প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী নির্বাণানন্দ(সূর্য মহারাজ) (১৮৯০-১৯৮৪) - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী নির্বাণানন্দ(সূর্য মহারাজ) (১৮৯০-১৯৮৪)

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী নির্বাণানন্দ (১৮৯০-১৯৮৪)

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


স্বামী নির্বাণানন্দ। (১৮৯০-১৯৮৪)

১৯৬০ সালে আমি যখন যোগদান করি স্বামী নির্বাণানন্দজী (সূর্য মহারাজ)। 
ছিলেন মঠের ম্যানেজার। 
মঠে গেলে তাঁকে প্রণাম করতাম। 
ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযােগ হলাে ১৯৬৩ সালে। 
তিনি স্বামী ব্রহ্মানন্দের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে একটি album প্রকাশ করবার উদ্যোগী হন। 
খ্রিস্টোফার ইশারউড ভূমিকা লেখেন। 
আমি তখন অদ্বৈত আশ্রমে photo foreign department-এর কাজ করি। 
সূর্য মহারাজের আদেশে আমি রাজা মহারাজের সব ফটো print করে তাঁর কাছে নিয়ে যাই। 
যেহেতু তিনি রাজা মহারাজের সেবক ছিলেন এবং মহারাজের সঙ্গে ঘুরেছেন, তিনি ফটোগুলি কোথায় ও কখন তােলা হয়েছে শনাক্ত করেন।
১৯৬০ সালে শিকড়াকুলীন গ্রামে রাজা মহারাজের মন্দির নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠা হয়। 
সূর্য মহারাজের চেষ্টায় বিরাট উৎসব হয় এবং স্বামী শঙ্করানন্দজ মন্দিরে ঠাকুরের ফটো বসান। 
আমি ঐদিন সেখানে ছিলাম।
১৯৬৪-৬৫ সালে আমরা যখন ট্রেনিং সেন্টারে তখন সন্ধ্যায় ঠাকুরের ভােগ ওঠার ঘণ্টা পড়লে আমরা তাঁর ঘরে যেতাম এবং ভােগ নামার ঘণ্টা পর্যন্ত তিনি ঠাকুরের সন্তানদের কথা বলতেন। 
Those are the glorious days. এসব প্রাচীন সাধু ঠাকুরের শিষ্যদের সঙ্গে থেকেছেন এবং দেখেছেন তাঁদের দিব্যজীবন।
 তাঁদের কাছ থেকে এঁরা শুনেছেন ঠাকুর কীভাবে তাঁদের শিক্ষা দিয়েছেন। 
সব কথা বইতে নেই। 
এই verbal tradition বা মৌখিক পরম্পরা আমরা এখন প্রায় হারিয়ে ফেলেছি। 
ঐজন্য আমি ঠাকুরের সন্তানদের স্মৃতিকথা যতটা পারি ধরে রাখবার চেষ্টা করেছি উদ্বোধন থেকে প্রকাশিত স্মৃতি-সাহিত্যমালার মাধ্যমে।

এক সন্ধ্যায় সূর্য মহারাজ বলেন, “একদিন হরি মহারাজকে (স্বামী তুরীয়ানন্দ) বললাম, “মহারাজ, ঘরবাড়ি, বাপ-মা সব ছেড়ে মঠে এলাম, কিন্তু ভগবানদর্শন তাে হলাে না। 
হরি মহারাজ উত্তরে বললেন,
 “দেখ, ঠাকুর হলেন কল্পতরু।
 তােমরা সব কল্পতরু বৃক্ষের নিচে এসেছ।
 ঐ বৃক্ষে ফল ঝুলছে এই গাছের তলায় থাকলে একদিন না একদিন ফল পাবে। 
তবে ঐ ফল যদি এখনই চাও তাহলে shake the tree, shake the tree জোরে ঐ গাছে ঝাঁকুনি দাও।
 তাহলে ফল শীঘ্রই পাবে। 
এই ঝাঁকুনিই হচ্ছে তীব্র পুরুষকার।” 
এই ঘটনাটি আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

সূর্য মহারাজ আর একদিন বললেন, “আমরা একবার শরৎ মহারাজকে জিজ্ঞাসা করি, মহারাজ, আপনি লীলাপ্রসঙ্গে লিখেছেন যে, ঠাকুর সন্ন্যাসমন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন তােতাপুরীর কাছ থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার সময়। 
ঠাকুর কি আপনাদের বলেছেন যে, তিনি ঐসব মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন?'
এর উত্তরে শরৎ মহারাজ বলেন, না, ঠাকুর ঐ মন্ত্রগুলি আমাদের বলেননি
তবে তিনি বলেছিলেন যে
তিনি তােতাপুরীর কাছে দশনামী সম্প্রদায়ের আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস নিয়েছিলেন। 
তিনি যদি আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস নিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই ঐ মন্ত্রগুলি পাঠ করেছিলেন। ”
তিনি ঠাকুরের সন্তানদের বহু কথা ও কাহিনি আমাদের বলেছিলেন, তা অনেক বইতে বেরিয়ে গিয়েছে। 
রাজা মহারাজের কথা বলবার কালে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। 
তাঁর গুরুভক্তি ছিল অপরিসীম আর তেমনি ছিল কর্মক্ষমতা। 
অল্পবয়সেই তিনি মঠ-মিশনের ট্রাস্টি হন।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে আমি মায়াবতী থেকে এলে সূর্য মহারাজ একদিন ফোনে আমাকে বেলুড় মঠে ডাকলেন।
 আমি গেলে তিনি বললেন, “দেখ, আমি তােমার নাম হলিউড আশ্রমের জন্য propose করেছি।
 প্রভু মহারাজ যদি কিছু জিজ্ঞাসা করেন তুমি ‘না’ কোরাে না।”
 আমি বললাম, “মহারাজ, আমার ইংরেজিতে বক্তৃতা দেওয়ার অভ্যাস নেই। 
তাছাড়া আমার অল্প বয়স (আমি তখন ৩৪) এবং সবে সন্ন্যাস হয়েছে।”
 তিনি বললেন, “তুমি কিছু ভেবাে না। 
প্রভবানন্দ তােমাকে শিখিয়ে দেবে। 
তুমি খুব পারবে। 
মন-প্রাণ দিয়ে ঠাকুর-স্বামীজীর কাজ করবে।”
 তিনি তাে খুব উৎসাহ দিলেন। 
আমি অদ্বৈত আশ্রমে ফিরে এলাম। 
তারপর ট্রাস্টি মিটিং-এ আমাকে হলিউডে পাঠানাের সিদ্ধান্ত হয়।।

স্বামী নির্বাণানন্দজী তখন ভুবনেশ্বরে। 
আমি তাঁর আশীর্বাদ চেয়ে পত্র দিলে তিনি ১৩//১৯৭১ তারিখে আমাকে লেখেন ঃ “তুমি গতবারে আমাকে তােমার নিজের কথা সত্যই বলিয়াছিলে, কিন্তু তাহাতে ওদেশে তােমার যাওয়ার কিছু অসুবিধার কথা আমার মনে হয় নাই। 
তুমি কোনােদিন ইংরেজিতে বক্তৃতা কর নাই বলিয়া ওদেশে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি কিছু করিবে না। 
বক্তৃতাই সাধুজীবনের সর্বস্ব নয়, বা প্রচারের একমাত্র উপায় নয়। 
স্বামীজী ভিন্ন অন্য সকলের বক্তৃতা আলুনি বােধ হয়।
Swamiji was an orator by divine right. 
এইরূপ পুরুষ ব্যতীত বক্তৃতার মাধ্যমে কেহ মানুষের চেতনার উদ্রেক করিতে পারে না। 
বক্তৃতার মধ্যে বক্তার আধ্যাত্মিক শক্তির প্রকাশ থাকা চাই।
 সাধুর জীবন ত্যাগ-তপস্যা ও সাধনভজনাদির উপর প্রতিষ্ঠিত হইবে এবং ঐরূপ জীবনের সংস্পর্শে আসিলেই মানুষের মনে ধর্ম-প্রেরণা আসিতে পারে। 
ঐরূপ ব্যক্তির বক্তৃতা যেমনই হউক না কেন, তাহার প্রাণের অন্তরের কথা শ্রোতার হৃদয় স্পর্শ করিবে।।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

তুমি ঠাকুরের কাজ করিবার জন্য ওদেশে যাইতেছ। 
তুমি নিজেই অনুভব করিতে পারিতেছ—নানা বাধাবিঘ্ন ও অসুবিধার মধ্যে এক বছর পরে তােমার ওখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হইল।
 ইহা তাঁহার ইচ্ছা ভিন্ন অনা। 
কিছু নয় সুতরাং, তুমি ওদেশে গিয়া তাঁহারই যন্ত্ররূপে কাজ করিবে। 
ব্যক্তি প্রাধান্যলাভের চেষ্টা, নিজের প্রভাব বিস্তার এবং অহং-বুদ্ধির বিকাশ। 
হইতেই যত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়—এই সকল বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখিতে পারিলে আর কোনাে ভয় থাকে না।
 আমি ঠাকুর, মা, স্বামীজী ও মহারাজের নিকট আমার অন্তরের প্রার্থনা জানাইতেছি, তাঁহারা যেন তােমাকে তাঁহাদের যন্ত্র হিসাবে কাজ করাইয়া লন। 
তাঁহাদের উপর স্থির বিশ্বাস রাখিয়া তুমি ওদেশের কাজে যােগ দিলে মনে খুবই আনন্দ বােধ করিবে—আমার স্থির বিশ্বাস। 
তােমার হতাশ, নিরাশ হওয়ার বা ভয়ের কারণ কিছু নাই।
 নির্ভীকভাব, উৎসাহ ও উদ্যম সাধুজীবনের বিশেষ গুণ—নিশ্চয় জানিবে।”
স্বামী নির্বাণানন্দ মহারাজ ও গম্ভীর মহারাজের সঙ্গে একই প্লেনে আমি বেলুড় মঠ থেকে (২৭ মে ১৯৭১) বােম্বাই যাই।
 সেখানে ৩১ মে Gateway of India-তে স্বামীজীর বিরাট ব্রোঞ্জ মূর্তির উন্মােচন হয়। 
তার পরদিন ১ জুন আমি হলিউডের উদ্দেশে রওনা হই।
 তারপর থেকে মহারাজের সঙ্গে পত্রে যােগাযােগ ছিল।
 তিনি আমাকে উপদেশ দিয়ে বেশ কয়েকখানা পত্র দিয়েছিলেন।
 ঐগুলির কিছু কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি।
২৬//১৯৭১ : 
অহমিকা নিষ্প্রভ করতে পারলেই যেকোনাে কাজে কৃতকার্য হতে পারবে এবং ভগবানের কাজ থেকে শক্তি আসবে। এ আমার নিজের কথা (অভিজ্ঞতার), বই পড়ে বলছি না।”
১০//১৯৭১ ঃ “তােমরা ওখানে গিয়েছ শ্রীশ্রীপ্রভুর কাজ করতে—এই কথা একমুহূর্তও ভুল না হয়। 
সবসময় স্মরণমনন করবে। 
মহারাজ বলতেনঐরূপ করতে পারলে ধ্যানের কাজ হয়, এই অবস্থায় সমাধিও হতে পারে।

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

আর একটা কথা সবসময় মনে রাখবে—তােমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের কাজ করবার জন্য ওখানে গিয়েছ।
 তাঁর যন্ত্রস্বরূপে কাজ করাই তােমাদের একমাত্র অধিকারসুতরাং এক্ষেত্রে আমি আমার এই ভাবটা একেবারে নিষ্প্রভ হয়ে যাওয়া চাই।
 আমি বিশ্বাস করি তাঁর দয়ায় সব হয়ে যাবে।”
সূর্য মহারাজ স্বামী প্রভবানন্দজীকে প্রচুর চিঠি দিয়েছেন। সেসব চিঠি আমার কাছে আছে।
 বহু মূল্যবান কথা ও ইতিহাস সেসব পত্রে আছে।
 মহারাজ স্বামী ব্রহ্মানন্দের সেবক ছিলেন এবং ঠাকুরের বহু শিষ্যের নিকটসান্নিধ্যে কাটিয়েছেন।
 তাছাড়া ট্রাস্টি হয়ে দীর্ঘকাল বেলুড় মঠে ছিলেনফলে তাঁর জীবনের সঙ্গে মঠ-মিশনের বহু ইতিহাস জড়িত।
একদিন রাতের ক্লাসে তিনি আমাদের বলেছিলেন, “দেখঠাকুর বড় করুণাময়। তিনি একদুইশতসহস্র বার ক্ষমা করেনকিন্তু একবার যদি তিনি মুখ বাঁকান তবে তার ত্রিভুবনে স্থান নেই।
 যদি একজনও ঠিক ঠিক ঠাকুরকে ডাকে তবে এ সংঘ ঠিকমতাে চলবে।”

Read More

No comments

Powered by Blogger.