আষাঢ় মাসের রথের পরে প্রথম মঙ্গলবার পালিত হয় মা বিপত্তারিণী ব্রত
আষাঢ় মাসের রথের পরে প্রথম মঙ্গলবার পালিতহয় বিপত্তারিণী ব্রত।
প্রায় পাঁচ বিঘা জমির উপর নির্মিত এই মন্দির পরিসর।
সাধকের বাস্তু লাগােয়া জমিতেই পরবর্তী কালে গড়ে উঠেছে আজকের এই বড় মন্দিরটি।
নির্মিত হয়েছে মায়ের নতুন বড় বিগ্রহও।
ভুল হল, মন্দির নয় মায়ের বাড়ি।
তাই মন্দিরের মতাে কোনও চূড়াও নির্মিত হয়নি।
কার্যত ত্রিতল গৃহের প্রথম দুটি তলে অবস্থান করছেন বিভিন্ন দেবদেবী।
রয়েছেন সিদ্ধিদাতা গণেশ, পবনদেবের ঔরসে দেবী অঞ্জনার গর্ভজাত পুত্র হনুমান
একই সঙ্গে রয়েছেন
- শঙ্করাচার্য,
- ভােলাগিরি,
- রামকৃষ্ণ,
- শ্যামাচরণ,
- লােকনাথের মতাে ১৬ জন সাধক।
- আছেন নৃসিংহদেব,
- দেবী দুর্গা,
- রাধাগােবিন্দ,
- লক্ষীনারায়ণ,
- রামসীতা
- মা মনসা এমনকি
- গড়ুরও।
দোতলায় আছেন স্বয়ং মা বিপত্তারিণী।
রয়েছেন্যমা কালী, নারায়ণ সঙ্গে দুলালচন্দ্রের বহন করে আনা সেই আদি মূর্তিটিও।
আছেন শুধুই জগন্নাথ এবং অবশ্যই প্রস্তররূপী শিব।।
কথিত, এই দুটি মূর্তিও এসেছে দুটি ভিন্ন অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে।
দেবদালানের অনতিদূরে একটি ঘরে সংরক্ষিত রয়েছে সাধক- ব্যবহৃত বিভিন্ন বস্তু।
যার মধ্যে অলৌকিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে এমন জিনিসও আছে।
রয়েছে তার লিখিত বিবরণ।
১৩৭৭ সাল। জ্যৈষ্ঠ মাস।
একাদশী তিথি।
সাধকের ছােট ভাইয়ের মেয়ে সাড়ে তিন বছরের শম্পার রূপ ধরে আবির্ভূত হন দেবী।
পরনে লাল মিলের শাড়ি।
ওই টুকুন ‘শম্পা' সেদিন ৬টি রুটিও বেলে দেন! আছে সেই চাকী-বেলুনও।
বিশ্বাস এখানে এসে মিলেছে ভক্তির সঙ্গে।
যেখানে তিনি জগন্মাতা দেবী নন, শুধুই মাতা।
যিনি বারবার ছুটে আসেন অবােধ সন্তানের কাছে।
তার পাগলপারা ডাকে।
গর্ভগৃহের সামনে প্রশস্ত বারান্দা যেখানে সার দিয়ে বসেন ভক্ত-সন্তানেরা।
প্রথা মতাে,মায়ের চোখে চোখ রেখে নিবেদন করেন অঞ্জলি। অঞ্জলি শেষে মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন।
সেখানে ধর্মের ভিন্নতা নেই, জাতের বিভেদ নেই, অর্থকৌলীন্যের অহংকার নেই সকলেই সমান।
সকলেই সন্তান।
নিত্যপুজা এখানে হয় না।
হয় না বিধিসম্মত ভােগ নিবেদন ও।
ফুলেতে,মিষ্টিতেই মা তুষ্ট।
‘নে মা, খা- মা’-এই সরল নিবেদনেই।
একটু গান শােনালেই মা খুশি।
মায়ের প্রতি ভালােবাসাই শেষকথা।
ভালােবাসাই যে বড় শক্ত বাঁধন! দেবীর জন্মসিদ্ধ সাধকপুত্র দুলালচন্দ্র লােকের মুখে মুখে আজ ‘দুলালবাবা' হয়ে গেছেন।
যিনি বলতেন,
‘সংসারে থেকেও তাঁকে পাওয়া যায়, সব ছেড়ে বনবাসী হতে হয় না।
‘সংসারে থেকেও তাঁকে পাওয়া যায়, সব ছেড়ে বনবাসী হতে হয় না।
...ভালােবাসতে পারলে বনের পশু-পাখিরা বশ হয় আর মা বশ হবেন না?'
মা বিপত্তারিণী এখানে তাই আজও ভালােবাসাতেই বশীভূত।
ফুলের মধ্যে জবা আর পদ্ম বড় প্রিয় মায়ের। বছরে
একদিন মা অন্নভােগ গ্রহণ করেন।
কালীপূজোর রাত্রে। মা পরম বৈষ্ণবী তাই এখানে বলি নিষিদ্ধ।
দুর্গা পুজো হয় চণ্ডীবাড়িতে
- সপ্তমী,
- অষ্টমী,
- নবমী এই তিনদিন।
"এখানে শুধু আবাহনই আছে তাই বিসর্জন নেই।"
🌺🌺🌺🌺🌺🌿🌺🌺🌺🌿🌺🌺🌺🌺🌺
হয় মা বিপত্তারিণী ব্রত।
আগের দিন নিরামিষ আহার করে ব্রতের দিন ১৩টি নিখুঁত ফল আর মিষ্টি নিবেদন করতে হয় মাকে।
সেঁকা রুটি খাওয়া চলে না ব্ৰতীর।
১৩টি ফলের তাৎপর্য, বারাে মাসের জন্য বারােটি ও সংসারের সব অশান্তি নিবেদন রূপে ১টি ফল মাকে নিবেদন করতে হয়।
বিশ্বাস, তাতেই শান্তি আর সুখের সহাবস্থানে কাটে জীবন।
মায়ের আর্শীবাদে মুক্ত হওয়া যায় সব বিপদ থেকে।
নিবেদন শেষে হাতে মায়ের আশীর্বাদ স্বরূপ লাল তাগা বাঁধেন ব্রতী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
শিশু যেমন অগাধ বিশ্বাসে আর আস্থায় নিজেকে সঁপে দেয় মায়ের কোলে, তেমনি বিশ্বাসে নিজেদের সঁপে দেন ভক্তকুল।
নিবেদন শেষে হাতে মায়ের আশীর্বাদ স্বরূপ লাল তাগা বাঁধেন ব্রতী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
শিশু যেমন অগাধ বিশ্বাসে আর আস্থায় নিজেকে সঁপে দেয় মায়ের কোলে, তেমনি বিশ্বাসে নিজেদের সঁপে দেন ভক্তকুল।
ভক্তি আর ভালােবাসায় পূর্ণ সমর্পণ।
এখানে ‘মঙ্গলবারই' বিবেচিত হয় চণ্ডীবার হিসাবে।
আগামী ২৭ জুন (১২ আষাঢ়) শনিবার মা বিপত্তারিণী পূজা।
৩০ জুন (১৫ আষাঢ়) মঙ্গলবার শ্রীশ্রী
মা বিপত্তারিণী ব্রত।
No comments