প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী ধীরেশানন্দ (১৯০৭-১৯৯৮)
প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী ধীরেশানন্দ (১৯০৭-১৯৯৮)
Sri
Ramakrishna
|
‘সুখ
স্বপনা দুঃখ বুদবুদা,
দোনােহী
এক সমান। তিকা আদর কীজিয়ে,
জো
ভেজে ভগবান।'—সুখ
স্বপ্নের মতাে। দেখতে দেখতেই
অদৃশ্য হয়ে যায়। দুঃখও হলাে
বুদ্বুদতুল্য। তা-ও
স্থায়ী নয়। দুটোকেই সমানরূপে
জানাে। দুটোকেই তুল্যরূপে
আদর করাে। যখন যেটা ভগবান দেন
সেটাই সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ
করাে। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
নতুবা আর কী করবে?
দুঃখ
এলে হয়তাে হায় হায় করবে,
আর
একটু সুখ পেলে হর্ষে উৎফুল্ল
হয়ে উঠবে। এই হর্ষ-বিষাদের
দ্বন্দ্বে হাবুডুবু খাবে,
আর
কী?
এভাবেই
জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে।
স্ব-স্বরূপে
স্থিত থাকাই সুখ। স্বরূপ
বিচ্যুতিই দুঃখ। মানুষ যখন
ভাল থাকে,
তখন
কেন ভাল আছ বা সুখে আছ—এই প্রশ্ন
কেউ করে না। যদি বলে দুঃখে
আছি,
তখন
লােকে দুঃখের কারণ জিজ্ঞাসা
করে। যেটা স্বাভাবিক অবস্থা
সে-বিষয়ে
প্রশ্ন হয় না। অগ্নি উষ্ণ
বা জল শীতল কেন—এ প্রশ্ন হয়
না। উলটোটা হলে প্রশ্ন হয়।
সেইরূপ সুখে থাকাই জীবের
স্বভাব,
কারণ
সুখ তার স্বরূপ। তাই সুখে বা
স্বরূপে থাকলে প্রশ্ন হয়
না। দুঃখ অর্থাৎ স্বরূপ থেকে
বিচ্যুত হলেই প্রশ্ন হয়—কেন
ওরূপ হলাে ইত্যাদি। সুতরাং,
সুখই
জীবের স্বরূপ। স্ব-স্থতাই
সুখ। অ-স্ব-স্থতাই
দুঃখ।
Sri
Ramakrishna
|
২৪/১২/১৯৮২,
কাশী
সেবাশ্রম।
বেদান্তের
প্রকরণ গ্রন্থগুলির মধ্যে
বিশেষ প্রয়ােজনীয় আমার মনে
হয় ঃ (১)
বিবেকচূড়ামণি,
(২)
আত্মবােধ,
(৩)
তত্ত্ববােধ,
(৪)
উপদেশ
সাহসী ও শঙ্কর রচিত আরাে ছােট
ছােট বই,
(৫)
পঞ্চদশী,
(৬)
নৈষ্কৰ্য্যসিদ্ধি,
(৭)
সটীক
বেদান্তসার। পঞ্চদশী-টি
প্রক্রিয়া,
সাধন
ও সাধ্য বিষয়ের নির্ণয়াত্মক
অদ্বিতীয় পুস্তক। অপরােক্ষানুভূতি,
বাক্যবৃত্তি,
লঘুবাক্যবৃত্তি,
পঞ্চীকরণ
বাৰ্ত্তিক—এসবই অতি উত্তম
পুস্তক। বেদান্তজ্ঞানের জন্য
প্রকরণ গ্রন্থই প্রথম বেশি
পড়া কর্তব্য। পরে ভাষ্যাদি।
প্রকরণ গ্রন্থের বিশেষ পঠনপাঠন
আমাদের সঙ্ঘে হয় না। তাই
ভাষ্যাদি পড়েও প্রক্রিয়ার
বােধের অভাবে সিদ্ধান্ত বিষয়ে
সুস্পষ্ট ধারণা হয় না অধিকাংশেরই।
Sri
Ramakrishna
|
তুমি
আমাকে যে-বিষয়ে
প্রবন্ধ (বেদান্ত
সম্পর্কে লিখতে বলেছ,
তা
আমার দ্বারা এখন আর হবে না।
শরীর রােগজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
তাই শরীর ও মনের উভয়েরই আর
পূর্বের ন্যায় শক্তিসামর্থ্য
নেই। এখন ‘অব শিব পার করাে
মেরে নেইয়া'—এই
ভাব। ঠাকুরের নাম করে যাতে
ভালয় ভালয় চলে যেতে পারি,
এখন
এই আশীর্বাদ অর্থাৎ শুভেচ্ছাই
তােমরা সকলে কোরাে। Chronic
গােটাকতক
উপদ্রব প্রারব্ধ-ভােগ
ক্ষয় করিয়ে নিচ্ছে। তা দেখে
যাচ্ছি। এখন কবে এই প্রপঞ্চ-স্বপ্ন
ভাঙবে—এই প্রতীক্ষায় আছি।
‘যথা
গন্ধর্বনগরং যথা বারি মরুস্থলে।।
তথা
বিশ্বমিদং দৃষ্টং বেদান্তে
বিচক্ষণৈঃ।
এই
তাে আমাদেরও প্রাণের কথা।
উত্তরাখণ্ডের এক বেদান্তী
বৃদ্ধ সাধুর কথা :
রােগজীর্ণ
চলচ্ছক্তিহীন মহাত্মা আমাকে
বলেছিলেন,
“দেখ,
ললাকে
আশীর্বাদ করে—‘শতং জীব’—দীর্ঘায়ু
হও। কী মূখতা!
দীর্ঘায়ু
হয়ে এইরূপ বুড়াে হয়ে বেঁচে
থাকা!
যত
বেশি আয়ু হবে ততই তাে এইরূপ
শরীর নিয়ে চলতে হবে। এর চেয়ে
দুর্ভাগ্য,
কষ্ট
আর কী হতে পারে? তবু
লােকে দীর্ঘায়ু চায়। বেঁচে
থাকতে চায়। কী মূখতা!
এইরূপ
বিচার এলে অন্তত বৃদ্ধাবস্থাতেও
শরীরের প্রতি বৈরাগ্য আসবে।
বিচারবানেরই হবে,
অপরের
নয়। শাস্ত্রেরও এই উদ্দেশ্য।
তাই শাস্ত্র বলেন—“জিজীবিষেৎ
শতং সমাঃ।
Sri
Ramakrishna
|
“শুকের
আত্মজ্ঞানের পরীক্ষা নেওয়ার
জন্য রাজর্ষি জনক তাঁকে নগর
ভ্রমণ
করে আসতে বললেন। শুক ফিরে এলে
জনক তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“কী
দেখলে?'
শুক
উত্তর দিলেন,
দেখলাম,
সব
চিনির পুতুল অন্য সব চিনির
পুতুলের সঙ্গে রাগদ্বেষাত্মক
ব্যবহার করছে। জনক পুনরায়
জিজ্ঞাসা করলেন,
আর
এখন কী দেখছ?’
শুক
বললেন,
‘এক
চিনির পুতুল (জনক)
অন্য
চিনির পুতুলকে (শুককে)
প্রশ্ন
জিজ্ঞাসা করছে ও দ্বিতীয়টি
তার উত্তর দিচ্ছে'।
জনক বললেন,
যাও,
এখন
তুমি আত্মজ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত
হয়েছ। ”
কেমন
কথা!
আমাদেরও
এইরকমই তাে হতে হবে?
কী
বল?
No comments