প্রাচীন সাধুদের কথা _ কেউ বেশি কোনও না কোনওভাবে ঈশ্বরকে ডাকছি কিন্তু গুরুতে বা ঈশ্বরে যাই বলুন, প্রেম এসেছে কিনা কি করে বুঝব?
প্রাচীন সাধুদের কথা _ কেউ বেশি কোনও না কোনওভাবে ঈশ্বরকে ডাকছি কিন্তু গুরুতে বা ঈশ্বরে যাই বলুন, প্রেম এসেছে কিনা কি করে বুঝব ?
– বাবা,
এপথে
জীবনটাই তো কেটে গেল। গুরুগত
প্রাণ আপনি। নিশ্চয়ই আমার এ
প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।
আমরা গৃহী যারা কেউ কম,
কেউ
বেশি কোনও না কোনওভাবে ঈশ্বরকে
ডাকছি কিন্তু গুরুতে বা ঈশ্বরে
যাই বলুন,
প্রেম
এসেছে কিনা কি করে বুঝব?
– বেটা,
প্রেম
মানুষে বল আর ঈশ্বরেই বল প্রেম
একই। মানুষ হয়ে মানুষে প্রেম
বা ঈশ্বরে প্রেম,
এর
আলাদা কোনও সংজ্ঞা নেই। প্রেম
বাস করে বহু বহু দূরে। ভগবৎ
বিমুখ যারা,
এতটুকু
বিষয় বাসনা যাদের আছে তারা
মুখে যতই ঈশ্বরের নাম করুক
না কেন বেটা,
বুঝবি
ঈশ্বরে,
নারীর
পুরুষে,
পুরুষের
নারীতে আদৌ প্রেম আসেনি।
প্রেম
বলে যেটুকু মনে হয় সেটুকু
নিজের সুপ্ত মনের চাহিদা বা
বাসনা সিদ্ধির প্রকাশ মাত্র,
প্রেম
নয়। কেন জানিস,
মানুষের
বিষয়ী মন হাতির চেয়েও বড় আর
প্রেমের দরজা হল চুলের মতো
সরু। তাই প্রেমের দরজা দিয়ে
অত বড় বিষয়ী মন চট করে ঢুকতে
পারে না। সুতরাং ঈশ্বরে প্রেম
এসেছে কিনা তখনই বুঝবি,
যখন
দেখবি বিষয়ী মন তোর বাসনাবিহীন
হয়েছে।
Sri
Ramakrishna
|
কথাটুকু
শেষ করে স্নেহভরা সুরে বললেন,
– যা
বেটা,
এখন
আর তোকে আটকাব না। তোর কাজ
আছে,
এবার
যা।
সাধুবাবা
বলা মাত্রই উঠলাম না। ভাবতে
লাগলাম কি অদ্ভুত জীবন মানুষের!
অদৃশ্য
কোনও এক মহাশক্তি বলে
অপ্রত্যাশিতভাবে ঘুরে যাচ্ছে
নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মতো
মানুষের জীবন প্রবাহের গতি।
সাধুবাবা কি জীবন থেকে চলে
এলেন কোন জীবনে!
ভাবতেই
পারছি না। হঠাৎ একটা প্রশ্ন
এল মাথায়,
করে
ফেললাম,
– বাবা,
ধরুন
আমি যদি সাধু হই কিংবা কোনও
গৃহী যদি সাধু হতে চায় অর্থাৎ
বলতে চাইছি,
কী
গুণ থাকলে মানুষ ভাল সাধু হতে
পারে?
– বাঃ
বেটা বাঃ,
বেশ
মজার প্রশ্ন করেছিস তো!
এমন
সুন্দর প্রশ্ন করবি ভাবতে
পারিনি। তাহলে বলি শোন,
ভাল
সাধু হতে গেলে কারও কাছে হাত
পাততে নেই। যারা ভাল সাধু তারা
দিতে ছাড়া কিছু চাইতে শেখেনি।
চাইলে কখনও সাধু হতে পারবে
না। যে সাধু চায়,
সে
সাধু সাধুর ভেকধারণ করলেও
সাধু নয়। সাধুর সব পাওয়ার
আশাকে পূরণ করে না চাওয়ার গুণ,
এমনকি
ঈশ্বরকেও,
বুঝলি?
এবার
উঠে দাঁড়ালাম চলে যাব বলে।
সিঁড়ির একটা ধাপ নিচে নেমে
মাথাটা পায়ে ঠেকিয়ে প্রণাম
করতেই হাত দুটো মাথায় বুলিয়ে
দিলেন। আমি তাকালাম সাধুবাবার
মুখের দিকে,
তিনিও
তাকালেন আমার মুখের দিকে।
এবার আমার শেষ জিজ্ঞাসা,
– বাবা
ঈশ্বর কে?
নির্বিকার
বৃদ্ধ সাধুবাবার প্রশান্ত
মুখখানা এ প্রশ্নে আনন্দে
উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। কোমল মধুর
কণ্ঠে বললেন,
– বেটা,
বিনা
দাঁড়িপাল্লায় প্রতিমুহুর্তে,
প্রতিটা
মানুষের প্রতিটা জীবের সমান
নিখুঁত ওজন যিনি করেন,
তিনিই
ঈশ্বর।
No comments