প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী সর্বজ্ঞানন্দ (১৯০২-১৯৮৮) - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী সর্বজ্ঞানন্দ (১৯০২-১৯৮৮)

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী সর্বজ্ঞানন্দ 

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

অভিনেতাটি নিজেকে সাদা কাপড়ে আপাদমস্তক ঢেকে পেছনের সিটে বসেছিলেন। 
মঠে পৌঁছে ভক্তটি পাশের দরজা দিয়ে ঢুকে মহারাজকে খবর দিতে গেলেন।
 কিন্তু তার আগেই মহারাজ ঘর থেকে বেরিয়ে হলঘরে এলেন।
 ইতােমধ্যে অভিনেতাও সামনের গেট দিয়ে হলঘরে এলেন। 
মহারাজ কৃষ্ণবেশী অভিনেতাকে দেখামাত্র তাঁর পা স্পর্শ করে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করলেন।
 একমাত্র আমিই সেই দৈব দৃশ্যের সাক্ষী।
 আমার মনে হলাে, প্রকৃত কৃষ্ণ আমার সামনে এলেও ঐরকম শ্রদ্ধা দেখাতাম না। 
আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যে, মহারাজ একজন সাধারণ অভিনেতাকে এমন শ্রদ্ধা দেখাবেন! আসলে মহারাজ তাঁর মধ্যে প্রকৃত কৃষ্ণ দেখেছিলেন। 
এ ঘটনাটি আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল।

প্রতি সন্ধ্যায় সাধু ও ভক্তেরা ভজন গাইতেন; মহাপুরুষ মহারাজ তবলা জাতেন এবং মহারাজ ও রামলালদাদা মুখােমুখি হয়ে ঘুরে ঘুরে নৃত্য করতেন । 
আমি লক্ষ্য করেছিলাম, মহারাজের চোখ-দুটি অর্ধনিমীলিত এবং
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

হাততালি দিয়ে একেবারে মত্ত হয়ে নাচছেন। 
আমি তখন এসব বুঝতাম না, কিন্তু পরে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত পড়ে জেনেছিলাম যে এর নাম ভাবসমাধি।

নারায়ণস্বামী আইয়ার নামে এক ভক্তকে আমি জানতাম, তিনি মাদ্রাজ থেকে ৭৫ মাইল দূরে থাকতেন।
 তিনি ব্রহ্মবাদিন' পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও ঠাকুরের সন্ন্যাসি-শিষ্যদের বিষয়ে জানতেন।
 অবিবাহিত নারায়ণস্বামী তাঁর বৃদ্ধা মায়ের সেবা করতেন এবং একটা বাগানে ৮ টাকা মাইনের চাকরি করতেন।
 তাঁর একটা বিশেষ বাসনা ছিল—এমন একজনকে স্পর্শ করবেন, যিনি শ্রীরামকৃষ্ণকে স্পর্শ করেছেন। 
১৯১০ সালে শ্রীশ্রীমা যখন মাদ্রাজে আসেন, তিনি মাকে দেখার জন্য তৈরি ছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁর পরিবারের একজনের মৃত্যু।
 হওয়ায় তিনি আসতে পারেননি।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


তারপর ১৯২১ সালে স্বামী ব্রহ্মানন্দ যখন মাদ্রাজে এলেন, নারায়ণস্বামী তাঁর বাসনাপূরণের জন্য মাদ্রাজ মঠে উপস্থিত হলেন।
 মহারাজ তখন স্টুডেন্টস্ হােমে ছিলেন। 
সেখানে মহারাজ কোনাে প্রেতাত্মার উপস্থিতি অনুভব করে প্রতিদিন রামনামের ব্যবস্থা করলেন। 
নারায়ণস্বামী ছিলেন বিনয়ের প্রতিমূর্তি। 
একদিন বেলা ১.৩০টা নাগাদ তিনি স্টুডেন্টস হােমে।
এলেন, তখন মহারাজ বিশ্রাম করছেন। 
তাঁর সেবক অসময়ে মহারাজ দেখতে আসার জন্য নারায়ণস্বামীকে ভৎসনা করলেন। 
সেবকের কথাবার শুনে মহারাজ তাঁকে বললেন ভক্তটিকে তাঁর কাছে আনতে। 
আমি পরে নারায়ণস্বামীকে মহারাজের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
 তিনি বলেছিলেন, “আমি মহারাজের ঘরে ঢুকে তাঁর চরণের কাছে ফুল ও ফল রাখলাম। 
তারপর তাঁর চরণ দু-খানি মাথায় স্পর্শ করলাম। 
আমার দু-চোখ জলে ভরে এল। 
ঠিক মনে নেই কতক্ষণ আমি তাঁর কাছে ছিলাম। 
তবে আনন্দে ভরপুর হয়ে গিয়েছিলাম। 
মহারাজকে স্পর্শ করে আমার বাসনাপূরণ হয়ে গিয়েছে, যেহেতু তিনি ঠাকুরকে স্পর্শ করেছিলেন। 
মহারাজ তাঁর হাত দু-খানি আমার মাথায় রেখে আশীর্বাদ করলেন এবং দাঁড়াতে বললেন। 
আমি তাঁর শান্ত মুখখানি প্রাণভরে দেখলাম।
 তারপর তাঁর দিকে মুখ করে পিছু হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। 
শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্রকে দেখা আমার জীবনের একটা শ্ৰেষ্ঠ ঘটনা।” 
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna



নারায়ণস্বামী মহারাজের পা স্পর্শ করেছিলেন ভক্তিতে, আর আমি করেছিলাম ভয়ে। 
আমার বিশ্বাস, ফল একই হয়েছিল।
 শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, জানতে বা অজানতে লঙ্কা খেলে মুখ জ্বলবেই জ্বলবে। 
এখন জীবনের । 
শেষপ্রান্তে এসে অতীতের ঐ পবিত্র স্মৃতিগুলি ভাবলে আমার রােমাঞ্চ হয়।

No comments

Powered by Blogger.