প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪
প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪
Sri
Ramakrishna
|
আমি
তাদের কান্না শুনলাম।” একথা
শুনে শ্ৰীম বললেন,
“হ্যাঁ,
এ-ও
ভাল অভিজ্ঞতা। দেখ,
মৃত্যুচিন্তা
না করলে মরণের পারে যে ভগবান
আছেন সে। বােধ হয় না।” এভাবে
তিনি আমার মনে বৈরাগ্যের ভাব
ঢােকালেন।
১৯২৬
সালে আমি কলকাতা ছেড়ে দেওঘর
বিদ্যাপীঠে join
করি।
সেখানে চার বছর ছিলাম। ঐখানে
আমার স্বাস্থ্য ভাল না থাকায়
১৯৩০ সালে আমি বেলুড় মঠে
মহাপুরুষ মহারাজের কাছে আসি।
তিনি আমাকে কাশীতে যেতে বললেন।
কাশী যাওয়ার পূর্বে আমি
প্রায়ই শ্ৰীম-কে
দেখতে যেতাম। ঐকালে প্রয়াগে
কুম্ভমেলা হয়। শ্ৰীম আমাকে
বলেন,
“ধীরেন,
তুমি
কুম্ভমেলায় যাও। বেশ হবে।
দেখবে সাধুদের একটি সমাজ আছে।
সংসারের প্রতি ঘনিষ্ঠতা কমে
যাবে। ওখানে নানা সম্প্রদায়ের
সাধুর সমাগম হয়। মাসাধিক
কাল প্রতিদিন সেখানে ঐসব
সাধুসমাজে ভগবৎ-গুণগান,
শাস্ত্রচর্চা,
শােভাযাত্রা,
ভাণ্ডারা
দেখলে আনন্দ পাবে ও অনেক
অভিজ্ঞতা হবে। তারপর ঐসব
বর্ণনা আমাকে লিখবে।”
Sri
Ramakrishna
|
তারপর
বেলুড় মঠ থেকে অনেক সাধুর
জন্য একটা রেলের কামরা reserve
করা
হয়েছিল। আমি তাঁদের সঙ্গে
কুম্ভমেলায় গেলাম এবং গঙ্গা।
যমুনার সঙ্গমের কাছে এক ক্যাম্পে
থাকলাম। আমি কুম্ভমেলার বর্ণনা
লিখে। একটা বিস্তারিত পত্ৰ
শ্ৰীম-কে
পাঠিয়েছিলাম। কুম্ভমেলার
পর কাশী যাই এবং সেখান থেকে
আলমােড়ায় তপস্যা করতে যাই।
আলমােড়ার কুঠিয়ায়। নির্জনবাস
ও পরিবেশ সম্বন্ধে শ্রীম-কে
চিঠি লিখি। তিনি উত্তরে
লিখেছিলেন :
“এই
নির্জন হিমালয়ে একমনে তুমি
শ্রীশ্রীঠাকুরের চিন্তায়
কাল কাটাইতেছ। কী সুন্দর
পরিবেশ,
ইচ্ছা
হয়,
এই
বৃদ্ধ বয়সে ঐ কুটিরে থাকিয়া
তপস্যা করি। তপসা চীয়তে
ব্ৰহ্ম। কিন্তু একাকী বাসকালে
‘সাধু সাবধান’-শ্রীশ্রীঠাকুরের
এই মহাবাক্য সর্বদা স্মরণ
করিবে।”
এর
এক বছর পরে আমি কলকাতায় ফিরে
শ্রীম-র
সঙ্গে দেখা করি। তিনি বললেন,
“আহা!
তােমার
কুম্ভমেলার কী বর্ণনা!
আমি
সর্বপ্রথম তােমার চিঠি পাই।
দেখ,
ভারতবর্ষের
মতাে এমন সুন্দর দেশ পৃথিবীতে
নেই। এখানে সাধু-সন্তেরা
তপস্যা করেন ও ভিক্ষার দ্বারা
জীবনধারণ করেন। লােকে সাধুদের
ভিক্ষা দেয় যাতে তাঁরা ভগবানের
ধ্যানে জীবন কাটাতে পারেন।”
হরি
মহারাজ নিজ জীবনে গীতা অভ্যাস
করে তার মর্ম অনুভব করতেন।
Sri
Ramakrishna
|
তিনি
ছিলেন মূর্তিমান গীতা। তিনি
শুকদেবের মতাে শুদ্ধ ও পবিত্র
ছিলেন। মহাপুরুষ মহারাজ আমাকে
গীতার এই শ্লোকটি ধ্যান করতে
বলেছিলেন‘গতিৰ্ভর্তা প্রভুঃ
সাক্ষী নিবাসঃ শরণং সুহৃৎ।
প্রভবঃ প্রলয়ঃ স্থানং নিধানং
ৰীজময়।'
(৯/১৮)—আমিই
প্রাণীদের পরাগতি ও পরিপালক।
আমি প্রভু ও সকল প্রাণীর
বাসস্থান ও তাদের কৃতাকৃতের
সাক্ষী। আমি রক্ষক ও হিতকারী।
আমি স্রষ্টা ও সংহর্তা। আমিই
আধার ও প্রলয় স্থান এবং জগতের
অক্ষয়কারণ।
আলমােড়ায়
থাকাকালে আমি রােজ গীতার নবম
ও দশম অধ্যায় পাঠ করতাম। এই
দুই অধ্যায়ে অনেক ভক্তির
কথা আছে,
কিন্তু
ভাবভক্তি আমার তেমন বােধ হতাে
না। আমি ঠাকুরের কাছে খুব
প্রার্থনা করতাম। তারপর ভাবলাম
মহাপুরুষ মহারাজ রয়েছেন এবং
শ্রীম এখনাে জীবিত আছেন। এদের
সঙ্গলাভ দুর্লভ। এঁদের কাছেই
যাই। সৎসঙ্গ সাধুজীবনে অবশ্যই
চাই।
Sri
Ramakrishna
|
যাহােক,
ঠাকুর
আমার প্রার্থনা শুনেছিলেন।
কাশীতে ফিরে তিন-চার
মাস থাকার পর অক্টোবর মাসে
স্বামী বিরজানন্দ মহারাজের
একটি চিঠি পাই। তিনি তখন জেনারেল
সেক্রেটারি। তিনি লেখেন :
“উদ্বোধন
পত্রিকার একজন sub-editor
দরকার।
তুমি সত্বর এখানে চলে এসাে।”
আমার খুব আনন্দ হলাে। আমার
উদ্বোধনে খুব থাকার ইচ্ছা,
কারণ
মঠে আমার শরীর ভাল থাকত না।
উদ্বোধনে থাকাকালে আমি সপ্তাহে
তিন-চার
দিন শ্ৰীম-র
কাছে যেতাম।
শ্ৰীম
মর্টন স্কুলের চারতলায় একটা
ঘরে থাকতেন। সে ঘরে একটি খাট,
কয়েকটা
বই-এর
আলমারি,
দেওয়ালে
ঠাকুর,
মা
ও স্বামীজীর ছবি এবং একপাশে
ঠাকুরের ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র
ছিল।
একদিন
তাঁকে দেখতে গিয়েছি। তিনি
খাটে বসেছিলেন। আমি মেঝেতে
বসলে তিনি আমাকে আবৃত্তি করতে
বললেন—“অসতাে মা সঙ্গময়।
তমসাে মা জ্যোতির্গময়।
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।'—অসৎ
থেকে আমাকে সৎ-এ
নিয়ে যাও। অন্ধকার থেকে আমাকে
আলােকে নিয়ে যাও। মৃত্যু
থেকে আমাকে অমৃতে নিয়ে যাও।
শ্ৰীম প্রার্থনার ওপর খুব
জোর দিতেন এবং বলতেন,
"Prayer is the golden link between the short life and eternal
life. এই
short
life ভগবানকে
দিতে হবে। খুব করে প্রার্থনা
করাে। দেখ,
তাঁর
কৃপা ছাড়া কিছু হয় না।”
No comments