প্রাচীন সাধুদের কথা _শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু
প্রাচীন সাধুদের কথা _শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু
Sri
Ramakrishna
|
(গেরুয়া)
ভাল
নয়।
ভেকের মত যদি মনটা না
হয়,
ক্রমে
সর্বনাশ হয়।
মিথ্যা বলতে বা
করতে ক্রমে ভয় ভেঙ্গে যায়।”
(পৃঃ
১৫৮)
খাওয়া
দাওয়ার ব্যাপারে বলতেন,
- “ পান খাওয়া,
- মাছ খাওয়া,
- তামাক খাওয়া,
- তেল মাখা
-এ-সব
তাতে দোষ নাই।
এ-সব
শুধু ত্যাগ করলে কি হবে?
কামিনী-কাঞ্চন
ত্যাগই দরকার।
সেই ত্যাগই
ত্যাগ!
তিনি
এ দুটোই মনে প্রাণে ত্যাগ
করেছিলেন।
মহাভারতে আছে
সারাজীবন নিঃস্বার্থভাবে
পিতামাতার ও বিয়ের পর স্বামীর
প্রতি কর্তব্য পালন করে সামান্যা
নারীর ও অনাসক্তভাবে জন্মগত
কার্য-
মাংস
বিক্রয় করে ব্যাধের তত্ত্বজ্ঞান
লাভ হয়েছিল।
তাতেই বুঝা যায়
ভগবান লাভের জন্য বনে-জঙ্গলে
বা আশ্রমবাসী হওয়া খুব জরুরি
নয়।
Sri
Ramakrishna
|
বরং
দীর্ঘকাল বনে-জঙ্গলে
ধ্যান-ভজন
ও যােগাভ্যাসে রত কাক-বক
ভস্মকারী অহংকারী সন্ন্যাসীর
চেয়ে স্বধর্ম পালনরত,
নিঃস্বার্থ
ও অহংবুদ্ধিশুন্য গৃহস্থ
নারী ও মাংস বিক্রেতা ব্যাধই
যথার্থ সাধু।
যদিও ‘সাধু
শব্দটি আজকাল বিশেষভাবে
আশ্রমবাসী,
চিত্র
বিচিত্র বসন ভূষণধারী মানুষের
ক্ষেত্রেই প্রয়ােগ করা হয়ে
থাকে।
এটি একটি নিতান্ত ভ্রান্ত
ধারণা।
সনাতন শাস্ত্রের কোথাও
যার কোন অস্তিত্ব নাই।
সাধুত্ব
একটি মানসিক অবস্থা যা অর্জন
করতে হয় সাধনার মাধ্যমে।
আর
এর অভাবেই আজ সর্বত্র
- অসাধু চিকিৎসক,
- অসাধু প্রকৌশলী,
- অসাধু ক্রিড়াবিদ,
- অসাধু ব্যবসায়ী,
- অসাধু রাজনীতিবিদ,
- অসাধু শিল্পী,
- অসাধু কর্মজীবী ও
- অসাধু ধর্মগুরু ও ধর্মপ্রচারক।
শ্রীরামকৃষ্ণ
আদর্শ যত বেশী প্রচারিত হবে
প্রাতিষ্ঠানিক সাধুর সংখ্যা
ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে এবং
সমাজের সর্বস্তরে লেবাসবিহীন
আদর্শিক সাধুর সংখ্যা বৃদ্ধি
পাবে।
ফলে উন্নত সমাজ গড়ে
উঠবে।
ভগবান সর্বত্র ও সবার
মধ্যেই রয়েছেন।
তাঁকে লাভ
করার,
ভালবাসার
অধিকার যেমন সকলের রয়েছে
তেমনি সাধু হওয়ার অধিকার
জগতের প্রতিটি নরনারীর জন্মগত
অধিকার।
পৃথিবীর মহাপুরুষগণ
সাধারণ থেকেই সাধু হয়েছিলেন,
তারা
কেউ আশ্রমিক সাধু সাজেননি।
- জন্ম,
- মৃত্যু,
- জরা,
- ব্যাধি শােক
- মােহগ্রস্থ
সাধারণ জনগণ
মানসিক প্রশান্তির জন্য আশ্রম,
মন্দির
বা বিভিন্ন উপাসনালয়ে যায়
আর আশ্রমিক লেবাসধারী সাধুদের
দ্বারা বিভিন্নভাবে পীড়িত
হন তারা।
Sri
Ramakrishna
|
ধর্মভীরু
এসব জনগণ অভিশাপের ভয়ে,
স্ত্রী
সন্তানের অকল্যাণের ভয়ে
নিরবে সকল পীড়ন সহ্য করেন।
ভগবান অন্তর্যামী।
তিনি সকলের
পিতা মাতা বন্ধ সখা-
পরমাতীয়।
তাঁর ফল
কাউকেই ছাড়েনা।
সে গুরু-মহাগুরু
বা যত বড় লেবাসধারীই হােক-
পাপে
না ছাড়ে বাপেরে।
স্বামী
বিবেকানন্দ তাই এক পত্রে
প্রমদাবাবুকে লিখেছিলেন,
“ আমি গৃহস্থও বুঝিনা, সন্ন্যাসীও বুঝিনা, যথার্থ সাধুতা এবং উদারতা এবং মহত্ত্ব যথায়, সেই জ্ঞানেই আমার মস্তক চিরকালই অবনত হউক- শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। প্রার্থনা করি আজিকালকার মানভিখারী, পেটবৈরাগী এবং উভয়ভ্রষ্ট সন্ন্যাসশ্রমীদের মধ্যে লক্ষের মধ্যেও যেন আপনার ন্যায় মহাত্মা একজন হউন।
বলতেন,
“নীতির উপরই যেন সকল ধর্মের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, আর ব্যক্তিগত পবিত্রতা বা শুদ্ধভাবকে ধর্ম অপেক্ষা উচ্চতর মনে করা উচিৎ।”
Sri
Ramakrishna
|
ঈশ্বর
ব্যাকুলতা দেখেন,
আন্তরিকতা
দেখেন।
মীরা বলেন,
এ
বিনা প্রেম সে নহি মিলে
নন্দলালা-শুদ্ধ
প্রেম ছাড়া নন্দের আদরের
দুলালকে পাওয়া যায় না।
এই
মহীয়সী নারী সন্তের এই বাণীটি
আমরা যেন সর্বদাই মনে রাখি।
তাঁর নাম-গুণগান
গাইতে হবে গভীর প্রেম ও
ভক্তিসহকারে।
তাঁর একটি গানে
আছে-
তিরণ
ভখনসে হরি মিলে তাে বহুৎ মৃগী
অজা।
স্ত্রী ছােড়নসে হরি
মিলে তাে বহুৎ রহে খােজা।।
দুধ পিনেসে হরি মিলে তাে বহুৎ
বৎস বালা ।
মিরা কহে বিনা
প্রেমসে নহী মিলে নন্দলালা।
No comments