প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভাস্বরানন্দ (১৯০০-১৯৭৮)_ নেতাজীর(সুভাষচন্দ্র বসু) সম্মন্ধে অনেক খুঁটিনাটি ঘটনা লিখেছেন
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভাস্বরানন্দ (১৯০০-১৯৭৮)_ নেতাজীর(সুভাষচন্দ্র বসু) সম্মন্ধে অনেক খুঁটিনাটি ঘটনা লিখেছেন
Sri
Ramakrishna
|
তাঁহার
সঙ্গে ছিলেন কয়েক জন
জার্মানি-প্রবাসী
ভারতীয়। নির্দিষ্ট রাসবিহারীবাবু
সুভাষবাবুকে লইয়া বক্তৃতামঞ্চে
উপস্থিত হইলেন বিপুল। জনতার
সম্মুখে রাসবিহারীবাবু বলিলেন,
“Here is your belove, leader Subhas Babu, I hand him over to you.
From today onward he will be your Supreme Commander. I am too old
now, let me retire. He will lead you on to the path of freedom of
India–our Motherland. I hope you will follow him implicitly as your
destined leader.” ইহার
পর সুভাষবাবু তাঁহার ভবিষ্যৎ
কর্তব্য সম্বন্ধে কিছু বলিয়া
সভার কার্য শেষ করিলেন।
সুভাষবাবুর
মালয়ে আগমনের বার্তা বিদ্যুৎ-বেগে
সর্বত্র ছড়াইয়া পড়িল।
যাঁহারা সুভাষবাবুকে পূর্বে
ভারতে দেখিয়াছিলেন তাঁহারা
তাঁহাকে দেখিয়াই চিনিয়া
ফেলিলেন। আর যাঁহারা টোকিও-রেডিওতে
তাঁহার ভাষণ শুনিয়া ধরিয়া
লইয়াছিলেন যে,
তিনি
জাপানি-তৈয়ারি
সুভাষবাবু,
তাঁহারাও
ক্রমশঃ। তাঁহার কার্যকলাপ
দেখিয়া ও বন্ধু-বান্ধবদের
নিকট হইতে বিশ্বস্ত সূত্রে
সব। জানিয়া আর তাঁহার সম্বন্ধে
সন্দিহান হইতে পারিলেন না।
-
Sri
Ramakrishna
|
শােনানে
সমুদ্রতীরে একটি প্রাসাদোপম
বাড়িতে (Meyer's
Mansion)।
তিনি তাঁহার বাসস্থান ঠিক
করিলেন। ঐ বাড়ি সশস্ত্র
প্রহরী দ্বারা সর্বদা রক্ষিত
থাকিত। সুভাষবাবুর লিখিত
অনুমতি ব্যতীত ঐ বাড়িতে
প্রবেশাধিকার সর্বসাধারণের
ছিল না। সুভাষবাবুর প্রাণের
জন্য দায়ী জাপানিরা তাঁহাকে
সর্বতােভাবে রক্ষা করিবার
বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন।
তাঁহার যাতায়াতের সময় সুবৃহৎ
মােটরগাড়ি এবং তৎসঙ্গে
সশস্ত্র গার্ড থাকিত। একখানা
এরােপ্লেন তাঁহার জন্যই সর্বদা
প্রস্তুত থাকিত। তিনি যখনই
চাহিতেন ঐখানা জাপানি পাইলট
সহ তৎক্ষণাৎ পাইতেন।
যেদিন
হইতে রাসবিহারীবাবু সুভাষবাবুর
উপর কার্যভার অর্পণ করিলেন,
সেই
দিন হইতে তিনি অতি একাগ্রতার
সহিত কাজ আরম্ভ করিলেন। তাঁহার
সহকর্মীদের নিকট শুনিয়াছি,
তিনি
রাত্রিতে কখনও তিন ঘণ্টার
বেশি নিদ্রা যাইতেন না। সারাদিন
কর্মব্যস্ততায় কাটিয়া
যাইত। কার্যভার গ্রহণ করিবার
কিছু দিন পরেই তিনি সর্বসাধারণকে
নিমন্ত্রণ করিয়া এক বিরাট
সভা আহ্বান করিলেন। শােনানের
মিউনিসিপ্যাল অফিসের সম্মুখে
সুবৃহৎ ময়দানে এক জনসমুদ্রের
মধ্যে তিনি তাঁহার মালয়ে
আসার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রায়
দেড়ঘণ্টাকাল
Sri
Ramakrishna
|
বক্তৃতা
করিলেন। বক্তৃতার প্রারম্ভেই
মুষলধারে বৃষ্টিপাত হইতে
থাকে। আশ্চর্য এই যে,
ইহাতে
তিনি কিছুমাত্র বিচলিত না
হইয়া জনতাকে লক্ষ্য করিয়া
তাঁহার বক্তব্য-বিষয়
অনর্গল বলিয়া যাইতে লাগিলেন।
জনতার কেহই বারিপাতের দিকে
লক্ষ্য না করিয়া তাঁহার
বক্তৃতা শুমিল। দেখা গেল,
বক্তৃতার
শেষে সকলেই আর্দ্র বস্ত্রে
অথচ শান্তচিত্তে গৃহে ফিরিয়া
গেল। কথাপ্রসঙ্গে কখনও কখনও
সুভাষবাবু এই সভার কথা উল্লেখ
করিয়া বলিতেন,
“দেখলেন,
সেদিন
সভাতে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়া
সত্ত্বেও সবাই কেমন অবিচলিতচিত্তে
বক্তৃতা শুনছিল। এতেই স্পষ্ট
বােঝা যায় যে,
আমাদের
কাজের জন্য সাধারণের সহানুভূতি
অপর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া
যাবে। এতে কিছুমাত্রও সন্দেহ
নেই।”
১৯৪৩
সালের বিজয়াদশমীর রাত্রিতে
সুভাষবাবু তাঁহার বাসভবন
হইতে সিঙ্গাপুর Indian
Independence League-এর
মারফত গাড়ি পাঠাইয়া আমাকে
তাঁহার সহিত অনতিবিলম্বে
দেখা করিতে অনুরােধ করিলেন।
তখন রাত্রি ৯টা হইবে। আমি ঐ
গাড়িতেই তাঁহার সহিত দেখা
করিতে গেলাম।
No comments