প্রাচীন সাধুদের কথা _দীক্ষা নিলে দক্ষিণা কিছু দিতে হয়। আমি কি দক্ষিণা দিয়েছিলাম জানিস? - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _দীক্ষা নিলে দক্ষিণা কিছু দিতে হয়। আমি কি দক্ষিণা দিয়েছিলাম জানিস?



প্রাচীন সাধুদের কথা _দীক্ষা নিলে দক্ষিণা কিছু দিতে হয়। আমি কি দক্ষিণা দিয়েছিলাম জানিস?

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

একটু থেমে বললেন,

বেটা, দীক্ষা নিলে দক্ষিণা কিছু দিতে হয়। আমি কি দক্ষিণা দিয়েছিলাম জানিস? দীক্ষার পর গুরুজি আমার কাছে দক্ষিণা চাইলেন। আমি বললাম, ‘গুরুজি, আমার কাছে দেয়ার মতো তো কিছু নেই।’ গুরুজি বললেন, ‘কেন রে বেটা, নেই? টাকাপয়সা ধন দৌলতের চেয়েও মানুষের অনেক বড় সম্পদ আছে গুরুকে দেয়ার। সেটা হল মন। তোর মনটাই আমাকে দক্ষিণা হিসাবে দে।’ আমি হতবাক হয়ে গেলাম কথাটা শুনে। মুখে মনটা দিলাম বললে কি আর দেওয়া হল! ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম গুরুজির মুখের দিকে। তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একবার হাসলেন। তখন বয়স কম। অত বুঝতাম না কিছু। গুরুজি মুচকি হাসি হেসে বললেন, ‘গুরু ভিন্ন পার্থিব অন্য কোনও চিন্তা না করলেই মনটা দেয়া হয় গুরুকে। সময় মতো দক্ষিণাবাবদ তোর মনটাই নিয়ে নেব আমি’।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna
এবার একটা অদ্ভুত আনন্দময় ভাব নিয়ে বললেন,
হাঁ বেটা, গুরুজি কথা দিয়েছিলেন, রক্ষাও করেছেন। এখন বুঝি দক্ষিণা বাবদ তিনি আমার মনটাকে নিয়েই নিয়েছেন। যাইহোক, গুরুজির আশ্রয়লাভের পর গঙ্গোত্রীর মনোরম পরিবেশে গুহায় বসে চলতে লাগল সাধনভজন। ধীরেধীরে সমস্ত কামনা বাসনা ধুয়ে মুছে গেল মন থেকে। শীতের সময়টুকু ছাড়া পাহাড়ে ছিলাম প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর।

হঠাৎ উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, ‘জয় গুরু মহারাজ কি জয় – গুরু কৃপাহি কেবলম’। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম সাধুবাবার আনন্দঘন মুখের দিকে। তিনি প্রশান্ত মধুর কণ্ঠে বললেন,
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna
বেটা, যেমন অপবিত্র ময়লা জলও পবিত্র হয়, গঙ্গাজল হয়ে যায় গঙ্গায় পড়লে, গঙ্গাজলে মিশলে, ঠিক তেমন ভাবে বিষয়ে মলিন মনের মানুষও মলিনতা মুক্ত হয়ে পবিত্র হয় গুরুসঙ্গ, সাধুসঙ্গ, সৎসঙ্গ করলে। গঙ্গোত্রী থেকে বয়ে আসা গঙ্গার পবিত্র নির্মল ধারার মতই যে এদের ধারা। বেটা, মানুষের আত্মা হল নদী, ধর্ম তার ঘাট, ধৈর্য হল তীর, দয়া হল তার তরঙ্গ, সত্যের স্রোতে তার প্রকাশ, ওই ধারাতে যারা (গুরুসঙ্গ, সৎসঙ্গ, সাধুসঙ্গ) স্নান করে, তারা পবিত্র নির্মল হবেই হবে।

এবার সাধুবাবার আবেগভরা কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এল একটা পরিতৃপ্তির শব্দ, আহ। এ শব্দ হয়ত তার গুরুমনে নিজমন একাকার হয়ে যাওয়ার। তৃপ্তিতে চোখ বুজলেন ক্ষণিকের জন্য। আবার তাকালেন আমার মুখের দিকে। বললেন,
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


বেটা, সুন্দরী রমণীর যেমন সিঁথির সিঁদুর আর কপালের টিপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাদের মাতৃভাবে প্রতিষ্ঠিত করে, তেমনই ইষ্টনাম মনের মাধুর্য বৃদ্ধি করে নারীপুরুষের মনকে একাকার করে গুরুমনে।
ভাবাবেগে সাধুবাবার কণ্ঠস্বরটা রোধ হয়ে এল। মিনিটখানেক চুপ করে থাকার পর বললেন,

গুরুজি সেদিন যদি আমাকে আশ্রয় না দিতেন তাহলে তখন আমার পথে কোথাও হয়ত মৃত্যুও হয়ে যেত। বেটা, সুখ চাই না এতটুকুও। চাই সারাটা জীবনব্যাপী দুঃখ, সে দুঃখ এমনই দুঃখ হোক, যে দুঃখে আমি যেন সবসময় স্মরণ করতে পারি আমার গুরুজিকে।

No comments

Powered by Blogger.