প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী
Sri
Ramakrishna
|
১০/৮/১৯৯৭,
বেলুড়
মঠ,
সকাল
৭টা
আমি—মহারাজ,
আমি
আপনার কাছে দুটি জিনিস clear
করে
নিতে চাই। প্রথম—সম্প্রতি
আমি একখানি বইতে পড়লাম,
স্বামীজী
বেলুড় মঠে আত্মারামের কৌটা
স্থাপন করে ঠাকুরের উদ্দেশে
বললেন,
বল,
তুমি
এখানে থাকবে?'
স্বামীজী
শুনলেন ঠাকুরের স্বর—‘থাকব।
স্বামীজী একথা তিন বার জিজ্ঞাসা
করেন এবং ঠাকুর তিন বার উত্তর
দেন। আপনি কি এটি শুনেছেন?
ভূতেশানন্দজী-না।
আমি–আমার
দ্বিতীয় প্রশ্ন—রামেন্দ্রসুন্দর
ভক্তিতীর্থ ঠাকুরের স্মৃতিকথাতে
লিখেছেন যে,
স্বামীজী
তাঁর এক শিক্ষককে বলেছিলেন,
যিনি
রাম,
যিনি
কৃষ্ণ,
তিনিই
রামকৃষ্ণ হয়ে এবার আবির্ভূত
হয়েছেন। একবার রাম রূপ,
একবার
কৃষ্ণ রূপ পৃথক পৃথক ভাবে তিনি
আমাকে দেখিয়েছেন। তারপর
তাঁরা দু-জনে
রামকৃষ্ণ শরীরে মিলিয়ে গেলেন।
আপনি কি একথাটি শুনেছেন?
ভূতেশানন্দজী-না।
আমি—মহারাজ,
এভাবেই
কি legend
তৈরি
হয়?
ভূতেশানন্দজী–Legends
should be taken with a pinch of salt.
আমি—বুদ্ধ
ও খ্রিস্টের শিষ্যদের নিয়ে
বহু legend
সৃষ্টি
হয়েছে। ঠাকুরের সন্তানদের
নিয়েও ভবিষ্যতে বহু legend
গড়ে
উঠবে। এখন আমরা সত্য জানব কী
করে?
ভূতেশানন্দজী—সত্য
সবসময় যাচাই করে নিতে হবে
যুক্তি ও tradition-এর
ভেতর দিয়ে। Tradition
মানে
শাস্ত্র। লােকমুখে শােনা বা
oral
tradition-ও
Sri
Ramakrishna
|
খুব
যাচাই করতে হবে। কারণ,
একই
বিষয়ে একজনের বিবরণ অপর থেকে
পৃথক হয়। বেদান্তে
শ্রুতি-যুক্তি-অনুভবের
দ্বারা সত্য নির্ধারিত হয়।
১১/৮/১৯৯৭,
বেলুড়
মঠ,
সকাল
৭টা।
এদিন
আমি মহারাজকে(ভূতেশানন্দজী) লীলাপ্রসঙ্গ-এর
ওপর অনেকগুলি প্রশ্ন করি।
যেমন কথামৃতে আছে,
হলধারী
দক্ষিণেশ্বরে জ্ঞানােন্মাদের
কাছে গিয়েছিল কিন্তু
লীলাপ্রসঙ্গ-এ
আছে হৃদয়। কোনটি ঠিক?
মহারাজ
বললেন,
“আমি
যতদূর জানি—হৃদয়।” আমি বললাম,
“শ্রীম
দর্শন-এ
(৬/১০৫)
আছে,
মাধবানন্দজী
শ্ৰীমকে একই প্রশ্ন করেন এবং
তিনি বলেন,
‘হলধারী।
তাতে মাধবানন্দজী বলেন,
এরই
মধ্যে ঠাকুরের জীবনী ও বাণী
নিয়ে difference
হতে
লাগল!'
শ্ৰীম
উত্তরে বলেন,
তাতে
আর আশ্চর্য কি?
তা
হয়। দেখুন বাইবেল।
চারটে Gospel-এর
একটির সঙ্গে আরেকটির মিল নেই।
” Goottorant
Tala, “That is a wise answer-not definite."
আমি—সাংখ্যের
প্রকৃতিলীন পুরুষ ও বেদান্তের
আধিকারিক পুরুষের মধ্যে
পার্থক্য কী?
Sri
Ramakrishna
|
ভূতেশানন্দজী—আধিকারিক
পুরুষ ঈশ্বরদর্শনের পর
লােকশিক্ষা দেন। যতদিন অধিকার
থাকে ততদিন পুনর্জন্ম—দু-এক
জন্ম চলে। আর প্রকৃতিলীন পুরুষ
প্রলয়কালে প্রকৃতির সঙ্গে
লীন হন এবং এক কল্প বা দুই কল্প
শরীর রাখেন।
আমি—নারায়ণ
শাস্ত্রী তাে ঠাকুরের প্রথম
সন্ন্যাসি-শিষ্য?
ভূতেশানন্দজী-হ্যাঁ, কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্ঘের সাধু নন।
আমি—কী রকম?
ভূতেশানন্দজী-হ্যাঁ, কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্ঘের সাধু নন।
আমি—কী রকম?
ভূতেশানন্দজী-নারায়ণ
শাস্ত্রী তাে আমাদের সঙ্ঘে
যােগ দেননি। তিনি সন্ন্যাস নিয়ে চলে গেলেন। তিনি তাঁর
নিজের মুক্তির জন্য লালায়িত
ছিলেন। এটি আমাদের সঙ্ঘের উদ্দেশ্য
নয়।
আমি—গৌরী
পণ্ডিত এক মণ কাঠ হাতের ওপর
রেখে হােম করতেন। পাশ্চাত্যবাসীদের
পক্ষে এটি বিশ্বাস করা কঠিন।
ভূতেশানন্দজী—তারা
বাইবেলের miracle-গুলাে
বিশ্বাস করে না?
তারা
যদি যিশুর ঐসব miracle
বিশ্বাস
করে,
তবে
আরেকটি miracle
বিশ্বাস
করতে আপত্তি কী?
ভূতেশানন্দজী-শূন্য
means
diversity does not exist, আর
পূর্ণ means
the diversity disappears and is replaced by one conscious principle.
পূজনীয়
ভূতেশানন্দজী ছিলেন আমার
সুপ্রিম কোর্ট। তাঁর প্রতিটি
সিদ্ধান্ত ছিল তথ্যপূর্ণ,
যুক্তিসিদ্ধ,
শাস্ত্রসম্মত
ও সন্দেহনাশক। তাঁর কথার মধ্যে
মারপ্যাঁচ বা গোঁজামিল ছিল
না। অপরের মন রেখে নিজের মতামত
দিতেন না। যা সত্য বলে বিশ্বাস
করতেন,
তা-ই
বলতেন। নতুবা বলতেন,
“আমি
জানি না।”
১৯৮৬
সালে আমি একটি প্রবন্ধ
লিখি—‘শ্রীরামকৃষ্ণের
পুনরাগমন'।
এটি কয়েক জন বিশিষ্ট সাধুকে
দেখাই,
তাঁরা
ছাপতে অনুমতি দেননি। তাঁদের
যুক্তি হলাে—এই সবে ঠাকুর
এলেন,
তুমি
আবার আরেক জন ঠাকুরকে আনবার
কথা লিখছ। এতে ভক্তেরা বিভ্রান্ত
হবে। যাহােক,
১৯৯৭
সালের ৮ ও ১১ আগস্ট আমি দু-দিন
ধরে প্রবন্ধটি মহারাজের কাছে
পড়লাম। তিনি খুব মনােযােগ
দিয়ে শুনলেন। তারপর আমি
জিজ্ঞাসা করলাম,
“মহারাজ,
এটা
ছাপানাে যেতে পারে?”
তিনি
বললেন,
“হ্যাঁ,
বেশ
হয়েছে। তুমি নিজে তাে কিছু
লেখনি,
বিভিন্ন
ব্যক্তির উক্তিগুলি সাজিয়ে
একটা যুক্তিসম্মত তথ্য খাড়া
করেছ।” আমি খুব উৎসাহিত হয়ে
ঐ প্রবন্ধের একটি মুখবন্ধ
লিখে উদ্বোধন পত্রিকার সম্পাদককে
(স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ)
দিলাম।
তিনি সেটি উদ্বোধন পত্রিকার
১০০তম বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যায়
ছাপিয়েছিলেন। পরে সেটি
শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে
গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
No comments