প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী সত্যস্বরূপানন্দ(বিশেষ মহারাজ)১৯০০-১৯৮৭
প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী সত্যস্বরূপানন্দ(বিশেষ মহারাজ)১৯০০-১৯৮৭
Swami
Vivekananda
|
সেও
বিষ্ণুপুর যাবে।
আমরা দুজনে
টিকিট কেটে ট্রেনে বসলাম।
শেষরাতে ট্রেন বিষ্ণুপুর
স্টেশনে পৌঁছাল। ট্রেন থেকে
নেমে শুনলাম একজন হাঁক
দিচ্ছে—কোতুলপুর যাবে?
আমি
বললাম,
যাব।
তিন টাকা দিয়ে গরুর গাড়ি
ভাড়া করা হলাে। জয়পুরে পৌঁছে
কিছু খেলাম। আবার কিছুদূর
গিয়ে গাড়ির একটা চাকা ভেঙে
গেল।
গাড়ােয়ান বলল,
“আপনারা
বসুন।
আমি গ্রাম থেকে বাঁশ
এনে গাড়ি ঠিক করব।'
সে
চলে গেল,
আর
আসে না।
আমি দেখলাম সন্ধ্যা
হয়ে যাবে।
অন্য যাত্রীকে
অর্ধেক ভাড়া দিয়ে আমি হাঁটতে
শুরু করলাম।
তারপর কোতুলপুর
পৌঁছে আমি কোয়ালপাড়ার পথ
জেনে নিলাম এবং সূর্যাস্তকালে
সেখানে পৌঁছালাম। আশ্রমের
সাধুরা বললেন,
“আজ
তাে মায়ের দেখা হবে না।
কাল
দেখা হবে।
“পরদিন
স্নান করে মাতৃদর্শনের জন্য
তৈরি হলাম।
ঐদিন তারকেশ্বরানন্দ
বাড়ি থেকে পালিয়ে কোয়ালপাড়ায়
এসেছিল।
স্বামী বিদ্যানন্দ
আমাদের দু-জনকে
জগদম্বা আশ্রমে মায়ের কাছে
নিয়ে গেলেন।
আসন্নপ্রসবা
রাধুকে নিয়ে মা তখন সেখানে
বাস করছিলেন।
বিদ্যানন্দ
আমাদের পরিচয় দিয়ে
Swami
Vivekananda
|
মাকে
বললেন,
‘মা,
এরা
আপনাকে দর্শন করতে এসেছে।
মা
ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায়
আমাদের কাছে এসে বসলেন।
তাঁর
মাথায় কোনাে ঘােমটা ছিল না।
আমাদের দুজনেরই তখন অল্পবয়স।
তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘কোখেকে
আসছ?’
‘সিলেট
থেকে।
'
‘সুরেন
(সৎসঙ্গানন্দ)
কেমন
আছে?
ইন্দ্রদয়াল
(প্রেমেশানন্দ)
কেমন
আছে?'
তিনি
এভাবে সিলেটের ভক্তদের খবর
নিলেন। তারকেশ্বরানন্দকে
কিছু জিজ্ঞাসা করেননি।
“তখন
স্বামী বিদ্যানন্দ বললেন,
‘মা
এখন স্নান করতে যাবেন তােমরা
চলাে। আমরা আশ্রমে ফিরে এলাম।
তখন স্বামী কেশবানন্দ জিজ্ঞাসা
করলেন,
“তােমরা
মাকে দীক্ষার কথা বলেছিলে?’
‘না,
কিছু
বলিনি।
"আরে, বলতে হয়। না বললে কি হয়?' তারপর তিনি ধ্রুবানন্দকে বললেন,"
এদের
আবার মায়ের কাছে নিয়ে যাও।
আর মাকে বােলাে—এরা দীক্ষাপ্রার্থী।
মা তখন স্নান করতে যাচ্ছেন।
ধ্রুবানন্দের কাছ থেকে শুনে
মা বললেন,
‘কালকে
এদের স্নান করে আসতে বলাে।
Swami
Vivekananda
|
“তার
পরদিন বাঁকুড়া থেকে চার জন
দীক্ষার্থী এল।
জুলাই ১৯১৯
মা আমাদের সকলকে এক এক করে
দীক্ষা দিলেন। মায়ের কথা
খুব মিষ্টি ছিল।
দীক্ষার সময়
ঠাকুরঘর থেকে তিনি ডাকতেন,
‘এসাে
বাবা।
তাঁর সেই মধুর কণ্ঠস্বর
ভুলবার নয়।
তাঁর চোখ দিয়ে
স্নেহ ও করুণা ঝরে পড়ত।
দীক্ষার
আগে মা জিজ্ঞাসা করতেন,
“তােমাদের
বংশ শাক্ত না বৈষ্ণব।
শুনেছি
কাউকে ঠাকুরের মন্ত্রও দিয়েছেন।
দীক্ষার সময় তিনি ইষ্ট ও গুরু
ঠিক করে দিতেন।
মা নিজেকে গুরু
বলতেন না,
ঠাকুরকেই
গুরু বলে নির্দেশ করতেন।
আবার
কাউকে কাউকে বলেছেন,
“আমাকে
ডাকিস।
যেমন কটকের বৈকুণ্ঠকে।
লক্ষ্মীদি তা শুনে বলেন,
‘মা
কী বললে?
‘ও
কিছু না’ বলে মা এড়িয়ে গেলেন।
লক্ষ্মীদি তখন বৈকুণ্ঠকে
বলেন,
“তুমি
মাকে ডেকো।
“মা
লেখাপড়া জানতেন না,
কিন্তু
তাঁর লােকব্যবহার ছিল অপূর্ব।
ঝগড়াঝাঁটি একদম পছন্দ করতেন
না।
কোয়ালপাড়ায় মায়ের
পদচিহ্ন নিয়ে কেশবানন্দের
মার সঙ্গে অন্য মহিলাদের ঝগড়া
হয়।
মা বলেন,
“তােরা ঝগড়া করছিস কেন?আমি তাে এখনাে বেঁচে আছি। কত পায়ের ছাপ নিবি—নে না।"
দীক্ষার
ব্যাপারে মায়ের বিশেষ কোনাে
আচার-অনুষ্ঠান
ছিল না। তিনি
Swami
Vivekananda
|
আগে
ঠাকুরের পূজা করে পরে দীক্ষা
দিতেন।
এক এক করে দীক্ষা দিতেন।
একসঙ্গে সবাইকে দীক্ষা দিতেন
না।
মা আমাদের মতাে আনুষ্ঠানিক
পূজা করতেন না।
যেমন মানুষ
আপনজনকে আদর-আপ্যায়ন
করে,
মা
ঠিক সেভাবে ঠাকুরের পূজা
করতেন।
ঠাকুরের ছবিতে চন্দনের
ফোঁটা,
ফুল,
মালা
দিয়ে সাজাতেন।
তারপর ধ্যানজপ
করে নৈবেদ্য নিবেদন করতেন।
জয়রামবাটী ও কোয়ালপাড়ায়
রান্নাঘরে আসন পেতে থালায়
অন্নভােগ সাজিয়ে নিবেদন
করতেন।
“মা
দীক্ষার্থীদের সকাল-সন্ধ্যায়
নিত্য ধ্যানজপ করতে বলতেন।
মা আঙুলের করেই জপ দেখাতেন
এবং ১০৮ বার জপ করতে বলতেন।
কেউ মালা চাইলে তা শােধন করে
দিতেন।
কেউ যদি মায়ের ওপর
ধ্যান করতে চাইত,
তিনি
‘না’ করতেন না।
একবার কলকাতার
এক ভক্ত মায়ের কাছে।
শক্তিমন্ত্র
চায়।
মা বলেন,
“বাবা,
আমি
দেখছি তােমাদের বংশ রামের
উপাসক।
তােমাকে রাম-মন্ত্রই
দেব।
'
দীক্ষার
পর সে বাড়ি গিয়ে জানতে পারে
যে,
তাদের
বংশ রামের উপাসক।
মা ঠিক মন্ত্রই
দিয়েছেন।
No comments