প্রাচীন সাধুদের কথা _শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু
প্রাচীন সাধুদের কথা _শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু
Sri
Ramakrishna
|
লেবাসবিহীন
শ্রীরামকৃষ্ণকে চিনতে না
পেরে দক্ষিণেশ্বরের বাগানে
এসে বহু লােক ঠাকুরকেই জিজ্ঞাসা
করতেন,
“পরমহংস
কোথায়?”
তিনি
বলতেন,
“কে জানে বাপু! কেউ বলে পরমহংস, কেউ বলে ছােট ভটচায, কেউ বলে পাগলা বামুন-খুঁজে নাও।”
কি করে দীনের দীন হতে
হয়,
অহংকার
দূর করতে হয় তিনি নিজের জীবন
দিয়ে দেখিয়ে গেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব
অধিকাংশ সময় খালি গায়ে বা
ধুতির অপর অংশ গায়ে জড়াতেন।
কখনও সস্তা মার্কিন কাপড়ের
জামা গায়ে দিতেন।
অনেকেই
তাকে বাগানের মালি বলে মনে
করত।
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী
বিশুদ্ধনন্দ “সৎ প্রসঙ্গ”
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ
মথুরবাবুর কোন বন্ধু “দক্ষিণেশ্বরের
বাগানে এসেছেন।
বাগানভরা
ফুল।
ঠাকুরকে সেখানে দেখে
মনে করলেন বাগানের মালী।
তাই
তাঁকে বললেন ভাল করে একটা
ফুলের তােড়া তৈরি করে দিতে।
ঠাকুর খুব চমৎকার একটি তােড়া
তৈরি করে সেই ভদ্রলােকের হাতে
দিলেন।
তিনিও খুব খুশি।
কলকাতা
গিয়ে ঐ বন্ধু মথুরবাবুকে
জিজ্ঞেস করলেন-
এমন
মালি কোথায় পেলে?
কি
সুন্দর তােড়া গড়ে দিয়েছে
আমায়।
মথুরবাবু শুনে বললেন-
‘চল
আবার সেই মালীর কাছে।
দক্ষিণেশ্বরে
গেলেন দুই জনে।
মথুরবাবু
বন্ধুকে দেখালেন-মালী
নয়,
তিনিই
পরমহংস।
আত্মপ্রশংসা
শুনতে সকলেই ভালবাসে।
আর তা
শুনার জন্য অনেক বড় বড়
ব্যক্তিরাও চাটুকার,
তােষামােদকারী
নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
লােকমান্য
হবার বাসনা মহাপুরুষদেরও
যায় না।
Sri
Ramakrishna
|
শ্রীরামকৃষ্ণদেব
একদিন কেশব সেনের বাড়িতে
গিয়ে দেখেন কেশব সেন খােশামােদে
শিষ্যদের মাঝে বসে আছেন।
তাদের
একজন কেশব সেনকে বলছেন-“কলির
চৈতন্য হচ্ছেন আপনি।
কেশব
সেন শ্রীরামকৃষ্ণের দিকে
চেয়ে হাসতে হাসতে বললেন,
তাহলে
উনি কি হলেন?’
শুনে
শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলছেন,
“আমি
তােমাদের দাসের দাস,
রেনুর
রেনু।
- তাঁর অন্তরঙ্গ ভক্তেরা যখন শ্রীরামকৃষ্ণকে ভগবান,
- ঈশ্বরাবতার বলতেন,
- তিনি বিরক্ত হয়ে বলতেন,
- কেউ ডাক্তারী করে,
- কেউ থিয়েটারের ম্যানেজারি করে,
- এখানে এসে অবতার বল্লেন।
ওরা মনে
করে ‘অবতার বলে আমাকে খুব
বাড়ালে-বড়
কলে।
ওরা অবতার কাকে বলে তার
বােঝে কি?
সাধারণ
মানুষ মহাপুরুষ বা অবতারকেও
মূল্যায়ন করে নিজেদের বুদ্ধির
মাপকাঠি দিয়ে।
যে যেমন আধার
সে তেমনি বােঝে।
সমাজের কিছু
অনুপযুক্ত লােকও গুরু সাজার
জন্য লালায়িত।
গুরুগিরি
আজকাল যেন একটি ভােগের বস্তু।
গুরু হচ্ছেন সচ্চিদানন্দ
স্বয়ং হতে পারে তিনি কোন
আধারের মধ্য দিয়ে তাঁর কৃপা
বিতরণ করেন।
কিন্তু সেই কৃপা
বিতরণ তখনই সার্থক হয়,
যখন
সেই মাধ্যম হয় শুদ্ধ।
গুরু
যদি অনুপযুক্ত হয়,
অর্থাৎ
নিস্পাপ,
নিঃস্বার্থ
ও শাস্ত্রজ্ঞ না হন তার মধ্য
দিয়ে ভগবানের কৃপা প্রবাহিত
হতে পারে না।
তাঁর মধ্যে আমিত্ব
ও অভিমান থাকলে সে ব্যক্তি
চরম অযােগ্য বলে বিবেচিত হবে।
মনে রাখতে হবে সেই ব্যক্তি
গুরুশক্তি প্রকাশের একটি
আধারমাত্র,
গুরু
নন।
উপাসনার ক্ষেত্রে প্রতিমা
যেমন দেবতা নন,
প্রতীক
মাত্র,
যিনি
দীক্ষা দেন তার অবস্থাও ঠিক
সেইরূপ।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব
তাই বলতেন,
সচ্চিদানন্দই
গুরু।
যিনি দীক্ষা দেন অর্থাৎ
গুরুপদে প্রতিষ্ঠিত তার ভালকরে
বােঝা উচিৎ যে একজন অসম্পূর্ণ
মানুষ কখনও পরব্রহ্ম হতে পারে
না।
“গুরুব্রহ্মা গুরুবিঃ গুরুদেবাে মহশ্বেরঃ”-
শাস্ত্রে
এসব কথা সচ্চিদানন্দকে উদ্দেশ্য
করেই বলছেন,
দীক্ষা
দেন যে ব্যক্তি তাকে লক্ষ্য
করে নয়।
কেউ তাকে গুরু বললে
তিনি বলতেন,-
‘দূর
শালা’ গুরু কিরে?
এক
সচ্চিদানন্দ বই আর গুরু নাই।
তিনি বিনা কোন উপায় নাই।
শ্রীরামকৃষ্ণই বলতে পারতেন,-
“গুরুগিরি
বেশ্যাগিরির মতাে।
-
ছার
টাকা-কড়ি,
লােকমান্য
হওয়া,
শরীরের
সেবা,
এই
সবের জন্য আপনাকে বিক্রি করা।
দৃষ্টান্তস্বরূপ বলেছিলেন,
“সাবির এখন খুব সময়- এখন তার বেশ হয়েছে- একখানা ঘরভাড়া নিয়েছে-ঘঁটেরে, গােবর রে, তক্তপােশ, দুখানা বাসন”
No comments