প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী ধীরেশানন্দ (১৯০৭-১৯৯৮)
প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী ধীরেশানন্দ (১৯০৭-১৯৯৮)
Sri
Ramakrishna
|
তাকে
অশান্তিতে নাকানিচোবানি
খাওয়াতে থাকে। উপায়—সাধুসঙ্গ।
‘ক্ষণমিহসজ্জনসঙ্গতিরেকা
ভবতি ভবার্ণবতরণে নৌকা।
“বিবেক-বৈরাগ্য
না থাকলে শাস্ত্ৰপড়া বৃথা।
বেদান্তশাস্ত্রে অধিকারীর
ওপর খুব জোর দেওয়া হয়েছে।
উত্তম গুরু যতই উপদেশ দিন,
শিষ্য
যদি যােগ্য না হয়,
তাহলে
উপদেশ ফলপ্রসূ হয় না।
মনুষ্যবুদ্ধি চার প্রকার।
এক–পাষাণের ন্যায়,
দুই—রবারের
ন্যায়,
তিন-চর্মতুল্য,
চার—তৈলসদৃশ।
“এক—পাষাণের
ন্যায় যাদের বুদ্ধি,
তাদের
কোনাে কথাই বােঝানাে যায় ।
পাথরে যেমন পেরেক ঢােকে না,
তেমনি
স্কুলবুদ্ধিযুক্ত ব্যক্তি
তত্ত্বকথা ধারণা করতে পারে
না।।
“দুই—রবার
স্থিতিস্থাপক। রবারে পেরেক
ঢােকে,
তারপর
হাত ওঠালে তা বেরিয়ে আসে।
তেমনি রবারের মতাে বুদ্ধি
যাদের তারা ক্ষণিকের জন্য
বােঝে আবার ভােগবাসনার দ্বারা
ভুলে যায়।
“তিন–চামড়ার
ভেতরে পেরেক যতটা ঢােকে সেখানেই
থাকে। সেইরূপ চর্মতুল্য
বুদ্ধিযুক্ত মানুষ যতটা উপদেশ
পায় ততটা বােঝে।
Sri
Ramakrishna
|
“চার—তৈলসদৃশ
বুদ্ধি সর্বোৎকৃষ্ট। এক গামলা
জলে এক ফোঁটা তেল। ফেললে তা
সঙ্গে সঙ্গে জলের উপরিভাগে
বিস্তার লাভ করে। তেমনি এরূপ
বুদ্ধিমান ব্যক্তি অল্প উপদেশ
শুনলেও মননের দ্বারা সম্পূর্ণটা
জানতে পারে।”
তারপর
মহারাজ নানাবিধ প্রসঙ্গ করেন
ঃ “একদিন রাজা মহারাজকে
করুণানন্দ বলছে,
মহারাজ,
আমার
ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে। মহারাজ
মুখে আঙুল চেপে বললেন,
‘একথা
কাউকে বলিসনে। বাবুরাম মহারাজ
সেখানে ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা
করলেন,
'হ্যাঁরে,
ঐ-বিষয়ে
তাের কোনাে সন্দেহ আছে?
যদি
থাকে তাহলে—হয়নি,
হয়নি,
হয়নি।
“মনের
আয়না বাইরে ফেলে তীর্থ,
দেবদেবী
দর্শন করছ। ঐ আয়না ভিতরে
ফেলাে—দেখবে আত্মদর্শন হবে।।
“দেখ,
আত্মজ্ঞান
লাভ করতে হলে ‘আবৃতচক্ষুঃ
হতে হবে। সব ইন্দ্রিয়ের
বহির্মুখী বৃত্তি বন্ধ করলে
মন শান্ত হয়ে যাবে। ঐসব বৃত্তির
নিরােধ হলে দ্রষ্টার স্বরূপে
অবস্থান। ঐ cosmic
plane-এ
মন উঠলে দারুণ আনন্দ অনুভব
হবে।
Sri
Ramakrishna
|
“দেখা
যায় অনেকে জপধ্যান করছে,
spiritual life যাপন
করছে,
অথচ
ভেতরে রাগ,
অভিমান।
এদের জ্ঞান হয় না। ঠাকুর
বলতেন,
সতের
রাগ জলের দাগ। জ্ঞানীর মনে
কোনাে কারণে ক্রোধ উঠলে তা
সঙ্গে সঙ্গে মিশে যায়। অজ্ঞানী
তিন পুরুষ ধরে শত্রুতা করে।
“বেদান্তশাস্ত্রে
জ্ঞানীদেরও প্রকারভেদ আছে—যেমন
ব্রহ্মবিদ,
ব্রহ্মবির,
ব্রহ্মবিদ্রীয়ান,
ব্রহ্মবিবরিষ্ঠ।
তবে একবার জ্ঞান হলেই হয়ে
যায়। একমুহূর্তও যদি তত্ত্বের
উপলব্ধি হয়,
সেই
অনুভূতির আনন্দ চিরকাল থাকে।
_
“দেখ,
পৃথিবীর
সবাই মুমুক্ষু। সবাই দুঃখনিবৃত্তি
ও আনন্দপ্রাপ্তির জন্য ছুটছে।
কিন্তু মায়ানমাহের বশে তারা
বিষয়ানন্দকে জীবনের লক্ষ্য
করে অশান্তিতে ভুগছে। ধাক্কা
খেলে তবে মানুষ ঠিক পথে আসে।
Sri
Ramakrishna
|
“বেদান্তের
প্রকরণ গ্রন্থের মধ্যে
বিদ্যারণ্য মুনির পঞ্চদশী
গ্রন্থটি উপাদেয়।। তুমি ঐ
বইখানা ভালভাবে পড়বে। আচ্ছা
তুমি সন্ধি দেখতে জান?
যােগবাসিষ্ঠএ
আছে—জাগ্রদবস্থায় অন্ত ও
নিদ্ৰাপ্রাপ্তির আদিকালে
যে অবস্থা উদিত হয়,
সেই
ভাবটি সদা স্মরণ রাখলে প্রত্যক্ষ
অক্ষয় আনন্দ লাভ হয়ে থাকে।
(১০/৮)
এই
অবস্থায় কোনাে বৃত্তি থাকে
না। তখন শুধু অনুভবস্বরূপ
সাক্ষিচৈতন্যের প্রকাশ
বিদ্যমান থাকে। এটিই সন্ধিকাল।
No comments