প্রাচীন সাধুদের কথা_ স্বামী হরিপ্রেমানন্দ ও স্বামী মহেশ্বরানন্দ Prācīna sādhudēra kathā
প্রাচীন সাধুদের কথা_ স্বামী হরিপ্রেমানন্দ ও স্বামী মহেশ্বরানন্দ (১৮৯৫-১৯৭১) (১৮৯০-১৯৭৩)
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী হরিপ্রেমানন্দ ও স্বামী মহেশ্বরানন্দ (১৮৯৫-১৯৭১) (১৮৯০-১৯৭৩)
শ্রীশ্রীমায়ের
শিষ্য হরিপ্রেমানন্দ মহারাজকে
মায়ের বাড়ীতে দেখতাম।
খালি
পায়ে ওপর-নিচ
করছেন।
বড় চোখ দুটি লালচে।
High
blood pressure ছিল।
বৃদ্ধ সাধুটিকে দেখে মনে হতাে
মায়ের একটি বালক-ভক্ত।
উদ্বোধনে তখন ঘরের অভাব।
মায়ের বাড়ীর সদর দরজা দিয়ে
প্রবেশ করে ডানদিকের ঘরে
মেঝেতে খাওয়া হতাে,
আবার
রাতে গেস্ট সাধুরা মশারি ছাড়া
মাদুর বিছিয়ে শুতেন।
তারপর
১৯৫৯ সালে তাঁর সঙ্গে কাশী
অদ্বৈত আশ্রমে দেখা হয়।
আমি
তখন কলকাতার অদ্বৈত আশ্রমে
থাকি।
কাশীতে আমি তিন-চার
দিন দুর্গাপূজার সময় ছিলাম।
অপূর্বানন্দজী মােহন্ত।
প্রথমে যেতেই স্বামী
হরিপ্রেমানন্দ মহারাজ
আমাকে বলেন,
“দেখ, তুমি যেখানে যাবে প্রথমে দুটি জিনিস জানবে—বাথরুম কোথায় ও খাবার জলের জায়গা। শরীরে যদি অস্বস্তি থাকে তুমি ধ্যানজপ করতে পারবে না। তাই বাথরুমটা জানা দরকার। তেমনি তৃষ্ণা মেটাবার জন্য জলের কুঁজোটা জেনে নেবে।”
এই
বৃদ্ধ সাধু।
practical
knowledge দেখে
মুগ্ধ হলাম।
Sri
Ramakrishna
|
কাশীতে স্বামী
হরিপ্রেমানন্দ মহারাজ ছিলেন আমার
guide.
তিনি
প্রথম দিন আমাকে বিশ্বনাথ
দর্শন করাতে নিয়ে গেলেন।
বার্ধক্যের জন্য তিনি একটু
খুঁড়িয়ে হাঁটতেন।
বিশ্বনাথ
গলির প্রায় সবাই তাঁকে জানত।
একটি ফুলের দোকানে জুতাে রেখে
মহারাজের সঙ্গে ভিড়ের মধ্য
দিয়ে বিশ্বনাথের মন্দিরে
ঢুকলাম।
তিনি দাঁড়িয়ে আমাকে
protect
করতে
লাগলেন যাতে আমি বাবা বিশ্বনাথের
মাথায় ভালভাবে ফুল,
বেলপাতা
ও গঙ্গাজল দেওয়ার সময় পাই।
তারপর যাত্রীদের চাপে আমাদের
বেরিয়ে আসতে হলাে।
তিনি আমার
হাত ধরে মন্দিরের ডান দিকে
একটা শ্বেতপাথরের বেঞ্চে
বসালেন এবং বললেন,
“দেখ, তুমি স্বল্প সময়ে বিশ্বনাথকে যা দর্শন করেছ তা এখন চোখ বুজে ধ্যান করাে।”
আমি তাঁর উপদেশমতাে
বিশ্বনাথকে চিন্তা করতে লাগলাম
আর তিনি চোখ বুজে চাদরে হাত
ঢেকে জপ করতে লাগলেন।
১৫/২০
মিনিট
“দেখ, তুমি যদি কোনাে মন্দিরে দেবদেবী দর্শনে যাও তবে দর্শন করে চলে যেয়াে না।মন্দিরের চত্বরে বা কোনাে কোণে বসে কিছুক্ষণ ধ্যানজপ করে তবে অন্যত্র যাবে।”
তাঁর এই উপদেশ এখনাে
আমার মনে গেঁথে রয়েছে।
প্রতিদিন
রিকশা করে তিনি আমাকে বিভিন্ন
মন্দির দেখাতে নিয়ে যেতেন—
- কেদারনাথ,
- সঙ্কটমােচন,
- দুর্গামন্দির,
- ত্রৈলঙ্গস্বামীর মন্দির,
- বীরেশ্বর শিব,
- মণিকর্ণিকা ঘাট ও
- বেণীমাধবের ধ্বজা।
তিনি
আমাকে বলেন যে,
মা
ঐ মন্দিরের চূড়ায় উঠেছিলেন।
কালভৈরবও দেখিয়েছিলেন।
যেখানে নিয়ে যেতেন সেই মন্দিরের
গুরুত্ব ও ইতিবৃত্ত বলতেন।
সাধুদের সঙ্গে দেবদেবীদর্শন
সত্যই সার্থক।
পরবর্তিকালে
জেনেছিলাম,
হরিপ্রেম
মহারাজ, মা ও রাধুকে নিয়ে
বাঁকুড়াতে গিয়েছিলেন।
সেখানে মায়ের শিষ্য স্বামী
মহেশ্বরানন্দজী (বৈকুণ্ঠ
মহারাজ)
ডাক্তার
ছিলেন।
মা অসুস্থ রাধুকে
দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
তারপর একদিন সন্ধ্যায় মায়ের
পায়ে বাতের তেল মালিশ করবার
কালে।
শ্রীশ্রীমাকে হরিপ্রেমানন্দ
মহারাজ দেবী জগদ্ধাত্রীরূপে
দেখেন।
১৯৭১ সালে ছিয়াত্তর
বছর বয়সে কাশীতে তাঁর দেহত্যাগ
হয়।
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী
মহেশ্বরানন্দজীকে কলকাতার
অদ্বৈত আশ্রমে দর্শন করেছি।
তবে তাঁর সঙ্গে কোনাে কথা
হয়নি।
তাঁর সম্বন্ধে মাত্র
দুটি কাহিনি শুনেছিলাম।
মা
তখন কোয়ালপাড়ায় আমাশয়ে
ভুগছেন।
বৈকুণ্ঠ মহারাজ মায়ের
চিকিৎসা করতে আসেন।
তিনি
অ্যালােপ্যাথিক ডাক্তার হলেও
হােমিওপ্যাথি practice
করতেন।
তিনি মায়ের জিভে হােমিওপ্যাথি
ওষুধের ফোঁটা ফেলতে গিয়ে এক
দেবীমূর্তি দর্শন করেন।
তিনি
অবাক হয়ে রইলেন।
মা তাগিদ
দিচ্ছেন,
“ও বৈকুণ্ঠ, আমাকে ওষুধ দাও।”
তিনি নিরুত্তর।
তারপর ওষুধের শিশি থেকে গুড়াে
sugar-এ
ফোঁটা ফেলে মাকে খেতে দিলেন।
আর
শুনেছিলাম—মায়ের শরীর গেলে
procession-এর
সময় তিনি বাগবাজার থেকে
বরানগরের কুঠিঘাট পর্যন্ত
মায়ের মুখের ওপর ছাতা ধরে
রেখেছিলেন যাতে মুখে রােদুর
না পড়ে।
আমার পরিষ্কার মনে
আছে—তিনি বেশ লম্বা ও ছিপছিপে
ছিলেন।
ধন্য এসব সাধুর জীবন।
তাঁরা মায়ের কৃপা পেয়ে
মানবসেবায় নিজেদের বিলিয়ে
দিয়েছেন।
১৯৭৩ সালে তিরাশি
বছর বয়সে তিনি কাশী সেবাশ্রমে
দেহত্যাগ করেন।
No comments