প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ)
প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪
Sri
Ramakrishna
|
শ্ৰীম
আমাকে খুব স্নেহ করতেন এবং
ঠাকুরের কথা খুব বলতেন।
তাঁর
ঘরের সামনে ছিল এক বড় ছাদ এবং
চারিদিকে উঁচু দেওয়াল।
আকাশ
ছাড়া আর কিছু দেখা যেত না।
সেই ছাদের ওপর টবে তিনি নানা
ফুলগাছ তুলসীগাছ প্রভৃতি
লাগিয়ে ঋষিদের মতাে তপােবন
সৃষ্টি করেছিলেন।
প্রতিদিন
বিকালে ভক্তেরা এলে তাদের
নিয়ে সেখানে ধ্যান করতেন।
আমি একবার ভুল করে আসন ফেলে
উদ্বোধনে চলে এসেছিলাম।
তার
পরদিন বেলা দুটোর সময় গােপনে
আসনখানা আনতে যাই।
শ্ৰীম আমাকে
দেখে হাতটি ধরে তাঁর খাটের
ওপর বসালেন।
তারপর তিনি বললেন,
“তােমার
কথাই ভাবছিলাম।
তােমার সঙ্গে
আমার কথা আছে।”
আমি বললাম,
“আমাকে
এখুনি ফিরতে হবে।
মায়ের
বাড়ীতে তিনটের সময় স্বামী
বাসুদেবানন্দ ছান্দোগ্য
উপনিষদ-এর
ক্লাস নেন,
সেখানে
আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে।”
তিনি বললেন,
“দেখ
অধ্যয়ন করে ভগবানের কাছে
যাওয়া তাে royal
path. তা
যুগ যুগ ধরে রয়েছে।
দেখ,
ঠাকুরকে
ধরাে।
তাঁকে ধরে ক্লাস করাে।
তিনি এই সবে এসেছিলেন।
এই
সুবর্ণ সুযােগ।
তিনি সাক্ষাৎ
ভগবান।
তাঁরই চরণতলে বেদবেদান্ত
পড়ে রয়েছে।
তাঁকে ধরলে এখুনি
ঐসব জ্ঞান পাবে।
খুব তাড়াতাড়ি
গন্তব্যস্থানে পৌঁছে যাবে,
- নতুবা বড় দেরি হয়ে যাবে—
- অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
Sri
Ramakrishna
|
কিন্তু
আমার তখন শাস্ত্রের প্রতি
দারুণ আসক্তি।
সবাই বলত যে,
শাস্ত্র
না পড়লে জ্ঞান হবে না।
আমি
শ্ৰীম-র
কাছ থেকে হাত টেনে নিয়ে
উদ্বোধনে চলে এলাম।
আমি মূঢ়ের
মতাে তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধা
জানালাম ও তাঁর কথায় বিশ্বাস
করলাম না।
এখন মনে হয় তিনি
আমাকে হয়তাে কোনাে গূঢ়
আধ্যাত্মিক তত্ত্ব বলতে
চেয়েছিলেন।
পরে
শ্রীম-কে
বলেছিলাম,
“আমার ধ্যান-ধারণা ঠিকমতাে হচ্ছে না। আপনি কিছু করে দিন।”
তখন তিনি বলেছিলেন,
“দেখ,
যদি
কেবল শাস্ত্র নিয়ে থাক,
তবে
ধ্যান-ধারণার
গভীরে ঢুকতে পারবে না।
ভগবানের
কাছে প্রার্থনাই আসল।
তুমি
যখন তা পারলে না,
এখন
তােমার পক্ষে কেবল ভগবানের
কথা কওয়া হচ্ছে সাধনা।
কথয়ন্তশ্চ মাং নিত্যং তুষ্যন্তি
চ রমন্তি চ।'
(গীতা,
১০/৯)—
আমার
ভক্তেরা নিত্য আমার তত্ত্বগুণ
ও লীলাকথা আলােচনা করে তুষ্ট
হয় ও আনন্দ লাভ করে।
পরস্পরং
ভাবয়ন্তঃ শ্রেয়ঃ পরমবান্স্যথ।'
(গীতা,
৩/১১)—
এইরূপে
পরস্পরের সন্তোষ সাধন দ্বারা
Sri
Ramakrishna
মঙ্গল
লাভ করবে।
গীতার এই বাক্য
অনুসরণ করাে।
ভক্তদের সঙ্গে
ভগবানের কথা বলতে বলতে তােমার
ভক্তি হবে। কেবল তাঁর বিষয়
চিন্তা করবে।”
শ্ৰীম
ছিলেন আমার পরম হিতৈষী ও
মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী।
একদিন একজনের
সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়।
দুপুরে খাওয়ার পর আমি তাঁর
কাছে।
গেলাম সান্ত্বনা পাওয়ার
জন্য।
আমাকে দেখে তিনি আদরের
সঙ্গে ডাকলেন,
“এসাে,
এসাে।”
আমাকে বেঞ্চিতে বসতে বললেন।
তারপর আমার হাতে কয়েকটা
pamphlet
দিয়ে
বললেন,
“এই
দেখ,
দেবাসুরের
সংগ্রাম চলছে।
এক দল অপর দলকে
নিন্দা করছে।
মঠের এক বিরােধী
দল বলছে,
‘বেলুড়
মঠের ওপর বাঘ পড়েছে।
বেলুড়
মঠে বাঘ এসেছে। ” এই কথা বলে
শ্রীম হাে হাে করে হাসতে লাগলেন।
তাঁর হাসি দেখে আমিও হেসে
ফেললাম।
আমার মর্মবেদনার কথা
বলা হলাে না।
তিনি ছিলেন ঠাকুরের
ঘনিষ্ঠ পার্ষদ।
তাঁর বালকের
মতাে হাসিতে আমার মনের দুঃখ
চলে গেল।
No comments