সারদা দেবী: গৃহীদেরও, বিপ্লবীদেরও মা - Spirituality Religion

Header Ads

সারদা দেবী: গৃহীদেরও, বিপ্লবীদেরও মা

 সারদা দেবী: গৃহীদেরও, বিপ্লবীদেরও মা
সারদা দেবী গৃহীদেরও, বিপ্লবীদেরও মা
সারদা দেবী গৃহীদেরও, বিপ্লবীদেরও মা

সিস্টার নিবেদিতা লিখেছেন, ‘সকল মহান জাতীয়তাবাদীই তাঁর (শ্রীশ্রী মা সারদা দেবী) চরণ স্পর্শ করে যেতেন।

শরৎ মহারাজ কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না।’’

ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের ভবিষ্যদ্বাণী আবার সত্যি হল

তাঁর সহধর্মিনীকে ঠাকুর একবার বলেছিলেন

‘‘পরে দেখবে, এত ছেলে তোমায় মা বলে ডাকবে, তোমার সামলানো ভার হয়ে উঠবে’’

সিস্টার নিবেদিতা সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী

1909 সালে, বিশেষ করে আলিপুর বোমা মামলার রায় প্রকাশের পরে বাগবাজারে মায়ের বাড়িতে যেন বিপ্লবীদের ঢল নেমেছিল 

সবাই মায়ের আশীর্বাদ চান 

তখনই নিবেদিতা সারদা দেবীকে বলেছিলেন

‘‘মা, ঠাকুর বলেছিলেন, কালে আপনি বহু সন্তান লাভ করবেন মনে হয় তার সময় অতি নিকট সমগ্র ভারতবর্ষই আপনার সন্তান’’

সিস্টার নিবেদিতা লিখেছেন, ‘সকল মহান জাতীয়তাবাদীই তাঁর (শ্রীশ্রী মা সারদা ) চরণ স্পর্শ করে যেতেন 

শরৎ মহারাজ কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না

 যদিও তিনি জানতেন এটা খুবই ঝুঁকির কাজ হয়ে যাচ্ছে

1909 সালের 22 জুলাই মিস ম্যাকলাউডকে নিবেদিতা লিখছেন, ‘সব দলগুলিই ঐক্যবদ্ধ হইয়া বলিতেছে, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের নিকট হইতে নূতন প্রেরণা আসিতেছে কারাগার হইতে মুক্তিলাভ করিয়া দলে দলে সকলে শ্রী মা সারদাকে প্রণাম করিয়া যাইতেছে 

আর সারদা দেবী সেই সন্তানদের নিয়ে গর্ব করে বলছেন

‘‘কী সাহস! এমন সাহস কেবল ঠাকুর আর নরেনই আনতে পারে দোষ যদি কারও হয়, সে তো তাদেরই’’

 

কেন বিপ্লবীরা ছুটে আসতেন সারদা দেবী কাছে?

 বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ লিখেছেন, ‘ওই শান্ত সমাহিত নীরব জীবনের মধ্যেই রয়েছে অতিবিপ্লবের বীজ। 

শ্রীরামকৃষ্ণ-শ্রীসারদা-স্বামী বিবেকানন্দএই ত্রয়ী এক মহাবিপ্লবের প্রতীক 

শ্রীশ্রী সারদা দেবী সম্পর্কে স্বামীজীর বাল্যবন্ধু জাতীয়তাবাদী সন্ন্যাসী ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় স্বরাজ পত্রিকায় লিখেছেন, ‘যদি তোমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হইয়া থাকে তো একদিন সেই রামকৃষ্ণপূজিত লক্ষ্মীর চরণপ্রান্তে গিয়া বসিও। 


আর তাঁহার প্রসাদ-কৌমুদীতে বিধৌত হইয়া রামকৃষ্ণ শশীসুধা পান রিও। 

তোমার সকল পিপাসা মিটিয়া যাইবে

তবে এই বন্দনার শুরু কিন্তু করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ নিজেই।

আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর।

শ্রী শ্রীসারদা মায়ের ভ্রাতৃবধূর বিবরণ উদ্ধৃত করে শরৎ মহারাজ লিখছেন, ‘রাজার মতো চেহারা।

ঠাকুরঝির পায়ে লম্বা হয়ে পড়ল। 

জোড়হাতে বলল, মা সাহেবের ছেলেকে ঘাড়া করেছি। 

তোমার কৃপায় 

শরৎ মহারাজের ব্যাখ্যা, ‘ শুধু সংঘজননীর প্রতি স্বামীজ প্রণতি নয়। 

শ্রী শ্রী সারদাদেবীর কাছে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ সমগ্র ভারতের আত্মসমর্পণ

বিপ্লবীদের জন্য রামকৃষ্ণ মিশন কী ভাবে তাদের দুয়ার খুলে রেখেছিল, তা নিয়ে অনুশীলন সমিতির সদস্য প্রিয়নাথ দাশগুপ্ত (স্বামী আত্মপ্রকাশানন্দ) লিখছেন, ‘স্বামী সারদানন্দজীর স্নেহ-ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। 

তাঁহার কৃপা না হইলে ওই সময়ে আমাদের মতো বিপ্লববাদী দলের সহিত সংশ্লিষ্ট যুবকদের শ্রীশ্রী ঠাকুরের আশ্রয়ে আসা সম্ভব হইত না 

তবে এর পিছনেও যে সারদাদেবী ছিলেন, তা পরিষ্কার ব্রহ্মচারী অক্ষয়চৈতন্যের লেখায়। 

তিনি লিখছেন, ‘আসলে মা- বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। 

জন্যই শরৎ মহারাজ (স্বামী সারদানন্দ) ওঁদের আশ্রয় দেন। 

মূলে কিন্তু মা সারদা দেবী

সবের জন্য রীতিমতোরাজরোষেপড়তে হয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশনকে

সংঘজননী রূপে সারদাদেবীর পরিচালন ক্ষমতার গুণে এই গুরুতর সমস্যাকে হেলায় জয় করেছিল মিশন

আসলে সংঘজননী হিসেবে শ্রীশ্রী মা যে সিদ্ধান্ত নিতেন, তাতে শেষ পর্যন্ত অটল থাকতেন 

1905 সালে বঙ্গভঙ্গের পরে এমন অনেকে রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দিয়েছিলেন, যাঁরা অতীতে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন 

উদাহরণ :

  • স্বামী প্রজ্ঞানন্দ (দেবব্রত বসু), 
  • স্বামী আত্মপ্রকাশানন্দ (প্রিয়নাথ দাশগুপ্ত), 
  • স্বামী চিন্ময়ানন্দ (শচীন্দ্রনাথ সেন

প্রমুখের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে

কিন্তু ব্রিটিশ সরকার বিষয়টিকে ভাল ভাবে নেয়নি

১৯১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল(Governor Lord Carmichael) তাঁর দরবারী ভাষণে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতি বিষোদ্গার করে বলেন

‘‘দেশে সন্ত্রাসীবাদী তরুণ যুবকেরা রামকৃষ্ণ মিশনের মদতপুষ্ট তারা মিশনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের আনুকূল্যে এবং ত্রাণকার্য করার ছলে প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এবং সরলমতী, আদর্শবান , অনভিজ্ঞ তরুণদের প্রভাবিত করে যাচ্ছে দেশবাসী যেন ধরনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁদের ছেলেদের যোগাযোগ এবং সন্ত্রাসবাদিতা যা কি না রাষ্ট্রদোহিতার নামান্তরসে ব্যাপারে সাবধান হন’’

গভর্নরের হেন মন্তব্যে রামকৃষ্ণ মঠ মিশনের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছিল

এমতাবস্থায় মঠ মিশনেরসন্দেহভাজনব্যক্তিদের মঠ থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছিল।

রামকৃষ্ণ মঠ মিশনের তৎকালীন অধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দ তখন দক্ষিণ ভারতে।

তাই নিরুপায় হয়ে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক স্বামী সারদানন্দ সারদাদেবীর পরামর্শ চাইলেন। 

শ্রীশ্রী মা সারদা দেবী পরিষ্কার বলেছিলেন

‘‘ মা! সব কী কথা! ঠাকুর সত্যস্বরূপ। যে সব ছেলে তাঁকে আশ্রয় করে তাঁর ভাব নিয়ে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়েছে, দেশের, দশের আর্তের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে, সংসারের মুখে জলাঞ্জলি দিয়েছে

তারা মিথ্যাভাষণ কেন করবে বাবা?

 স্বামী সারদানন্দকে মা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ঠাকুরের ইচ্ছেয় মঠ-মিশন হয়েছে।

রাজরোষে নিয়ম অলঙ্ঘন করা অধর্ম। 

ঠাকুরের নামে যারা সন্ন্যাসী হয়েছে তারা মঠে থাকবে নয়তো কেউ থাকবে না। 

তাঁর ছেলেরা গাছতলায় আশ্রয় নেবে। তবু সত্যভঙ্গ করবে না। 

মায়ের পরামর্শ ছিল

‘‘তুমি একবার লাটসাহেবের সঙ্গে দেখা করো। তিনি রাজপ্রতিনিধি। তোমাদের সব কথা তাঁকে বুঝিয়ে বললে তিনি নিশ্চয়ই শুনবেন।’’

সারদা দেবী আদেশমতো স্বামী সারদানন্দ বড়লাটের সঙ্গে দেখা করে রামকৃষ্ণ মিশনের আদর্শের কথা তুলে ধরেন। 

বড়লাট লর্ড কারমাইকেল(Governor Lord Carmichael) রামকষ্ণ মঠ মিশন নিয়ে করা তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করেন ওই মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন

তবে ব্রিটিশ সরকারের মত পরিবর্তনের পিছনে অন্য কারণ ছিল বলে ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র তাঁর লেখায় ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘বড়লাট ফাইলে লিখিয়াছেন, পুলিশের রিপোর্ট এবং সেক্রেটারির মন্তব্য খুব সম্ভব Belur Math কর্তৃপক্ষ জানিতে পারিয়াছেন। 

কারণ, মাত্র কয়েকদিন পূর্বে একজন আমেরিকান মহিলা (Miss Josephine McLeod) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া বলিলেন, যদি Belur Math বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে আমেরিকায় ইহার বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন হইবে। 

সময় (খুব সম্ভব বিশ্বযুদ্ধে বিপন্ন ইংরেজ আমেরিকার সাহায্যের উপর বিশেষভাবে নির্ভর করিতেন) কোনরকমে আমেরিকার বিরুদ্ধভাজন হওয়া যুক্তিযুক্ত নহে। 

সুতরাং Belur Math বন্ধ না করিয়া সাদা পোশাকে কয়েকজন পুলিশ কর্মচারীকে সদাসর্বদা Belur Math নিযুক্ত করা হোক

অনেকে মনে করেন, বড়লাটের সঙ্গে মিস ম্যাকলাউডের(Miss Josephine McLeod) ওই সাক্ষাৎকারে শ্রীশ্রী মায়ের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা থাকতে পারে।

যদিও এর কোনও প্রামাণ্য নথি নেই

অনুশীলন সমিতির তাবড় নেতারা মায়ের পায়ে আশ্রয় নিলেও বা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের  মতো সশস্ত্র বিপ্লবের নেতাকে বিশেষ স্নেহ করলেও শ্রীশ্রী মা সশস্ত্র বিপ্লব সমর্থন করতেন কি না, তা কিন্তু স্পষ্ট নয়। 

কখনও মনে হয়েছে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের পক্ষে।

তাই বাঘাতীকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করে গিয়েছেন।

বাইরের কারও (পুরুষ) সঙ্গে মা সরাসরি দেখা করতেন না।

কথা বলতেন অন্যের মাধ্যমে।

কিন্তু যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই সেই নিয়ম শিথিল হয়েছে। 

বাঘাযতীনের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী পঞ্চানন চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘পলাতক অবস্থায় মহানায়ক যতীন্দ্রনাথ 1915 সালে Bagnan হইতে যাত্রাকালে স্টেশনে শুনিতে পান, শ্রীমা সারদাদেবী ওই ট্রেনে কোথাও যাইতেছেন।

তিনি সকল বিপদ তুচ্ছ করিয়া মায়ের কাছে ছুটিয়া যান তাঁহার আর্শীবাদ লইয়া যান 

ট্রেনের একটি কামরায় বাঘাযতীনের সঙ্গে মায়ের একান্তে কথা হয়। 

পরে মাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কী কথা হল। 

সারদা দেবী সংক্ষিপ্ত জবাব

‘‘দেখলাম আগুন!’’ 

সেটাই ছিল মায়ের সঙ্গে ওই স্বাধীনতা যোদ্ধার শেষ সাক্ষাৎকার। 

বাঘাযতীন সশস্ত্র সংগ্রামে যাচ্ছেন। 

সেখানে প্রাণহানির আশঙ্কা প্রবলজেনেও মা কিন্তু তাঁর সেই সন্তানকে নিরস্ত করেননি। 

ওই বছরই বালেশ্বরে ইংরেজবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয় যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের

দেহ রাখার আগে মা সারদা দেবী বলেছিলেন

‘‘যারা এসেছে, যারা আসেনি, আর যারা আসবেআমার সকল সন্তানদের জানিয়ে দিও, আমার ভালোবাসা আর আমার আর্শীবাদ সকলের ওপরে আছে।’’

শ্রীশ্রী ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এমনটাই চেয়েছিলেন যে!

 READ MORE:

#ma sarada devi#sarada devi#sri maa sarada devi#upodesh#bani#holy mother sarada devi#maa sarada#sarada ma#sarada devi drawing#holy mother#ramakrishna math#সারদা দেবী#সারদা দেবী গৃহীদেরও#বিপ্লবীদেরও মাসারদা দেবী#ma sarada devi biography # life of ma sarada# sarada devi#ma sarada devi biography#sarada devi life history.

মা সারদা দেবী,সারদা দেবী,শ্রী মা সারদা দেবির আলউকিক গল্প,শ্রী শারাদা দেবী আলউকিক গল্প,সারদা দেবীর জীবনী,দেবী সারদা,সারদা দেবীর বাণী,মা সারদা গান,সারদা,মা সারদা,মা সারদা দেবীর জীবনী,জগত জননী মা সারদা,শ্রীশ্রী সারদা,সারদা মায়ের বাণী,সারদা মা ভক্তিগীতি,সারদা মা,সারদা মায়ের গান,রামকৃষ্ণ দেব ও সারদা মায়ের জীবনের ঘটনা,সারদা মায়ের জীবনের ঘটনা,ওগো মা সারদা কল্যাণী মাতা তোমার তুলনা নাই,রামকৃষ্ণ দেব জীবনের ঘটনা,রামকৃষ্ণ,বিবেকানন্দ,বেলুড় মঠ,ভজন

No comments

Powered by Blogger.