প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী ধীরেশানন্দ (১৯০৭-১৯৯৮) - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী ধীরেশানন্দ (১৯০৭-১৯৯৮)

প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী ধীরেশানন্দ (১৯০৭-১৯৯৮)




দু-মাস পরে ডায়েরিগুলি পৌঁছালে আমি প্রাপ্তিসংবাদ দিই এবং উত্তরাখণ্ডের ঐসব মহাত্মার পরিচিতি জানতে চাই। এর উত্তরে মহারাজ ১৬//১৯৮৬ তারিখে কাশী থেকে লেখেন ঃ “Parcel-টি নির্বিঘ্নে পৌঁছেছে জেনে খুবই নিশ্চিন্ত হলাম। উক্তিগুলি তােমার খুব ভাল লেগেছে ও তা। তােমার কাজে লাগছে জেনে আনন্দ হলাে। যদি তুমি মনে কর, তবে পছন্দমতাে বিষয়গুলি নিয়ে একটি ছােট বইও ছাপাতে পার। তাতে ঐ মহাত্মাদের নাম দিয়াে, কিন্তু আমার নাম দেওয়ার দরকার নেই। যা ভাল বােঝ, কোরাে। মহাত্মাদের আন্তরিক কথা হৃদয়গ্রাহী ও সকলের হিতকারী।”
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

আমি কাশীতে গুরুদাস গুপ্তকে দেখেছি, কিন্তু কোনাে কথাবার্তা হয়নি। তিনিও কাশী সেবাশ্রমের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকতেন। কাশীর অদ্বৈত আশ্রমের বারান্দায় প্রাচীন সাধুরা স্মৃতিচারণ করতেন। গুরুদাসবাবু সেসব শুনে ঘরে। এসে লিখতেন। ঠাকুরের সন্ন্যাসি-শিষ্যদের ও গৃহি-শিষ্যদের জন্য আলাদা আলাদা খাতা ছিল। ঐসব ডায়েরি তিনি মৃত্যুর আগে ধীরেশানন্দ মহারাজকে দিয়ে যান এবং পরে সেগুলি আমি কাশীতে গিয়ে স্বামী রঘুবরানন্দজীর কাছ থেকে সংগ্রহ করি। গুরুদাসবাবু সম্বন্ধে মহারাজ আমাকে ২৪/১১/১৯৮১ তারিখে লিখেছিলেন ঃ “Direct Disciple-দের বিষয়ে শ্রদ্ধেয় শ্রীগুরুদাসবাবুর লেখা (প্রকাশিত-অপ্রকাশিত; প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য) অনেকগুলি খাতা তাঁর দেহ যাওয়ার পর আমার কাছে রয়েছে। তাঁকে তাে জান? নড়াইল College-এর Mathematics Professor ছিলেন। আকুমার ব্রহ্মচারী, স্বামী সারদানন্দ মহারাজের কৃপাপ্রাপ্ত প্রিয়শিষ্য, আজীবন সাধনভজনশীল, সুপণ্ডিত, মধুরভাষী গুরুদাসবাবু বহু সদ্‌গুণের আধার ছিলেন। শেষে বহু বৎসর কাশী সেবাশ্রমেই কাটিয়ে বিশ্বনাথের চরণে লীন হয়েছেন।”
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


এইসব মূল্যবান ডায়েরি আমাকে  They Lived with God, God Lived with Them এবং উদ্বোধন থেকে প্রকাশিত ঠাকুরের সন্তানদের। স্মৃতিমালা লিখতে খুব সাহায্য করেছে। আমাদের প্রজন্মের কেউ ঠাকুরের শিষ্যদের দেখেনি। কিন্তু তাঁদের শিষ্য ও ভক্তদের প্রত্যক্ষ বিবরণ আমাদের অনেক তথ্য জানিয়ে দিয়েছে। এসব সাধুর স্মৃতিকথা লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে, ঐসব প্রাচীন সাধু যদি ডায়েরি লিখে যেতেন তাহলে আমরা ঠাকুর, মা ও সন্ন্যাসি-শিষ্যদের কত কথা জানতে পারতাম। গতস্য শােচনা নাস্তি। আমরা যা সংগ্রহ করতে পেরেছি, তাতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। 
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna



মহারাজ আমাকে অনেকগুলি চিঠি লিখেছিলেন। ঐসব চিঠিতে থাকত বহু সারগর্ভ উপদেশ, শাস্ত্রবাক্য ও সাধনসঙ্কেত। এখানে কয়েকটা চিঠির উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি।
৩০//১৯৮১, কাশী সেবাশ্রম
তােমাকে এক প্রাচীন সাধুমুখে-শ্রুত একটি উপদেশ উপহার দিচ্ছি :-
লােকে সাপ ও নেউলের খেলা দেখে। নেউল সাপকে কামড়ায়, আবার সাপও নেউলকে কামড়ায়। সাপে কামড়ালে নেউল তাড়াতাড়ি বাইরে চলে যায় আবার ফিরে আসে। লােকে বলে নেউল ঐ সময়ে জঙ্গলে গিয়ে কোনাে জড়িবুটির (শিকড় বা লতাপাতার) আঘ্রাণ নেয়, তাতে সাপের বিষের প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়। নেউল যেন জ্ঞানী। ব্যবহারকালে জ্ঞানীকে কেউ হয়তাে অপমান করল অথবা অন্য কোনাে বিক্ষেপের কারণ ঘটল, তখন জ্ঞানীও আত্মজ্ঞানরূপী জড়িবুটির আঘ্রাণ করে বিক্ষেপজনিত বিষক্রিয়া হতে মুক্ত হয়ে যান। যখনই চিত্ত বহির্মুখ হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে তখন জ্ঞানীও অন্তর্মুখ হয়ে নেউলের মতাে আত্মজ্ঞানরূপী জড়িবুটির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। তার প্রভাবে ব্যবহারজনিত বিক্ষেপের প্রভাব আর থাকে না। যতদিন শরীর আছে ততদিন ব্যবহার থাকবেই এবং তার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া থাকবেই। তখন চিত্তের বিক্ষেপও থাকবে, কারণ চিত্তের এটাই স্বভাব। কিন্তু আত্মজ্ঞানরূপী জড়িবুটি থাকতে ভাবনা কীসের? কোনাে বিষই তাকে ঘায়েল করতে পারবে না। আমি আত্মা, দৃশ্য মিথ্যা—একটা প্রতীতি মাত্র। এক আমিই নানা দৃশ্যরূপে প্রতীত হচ্ছি। ভ্রান্তিকালে রজ্জুতে সর্প দৃষ্ট হয়। রজ্জতেই সর্প স্থিত তথা সর্পেতেই রজ্জ্ব অনুসূত হয়ে আছে। অর্থাৎ কেবল রক্ষ্মই সর্পরূপে ভান হচ্ছে। সর্বভূতেষু চাত্মানং সর্বভূতানি চাত্মনি’–এই শ্লোকেরও এটাই তাৎপর্য। অর্থাৎ সেই একই  ঠাকুরের খেলা হচ্ছে এসব বিশ্ব সংসারে। এক তিনিই সর্বরূপে প্রতীত হচ্ছেন। এই তাে হচ্ছে এক মহানাটক।

No comments

Powered by Blogger.