ধে তাঁর যে সিদ্ধান্ত ।
 means doctrine-view about spiritual life. 
The word 'creed is not clear.
— alcast onico Nicene Creed, Apostolic Creed.
 Those are very dogmatic views.
VOSS-Creed means the body of faith.
Doctrine and dogma are not good words-narrow view. 
yo may mean 'in the light of Ramakrishna's teachings'. 
নিখিলেশ্বরানন্দ—Is it the philosophy of Ramakrishna?
ভূতেশানন্দজী-No. Philosophy is something that has very little to do with spirituality. 
নিখিলেশ্বরানন্দ—Method of teaching?
ভূতেশানন্দজীMethod of teaching is not philosophy, the body of teaching is philosophy. ঠাকুর মত’–“Ramakrishna's method of teaching’-no, it is not clear.

আমি-Ramakrishna's view? 
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

ভূতেশানন্দজীView is all right.
ভূতেশানন্দজী ছিলেন ‘চলমান অভিধান'। তাঁর জ্ঞানের ভাণ্ডার অফুরন্ত ছিল। তাঁর কাছে আমি অনেক কিছু শিখেছি।।এদিন মন্ত্রের ওপর আমি অনেক প্রশ্ন করি। মন্ত্রশক্তি ও মন্ত্রচৈতন্য কীভূতেশানন্দজী ঐসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেন। তিনি সাধক ও শাস্ত্রজ্ঞ সন্ন্যাসী ছিলেন। তাই তাঁর উত্তরগুলি খুবই যথাযথ ও মর্মস্পর্শী ছিল। কথাপ্রসঙ্গে মহারাজ বলেন, “ব্রহ্মানন্দজীকে বলরাম মন্দিরে প্রথম দেখি। তারপর কয়েক বার তাঁর দর্শন হয়েছে।
 একদিন বলরাম মন্দিরের হলে পায়চারি করছিলেন।
 আমরা না বুঝে সেই সময় তাঁকে প্রণাম করি।
 তিনি বললেন, ‘দেখআমার পেটটা আজ ভাল নেই।
 তার মানে তাঁর তখন কথা বলার mood নেই।” 
আমি বললাম,
 “সৎপ্রকাশানন্দজীও নিজেকে নির্জনে রাখবার জন্য দু-এক কথায় সেরে বলতেন, I shall not detain you. ”
ভূতেশানন্দজীর রাশভারী চেহারার পিছনে শিশুসুলভ সরলতারঙ্গপ্রিয়তাঅকপটতা লুক্কায়িত ছিল।
 তিনি যখন বৈঠকি গল্প শুরু করতেনতখন আমরা হেসে লুটোপুটি খেতাম। মনে হতাে ইনি আমাদের নিকটতম বন্ধু।
 একদিন আমি ভূতেশানন্দজী কে বললাম, “আপনাকে ৩৮ বছর আগে প্রথম দেখিআপনি এখনাে same রয়েছেন।

 তিনি বললেন, “তুমি same-এর গল্প।
 জান?” আমি বললাম, “না।” মহারাজ বললেন, “তবে শােনাে।
 এক ৮০ বছরের বৃদ্ধ ইংরেজ ভদ্রলােক অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডরমিটরিতে হাজির হলেন।
 ৬০ বছর আগে যে-ঘরে ছাত্রাবস্থায় ছিলেনসেই ঘরটি বৃদ্ধ বয়সে দেখবার ইচ্ছা হলাে। 
তিনি সেই ঘরের দরজায় আঘাত করতেই এক যুবক ছাত্র বেরিয়ে এল।
 বৃদ্ধ তাঁর মনগত অভিপ্রায় জানালে ছাত্রটি খুশি হয়ে ঘরের ভেতর নিয়ে গেল।
 বৃদ্ধ ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে বললেন
‘The same old furniture.' 
তারপর জানালা দিয়ে বাইরে দেখে বললেন
‘The same old view.' 
অবশেষে ঘরের
 closet-এর দরজা খােলামাত্র একটি যুবতী মেয়ে বেরিয়ে এল। ছাত্রটি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, 'She is my sister.' 
বৃদ্ধ গম্ভীরভাবে বললেন
'The same old story.' ” আমি তাে হেসে মরি।
 প্রাচীন ও নবীনের সম্মিলন তাঁর চরিত্রকে প্রাণময় ও আনন্দময় করে তুলেছিল।




Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


৩১//১৯৯৭বেলুড় মঠসকাল ৭টা।
ভূতেশানন্দজী কে প্রণাম করে হেসে বললাম, “মহারাজআজকাল লােকে ঠাকুরের কথা নানাভাবে ব্যবহার করছে। ফ্যামিলি প্ল্যানিং’-এ ঠাকুরের উদ্ধৃতি দিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপছেশ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছেনদু-একটা ছেলেমেয়ে হওয়ার পর ভাইবােনের মতাে থাকবে। আমি যখন কলকাতায় কলেজে পড়িতখন দুর্গাপূজার মণ্ডপ থেকে লাউডস্পিকারে শােনা যেত—শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেনপ্রণাম করলে প্রণামি দিতে হয়নতুবা সে প্রণাম অসিদ্ধ। ”
ভূতেশানন্দজী (মিষ্টি হেসে)—what are you giving to me?
আমি নিজের মাথাটা তাঁর সামনে এগিয়ে দিলাম। তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন। তারপর তিনি শুরু করলেন একটি গল্প । “আমি তখন কিষেণপুরে। স্বামী শুদ্ধানন্দজীও সেখানে ছিলেন। একদিন আমাদের universal কাকিমা (জনৈকা ভক্ত-মহিলাশুদ্ধানন্দজীকে জিজ্ঞাসা করেন, “মহারাজকাশীতে। মরলে মুক্তি হয়—একথা কি সত্য?’ শুদ্ধানন্দজী বলেনহ্যাঁশাস্ত্র তাে তা-ই বলে। কাকিমা বললেনআপনার কী বিশ্বাস?’ শুদ্ধানন্দজী উত্তর দিলেন, ‘আমি যদি তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতামতাহলে আমি কাশীতে গিয়ে আত্মহত্যা করতাম। ” আমি—ভূতেশানন্দজী১৯৭০ সালে আমি কাশীতে তারাপ্রসন্ন মহারাজকে ঐ প্রশ্ন করেছিলাম—কাশীতে মরলে মুক্তি হয় কি নাতিনি আমাকে দারুণ বকুনি দিয়ে বললেন, “আমরা বুড়াে সাধুরা এখানে পড়ে আছি মরবার জন্যআর তুমি ছােকরা আমাদের confuse করবার চেষ্টা করছতিনি ঠাকুরের দর্শন ও মায়ের কথা উল্লেখ করলেন। আমি বললাম, “শাস্ত্র বলেজ্ঞানাৎ মােক্ষঃ। তিনি পরে বললেন, ‘চেতনানন্দতুমিও right আমিও right. শিবঠাকুর শেষকালে জ্ঞানটা দিয়ে দেন।
তারপর সাধুজীবন সম্বন্ধে আমি প্রশ্ন করলাম, “অনেক সাধু complain করে যেতাদের অনেক কাজতাই শাস্ত্র অধ্যয়ন ও জপধ্যানের তত সময় নেই।”



Sri Sarada Devi

Sri Sarada Devi



ভূতেশানন্দজী বললেন, “কিছু সাধু খুব কাজ করে, আবার অনেক সাধু কাজই করতে চায় না। বিষয়টি এসব সাধুর কর্মের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। মাধবানন্দজী বলতেন, “We have somehow managed to understand Swamiji's saying-Work and worship, but we have not been able to accept that Work is worship.' ঈশ্বর আত্মনিবেদন করতে করতে ঐ attitude আসে। বারবার চেষ্টা করতে হয়।”
ভূতেশানন্দজী একদিন সকালে সব সাধু-ব্রহ্মচারীকে উদ্দেশ করে বললেন, “সাধুদের বসে খাওয়া উচিত নয়। সবার কিছু-না-কিছু কাজ করা উচিত।” তারপর হেসে বললেন, “ওহে, আমি কিন্তু বসেই খাই। বুড়ােমানুষ কোনাে কাজ করি না।” জনৈক সাধু বললেন, “মহারাজ, আপনি আমাদের চেয়ে বেশি কাজ করেন। আপনি দীক্ষা দেন, সাধু-ভক্তদের উপদেশ দেন। এসব কি কম কাজ?”
আরেক দিন আমি বললাম, “মঠ ও মিশনের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আপনার অভিমত কী?” সেদিন ভূতেশানন্দজী বেশ উত্তেজিত হয়ে জোর গলায় সব সাধুর সামনে বলে উঠলেন, “ঐশ্বর্য স--নাশ ডেকে আনে। দেখ, মঠ-মিশনে এখন অর্থ আসছে। লােকে দান করছে ঠাকুরের কাজে। আমাদের মধ্যে যেন বিলাসিতা না ঢােকে। ত্যাগ, বৈরাগ্য ও পবিত্রতা হচ্ছে সাধুজীবনের আসল ব্যাপার। অর্থ অনেক সময় অনর্থ সৃষ্টি করে।” ‘সর্বনাশ’ শব্দটা এখনাে আমার কানে বাজছে। মহারাজের অত দৃপ্ত, জোরালাে গলার স্বর আমি কখনাে শুনিনি।
//১৯৯৭, বেলুড় মঠ, সকাল ৭টা
আমি—মুণ্ডক উপনিষদ-(//) আছে—ব্ৰহ্ম বেদ ব্ৰহ্মৈব ভবতি। তাহলে বেদান্তশাস্ত্রে ‘ব্রহ্মবিদ, ব্রহ্মবিদ্বর, ব্রহ্মবিদ্বরীয়া, ব্রহ্মবিদ্বরিষ্ঠ' বলে কেন?
ভূতেশানন্দজী—আমরা ঐভাবে অপরকে বিচার করি। ব্রহ্মবিদদের মধ্যে কোনাে gradation নেই। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। ঠাকুর বলেছেন—কেউ দুধ দেখেছে, কেউ ছুঁয়েছে, কেউ খেয়ে বলবান হয়েছে। কিন্তু ব্ৰহ্মজ্ঞের কাছে সব সমান।
জনৈক সন্ন্যাসী—দুধের উদাহরণে তাে তারতম্য আছে।।
ভূতেশানন্দজী—যিনি ব্রহ্মে মগ্ন, তাঁর duality vanish হয়ে যায়। তিনি পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেন না যে, তিনি বরীয়ান অথবা বরিষ্ঠ।
আমি—মহারাজ, সাধুজীবন সম্বন্ধে কিছু বলুন।
ভূতেশানন্দজী-ওকথা বহুবার বলেছি। Love Ramakrishna wholeheartedly and not half-heartedly.
আমি—পাশ্চাত্যে অনেকে আমাদের কাছে আসে—কেউ divorced, কেউ depressed, কেউ deluded. তাদের প্রতি আপনার কোনাে উপদেশ আছে?
ভূতেশানন্দজী-কাম-কাঞ্চনই মায়া। বাসনা না ছাড়লে হবে না। মােহ কাটতে হলে ত্যাগের ছুরি দরকার। চোখের ছানি কাটতে হলে Laser operation চাই। জগতের ভােগের বস্তু ছেড়ে আদর্শকে ভালবাসা।
আমি—মহারাজ, আজ আমি মঠ থেকে আমেরিকায় ফিরে যাব। Do you have any departing message for me?
মহারাজ—No departing message. I want eternal union. আমার কাছে ‘আসন আছে, যাওন নাই'You are going far away from us, but don't make us away from you. May we never be separated. Don't cut maya from us.
পরে আমি মজা করে বললাম, “মহারাজ, আপনি কীরকম গুরু? ঠাকুর বলেছেন—উত্তম বৈদ্য রােগীর বুকে হাঁটু দিয়ে জোর করে ঔষধ খাওয়ায়, আপনি শিষ্যদের বুকে হাঁটু দিয়ে জ্ঞান দিতে পারেন?” মহারাজ একগাল হেসে বললেন, “আমার তাে দুই হাঁটুতেই ব্যথা!” তাঁর ঐ সরস উক্তিটি আমার মনে চিরদিনের মতাে গেঁথে গেল। তিনি সত্যই সদ্গুরু ছিলেন। আমি এখন ভক্তদের বলি, “দেখ, বেশি উপদেশ পালন করতে হবে না। ভূতেশানন্দজীর ‘পঞ্চশীল’ দৈনন্দিন জীবনে পালন করলে যথেষ্ট হবে। 
  1. () কখনাে কারাে অনিষ্ট কোরাে না। 
  2. () সত্যকে কখনাে ত্যাগ করবে না। 
  3. () কাউকে কথা দিলে অবশ্য রাখবে, কখনােই প্রবঞ্চনার আশ্রয় নেবে না। 
  4. () ইন্দ্রিয়সমূহকে তােমার বশবর্তী করতে হবে। 
  5. () যতটা সম্ভব বিলাসিতা। বর্জন করে সাধারণ জীবনযাপন করবে।”
ঐদিন দুপুরে খাওয়ার আগে পূজনীয় মহারাজের কাছে আবার বিদায় নিতে গেলাম।
 তিনি আমার মাথাটা নিজের বুকে ধরে প্রাণভরে আশীর্বাদ করলেন। 
এই ছিল তাঁকে আমার শেষ দেখা। 
তাঁর অভিমানশূন্য পূত চরিত্র ও স্নেহ-ভালবাসার কথা স্মরণ করলে মনটা আনন্দে ভরে যায়—চোখে জল আসে।

No comments

Powered by Blogger.