প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী
Sri
Ramakrishna
|
১২
জানুয়ারি ১৯৯৬,
বেলুড়
মঠ,
সকাল
৭.৪৫
মিঃ
আমি—কোনাে
পাশ্চাত্যবাসী যদি আপনাকে
বলে,
সে
বেদান্ত জানতে চায়
,
আপনি
কোন্ বই তাকে suggest
করবেন?
মহারাজ-স্বামীজীর
বই—বিশেষত ‘জ্ঞানযোগ
।
আমি—সাধুর
আচরণ কী?
মহারাজ—প্রকৃত
সাধু অপরকে খুশি করে। সে তার
আধ্যাত্মিক আনন্দের অংশ সবাইকে
দেবে। শান্তা মহান্তো নিবসন্তি
সন্তো বসন্তবল্লোকহিতং
চরন্তঃ(বিবেকচূড়ামণি,
৩৭)।
প্রকৃত সাধু কেবল ভগবানের
কথাই বলে। মন নিচে গেলে যত
ঝগড়াঝাঁটি শুরু হয় সর্বদা
মনকে উঁচু স্তরে ধরে রাখতে
হয়,
যেখানে
কেবল আনন্দ ও ঐক্য।
শ্ৰীম-কে
কেউ যদি বলত যে ঠাকুরের বিষয়
কিছু বলুন,
তিনি
বলতেন,
‘আমি
শুধু তাঁকেই জানি আর তাঁর কথাই
বলি। উপনিষদং ভাে ক্ৰহীতি।
উক্ত ত উপনিষদ্,
ব্রাহ্মীং
বাব ত উপনিষদমক্কমেতি।” (কেন
উপনিষদ,
৪/৭)
Sri
Ramakrishna
|
আমি—মহারাজ,
আপনার
উপনিষদের প্রিয় শ্লোক কোনটি
?
মহারাজ—তুমি
আমাকে মুশকিলে ফেললে। তারপর
তিনি বৃহদারণ্যক উপনিষদ-এর
‘আত্মানং চেদ বিজানীয়াদয়মশ্মীতি
পূরুষঃ/
কিমিচ্ছ
কস্য কামায় শরীরমনুসঞ্জুরেৎ'
[কেউ
যদি পরমাত্মাকে ‘আমি ইনি’
এরূপে জানেন,
তবে
তিনি কোন বস্তুর কামনায় (এবং)
কার
প্রয়ােজনে শরীরের দুঃখে
দুঃখী হবেন?]
(৪/৪/১২)
শ্লোকটি
বললেন। মনে হয়েছিল তিনি তাঁর
নিজের অনুভব থেকে বলছেন।
আমি—আপনি
কিন্তু কথামৃতপ্রসঙ্গ-এ
এবং বিভিন্ন ভাষণে কঠ উপনিষদ
এর এই শ্লোকটি বহুবার উদ্ধৃত
করেছেন—'যথােদকং
শুদ্ধে শুদ্ধমাসিং তাদৃগেব
ভবতি। এবং মুনেৰ্বিজানত আত্মা
ভবতি গৌতম।'
(২/১/১৫)
Sri
Ramakrishna
|
৩১
জানুয়ারি ১৯৯৬,
বেলুড়
মঠ
সেদিন
দীক্ষা ছিল। তাই সকালে সাধুদের
দর্শন হলাে না। দীক্ষার পর
আমি তাঁর কাছে বিদায় নিতে
গেলাম। তিনি আমার মাথাটা নিজের
বুকে ধরে প্রাণভরে আশীর্বাদ
করলেন।
আমেরিকায়
ফিরে এলেও মহারাজকে দেখবার
জন্য খুব ইচ্ছা জাগত। তারপর
আবার একটা সুযােগ এসে গেল। ৩
আগস্ট ১৯৯৭। জাপানের টোকিও
শহরে বক্তৃতার নিমন্ত্রণ এল।
ব্যস,
ঐ
সুযােগে জাপান থেকে সিঙ্গাপুর
হয়ে বেলুড় মঠে ৫ আগস্ট রাতে
পৌঁছালাম। পরদিন সকাল ৭টায়
মহারাজকে দর্শন করতে গেলাম।
সেখানে শুনলাম,
মহারাজের
শরীর বিশেষ ভাল নয়। ডাক্তাররা
তাঁর নিরাপত্তার জন্য কাচের
দরজা-জানলার
বাইরে থেকে সাধুভক্তদের
দর্শনের বিধান দিয়েছেন।
কিন্তু আমি দূর দেশ থেকে এসেছি
বলে ভিতরে গিয়ে তাঁর পাদস্পর্শ
করার অনুমতি পেলাম। তিনি আমার
মাথা বুকে ধরে আশীর্বাদ করলেন
ও বললেন,
“দেখ,
আমার
খুব খারাপ লাগে সাধুব্রহ্মচারীরা
আমার কাছে আসতে পারছে না।
বাইরে থেকে প্রণাম করে চলে
যায়। ভাইরাস ইনফেকশনের জন্য
ডাক্তাররা এই ব্যবস্থা নিয়েছে।”
আমি—কেশব
সেন ঠাকুর সম্বন্ধে বলেছিলেন,
‘পরমহংসদেব
লাটের মাল নন। তাঁকে গ্লাসকেসে
সযত্নে রাখা উচিত। তাই আপনাকে
গ্লাসকেসে বসিয়ে দিয়েছে।
মহারাজের
জামায় মাইক্রোফোন লাগানাে
ছিল। সাধুদের উদ্দেশ করে
বললেন,
“দেখ
হে,
I am important. আমার
পায়ের কাছে এই আমেরিকার সাধু
গরুড় পক্ষীর মতাে বসে আছে।”
সবাই হাসল।
আমি—You
are great. অধর
সেন ঠাকুরকে বলেছিলেন,
“আপনার
কী power
আছে?'
ঠাকুর
বলেন,
যারা
ডেপুটি হয়ে সবাইকে ভয় দেখিয়ে
থাকে,
মায়ের
ইচ্ছায় আমি সেসব ডেপুটিকে
ঘুম পাড়িয়ে রাখি।'
আমি
-মহারাজকে
জাপানি ভক্তদের প্রণাম জানালাম।
তিনি তাদের শ্রদ্ধাভক্তির
কথা বললেন। আমি—ভগবান
যে ভক্তদের কতটা ভালবাসেন
তার কোনাে record
আছে
কি না বলুন। গােপীরা কৃষ্ণকে
কতটা ভালবাসত,
ভাগবত-এ
তার record
আছে,
কিন্তু
কৃষ্ণ গােপীদের কতটা ভালবাসতেন
তার কি কোনাে record
আছে?
মহারাজ-হ্যাঁ,
ভাগবত-এ
তার ইঙ্গিত আছে। তারপর একটা
শ্লোক বললেন। সেটি আমার মনে
নেই।
No comments