প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪ - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪

প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

আরেক দিন তাঁকে বললাম, “ঠাকুর যে ভগবান, এ বিশ্বাস তাে আমার হচ্ছে না।” শ্ৰীম বললেন, “কী বল হে? এতসব পড়েও, ঠাকুরের পার্ষদদের সঙ্গ করেও ঠাকুর যে ভগবান, এ বিশ্বাস এল না? সাত কাণ্ড রামায়ণ পড়ে এখন তুমি বলছ সীতা কার মাসি? যাক, কখনাে কখনাে মনের ঐরূপ অবস্থা হয়। আমারও ঐরূপ হয়েছিল। মনে পড়ে, ১৮৮২ কি ১৮৮৩ সালে। এক দুপুরে খাওয়ার পর ঠাকুর বিছানায় শুয়ে আছেন। আমি পাপপাশের ওপর বসে তাঁর পায়ে হাত বােলাচ্ছি আর ভাবছি—ইনি সাধারণ মানুষের মতাে খান, বেড়ান, ঘুমান; সাধারণ মানুষের মতাে ব্যবহার করেন—ইনি কী করে জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়কর্তা হবেন? ইনি কি মানুষরূপে এসেছেন মানুষকে কৃপা করবার জন্য—জগৎ উদ্ধার করবার জন্য? এ কী করে সম্ভব? ইনি তাে দেহধারী মানুষ। আমি এরূপ ভাবছি, তখন ঠাকুর হঠাৎ উঠে বসলেন ও বললেন, ‘মাস্টার, তুমি কী ভাবছ?' তারপর নিজের হৃদয়ে হাত রেখে বললেন, এখানেই সব। একে চিন্তা করলে সব হবে। একে চিন্তা করলে সব হবে। একে চিন্তা করলে সব হবে।'—এই কথা তিন বার বলেই তিনি সমাধিস্থ হলেন।

অনেকক্ষণ সমাধির পর তিনি নিম্নভূমিতে এসে মা-জগদম্বার সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন, “মা, আমি তাে কিছু জানি না। তুই যেমন বলালি
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


তেমনি বললাম। আমি তাে বালক। মা, আমি কি কিছু দোষ করলাম? তই আমার মুখ দিয়ে বললি। দেখ, এতেই বুঝলাম ঠাকুর ভগবান। মা-জগদম্ব ও ঠাকুর এক।”
শ্ৰীম-কে লক্ষ্য করে দেখেছি তাঁর সত্যের প্রতি খুব আঁট ছিল। কখনও তাঁকে রাগতে দেখিনি। তবে কেউ কথা না রাখলে তিনি রেগে যেতেন। একদিন এক ভক্তের সঙ্গে কোথাও যাবেন, কিন্তু সেই ভক্ত কোনাে খবর দেননি বা আসেননি। তখন শ্ৰীম খুব ক্রোধ প্রকাশ করলেন এবং বললেন, “সত্যের প্রতি আঁট না থাকলে কিছু হবে না। ঠাকুর সত্যস্বরূপ ছিলেন।” তাঁর একথাটি আমার খুব মনে আছে।

শ্ৰীম-র জীবনযাত্রা খুব কঠোর ছিল। তিনি স্বাবলম্বী ছিলেন। নিজের রান্না তিনি একটা কুকারে তৈরি করতেন। তাতে ভাত ও তরকারি সিদ্ধ করতেন। দুধ খেতেন। বলতেন—দুধ খেলে মেধা হয়। রাতে এক চাকরকে দিয়ে একখানা পাঁউরুটি আনাতেন। তা একটু তরকারি ও শেষে দুধ দিয়ে খেতেন। ভক্তেরা সন্দেশ, রসগােল্লা মিষ্টি আনত। আমি গেলে আমাকে কিছু খেতে দিতেন। একদিন আমাকে সন্দেশ খেতে দেন। আমি বললাম, “আমার খিদে নেই।” তিনি হাসতে হাসতে বললেন, “দেখ, অরুচির রুচির জন্য সন্দেশের সৃষ্টি। আর তােমার এই সন্দেশে অরুচি। আচ্ছা থাক, তােমায় খেতে হবে না।”
Sri Ramakrishna
Sri Ramakrishna
আমি ভাবতে লাগলাম শ্ৰীম আমাকে কত আদর করে খাওয়ান, আর আমি তাঁকে কিছু খাওয়াতে পারলাম না। শ্ৰীম ছিলেন অন্তর্যামী। তিনি আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছেন। সন্ধ্যার পর সব ভক্ত চলে গেলে তিনি আমাকে বললেন, “দেখ, আমার অসুখ হয়েছিল। শরীরটা তত ভাল নেই। দিনে তাে । রান্না করে খেয়েছি। রাতে কী খাওয়া যায় বল তাে?” আমি বললাম, “আমার যখন টায়ফয়েড হয়েছিল তখন আমি milk-roll পাঁউরুটি খেতাম দুধ দিয়ে। এটি খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়।” তিনি বললেন, “কে আমাকে তা এনে দেবে?” আমি একখানা milk-roll পাঁউরুটি একটা চায়ের দোকান থেকে কিনে আনলাম। ভাল দোকানে পেলাম না। তিনি গঙ্গাজলের ছিটা দিয়ে দুধের সঙ্গে সেই পাঁউরুটি খেলেন।

তার পরদিন মর্টন ইনস্টিটিউশনে পৌঁছে দেখলাম শ্ৰীম নিচের তলায় এক গৃহস্থের সঙ্গে কথা বলছেন। আমাকে দেখে তিনি দূরে এক বেঞ্চিতে
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


বসতে বললেন। তারপর ঐ ভক্তের সঙ্গে কথা শেষ করে তিনি আমাকে চারতলায় তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় তিনি আমার পকেটে পাঁউরুটি দেখেছিলেন। আমি তা তাঁকে দিলাম। ছাদের ঘরে সব ভক্ত তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেদিন তিনি নানাবিধ ঈশ্বরীয় প্রসঙ্গ করেন। তারপর রাত নটায় সবাই চলে গেলে তিনি আমাকে থাকতে বললেন। সেদিন কেউ মা-জগদ্ধাত্রীর নানাবিধ এক থালা প্রসাদ এনেছিল। তিনি ঐ প্রসাদ আমাকে খাওয়ালেন। তারপর আমার পাঁউরুটি তিনি একটু গঙ্গাজলের ছিটা দিয়ে দুধের সঙ্গে খেয়ে বললেন, “বেশ রুটি।” এভাবে আমি শ্ৰীম-র অনেক স্নেহ পেয়েছি।
শ্ৰীম চাইতেন সাধুরা সদা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করবে, কোনাে গৃহস্থের ওপর নির্ভর করবে না। আমি বাগবাজার উদ্বোধন বাড়ি থেকে তিন-চার মাইল হেঁটে শ্ৰীম-র কাছে যেতাম। সুখলালবাবু নামে এক ভক্ত আমাকে ট্রামের ভাড়া এক আনা দিতেন। একদিন আমি ফিরে যাব, কিন্তু শ্রীম সুখলালবাবুকে আটকে রাখলেন। আমি তখন হেঁটেই ফিরে গেলাম।




No comments

Powered by Blogger.