প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪
প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী
ধর্মেশানন্দ(১৮৯৯-১৯৯৪)।
১৯৮২
সালে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে
কাশীতে কয়েক দিন ছিলাম।
ঐকালে
কয়েক জন প্রাচীন সাধুকে
interview
করি
এবং তাঁদের স্মৃতিকথা ক্যাসেট
টেপে ধরে রাখি।
সেই টেপ থেকে
এসব মূল্যবান স্মৃতিকথা লেখা
হলাে।
১৯/৮/১৯৮২
তারিখে স্বামী ধর্মেশানন্দকে
(ধীরেন
মহারাজ)
কাশীর
অদ্বৈত আশ্রমে প্রশ্ন করে
তাঁর স্মৃতিকথা টেপ করি।
তিনি
শ্রীম-র
খুব ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এসেছিলেন
এবং ঠাকুরের অন্যান্য শিষ্যের
সঙ্গেও বাস করেছেন।
পুরানাে
উদ্বোধনে আমি তাঁর শ্ৰীম সমীপে
পড়েছিলাম।
সেজন্য আমি তাঁকে
শ্ৰীম-র
সম্বন্ধে বলতে অনুরােধ করলাম।
Sri
Ramakrishna
|
শ্ৰীম-র
স্মৃতি
১৯২১-২২
সালে আমি প্রথম শ্রীম-র
কাছে যাই।
তিনি আমহার্স্ট
স্ট্রিটের মর্টন ইনস্টিটিউশনের
চারতলায় থাকতেন।
এর পূর্বে
আমি সুরেনবাবুর কাছ থেকে নিয়ে
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত-এর
চতুর্থ ভাগ পড়ে খুব আনন্দ
পাই।
তিনি আমাকে বলেন,
“এই গ্রন্থের লেখক এখনাে বেঁচে আছেন।”
তারপর একদিন বিকালে
আমরা দু-জনে
শ্রীম-র
কাছে যাই।
তিনি চেয়ারে বসেছিলেন
এবং আমরা একটা বেঞ্চিতে বসলাম।
আষাঢ় মাস।
রথযাত্রার কয়েক
দিন পরে।
শ্ৰীম পুরীর জগন্নাথদেবের
মহাপ্রসাদের গুণকীর্তন করতে
লাগলেন।
এই প্রসাদ ঠাকুর
খেতেন।
শ্রীম-ও
নিত্য খান।
তিনি আমাদের সকলের
হাতে ঐ প্রসাদ (শুকনাে
ভাত)
দিয়ে
বললেন,
“এই প্রসাদ ধারণ করলে ভক্তি হয়।”
আমি তখন কলেজের ছাত্র,
ব্রাহ্মসমাজে
যাই।
সব বিচার করে নিই।
প্রসাদে
কোনাে বিশ্বাস ছিল না।
আমি
শ্ৰীম-কে
বললাম,
“হ্যাঁ, কেউ যদি বিশ্বাস করে খায় তবে ভক্তি হতে পারে।”
তিনি বললেন,
“ঠাকুর বলেছেন—এই প্রসাদ খেলে ভক্তি হবে। ”
আমি বললাম,
“তা কী করে হবে?”
আমার
তর্কযুক্তি শুনে শ্ৰীম বললেন,
“বিষ যদি তুমি না জেনে খাও, তাহলেও মৃত্যু হবে। দেখ হে, সব বস্তুরই একটা গুণ আছে।”
Sri
Ramakrishna
|
তারপর
তিনি গম্ভীর হয়ে আমার দিক
থেকে মুখ সরিয়ে অন্য ভক্তদের
দিকে তাকিয়ে বললেন,
“দেখুন, এই বাবুটি ঠাকুরের কথা বিশ্বাস করছেন না ”
সকলে নিস্তব্ধ।
সুরেনবাবু
আমার দিকে চেয়ে আছেন।
আমি
অপ্রস্তুত হয়ে তাঁর কাছ থেকে
প্রসাদকণা গ্রহণ করলাম।
তারপর
থেকে আমি প্রায়ই শ্ৰীম-র
কাছে যেতাম।
১৯২১
সালে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে
একবার বেলুড় মঠে দর্শন করেছি।
১৯২৪ সাল থেকে আমি বিবেকানন্দ
সােসাইটিতে ছিলাম এবং কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশােনা
করতাম।
সেখানকার ব্রহ্মচারী
তারকের সঙ্গে আমি আবার শ্রীম-র
কাছে যাই।
আমাদের দেখে শ্ৰীম
তারককে জিজ্ঞাসা করেন,
“তুমি কী কর?”
সে
বলল,
“আমি সােসাইটির চাঁদা সংগ্রহ করি। সেখানে সাধুরা এসে সপ্তাহে দুটি ক্লাস নেন। ভজনাদি হয় এবং রামনাম সঙ্কীর্তন হয়। আমি ঐসব ব্যবস্থা করি।”
এরপর
শ্ৰীম আমাকে জিজ্ঞাসা করেন,
“তুমি কী কর?”
আমি
বললাম,
“আমি সকালে পূজা করি, সন্ধ্যায় আরতি করি এবং দু-ঘণ্টা লাইব্রেরির কাজ করি।”
Sri
Ramakrishna
|
শ্ৰীম
শুনে বললেন,
“বাঃ, তােমার কাজটি তাে বেশ! তুমি সুগন্ধি চন্দন ঘষছ পূজার জন্য, ফুল দিয়ে ঠাকুরকে সাজাচ্ছ। ঠাকুর পবিত্রতম। সেই ঠাকুরের পূজা করছ, সবকিছু নিবেদন করছ। তােমার এ কাজটি বেশ। এ কাজটি তুমি ছেড়াে না। পূজার দ্বারা শীঘ্রই ভগবানের কৃপালাভ হয়।”
এই বলে তিনি
আমাকে খুব উৎসাহ দিলেন।
তারপর
আমি ঠিক করলাম সাধু হব এবং
বেলুড় মঠে যােগ দেব।
আমার
ইচ্ছা জেনে শ্রীম বলেন,
“দেখ, সাধু হতে গেলে মৃত্যুচিন্তা করতে হবে। কঠ উপনিষদ্-এ আছে-নচিকেতা মৃত্যুর রাজা যমের কাছে গিয়েছিলেন মরণের পরে কী আছে জানবার জন্য। তিনি যমের কাছ থেকে জেনেছিলেন মৃত্যুহীন অমর আত্মাকে। তুমি এখন থেকে রােজ শ্মশানে যাবে এবং সেখানে কী দেখলে তা আমাকে জানাবে।”
আমি কয়েক দিন শ্মশানে গিয়েছিলাম।
কটা মড়া পুড়ল ও শ্মশানের
পরিবেশ প্রভৃতি সব রিপাের্ট
তাঁকে দিতাম।
যাহােক,
একদিন
কোনাে কারণে যাইনি।
তাতে শ্ৰীম
বলেন,
“না, ঠিক হলাে না। তােমাকে রােজ যেতে হবে।”
আমি বললাম,
“আমি
ঐদিন এক বন্ধুবাড়িতে গিয়েছিলাম।
তার পাশের বাড়িতে একজন মারা
যায়।
No comments